ইরান ও ইসরায়েলের পতাকা
ইরান ও ইসরায়েলের পতাকা

মেক্সিকোতে ইসরায়েলি রাষ্ট্রদূতকে হত্যাচেষ্টার অভিযোগ কতটা সত্য

ইরান মেক্সিকোতে ইসরায়েলের রাষ্ট্রদূতকে হত্যার চেষ্টা করেছিল বলে গতকাল শুক্রবার অভিযোগ করেছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল। তেহরান ‘বড় মিথ্যা’ বলে এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে। আর মেক্সিকো সরকার বলেছে, তারা এ বিষয়ে কিছু জানে না।

ইরানের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের রাষ্ট্রদূতকে হত্যাচেষ্টা অভিযোগ ওঠার পর দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে। গত জুনে দুই দেশ যুদ্ধে জড়িয়েছিল; যা ১২ দিন ধরে চলে এবং উভয় পক্ষে অনেক হতাহতের ঘটনা ঘটে।

ইসরায়েলের এ দাবির কয়েক ঘণ্টা পর মেক্সিকোর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়, যে ঘটনার অভিযোগ তোলা হয়েছে, সে বিষয়ে কোনো তথ্য তারা পায়নি।

ইসরায়েল বলেছে, মেক্সিকোর হস্তক্ষেপে ইসরায়েলের রাষ্ট্রদূত ইনাৎ ক্রাঞ্জ-নেইগারকে হত্যার চেষ্টা আটকানো গেছে। ইসরায়েলি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়, ‘ইরান পরিচালিত একটি “সন্ত্রাসী” চক্র মেক্সিকোতে ইসরায়েলের রাষ্ট্রদূতের ওপর হামলার যে চেষ্টা করেছিল, তা থেকে তাঁকে রক্ষা করার জন্য আমরা মেক্সিকোর নিরাপত্তা ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে ধন্যবাদ জানাই।’

ইসরায়েলের এ দাবির কয়েক ঘণ্টা পর মেক্সিকোর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়, যে ঘটনার অভিযোগ তোলা হয়েছে, সে বিষয়ে কোনো তথ্য তারা পায়নি।

মেক্সিকোর নিরাপত্তা ও নাগরিক সুরক্ষাবিষয়ক সচিবালয় যুক্তরাষ্ট্র বা ইসরায়েলের নাম উল্লেখ না করে বলেছে, কোনো নিরাপত্তা সংস্থা তাদের সঙ্গে কাজ করতে চাইলে সব সময় জাতীয় সার্বভৌমত্বের সীমানায় থেকে তারা সম্মানজনক ও সর্বাত্মক সহযোগিতা করতে প্রস্তুত আছে।

মেক্সিকোর নিরাপত্তা ও নাগরিক সুরক্ষাবিষয়ক সচিবালয় দেশটির গোয়েন্দা তৎপরতা তদারকি করে।

এটি ইরানের সঙ্গে ভিন্নমত পোষণকারী কূটনীতিক, সাংবাদিক ও সমালোচক এবং দেশটির মতের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া যে কাউকে হত্যাচেষ্টার তেহরানের দীর্ঘ ইতিহাসের সর্বশেষ ঘটনা। ইরানের উপস্থিতি রয়েছে এমন যেকোনো দেশের জন্য এ ঘটনা গভীর উদ্বেগের কারণ হওয়া উচিত।

এদিকে মেক্সিকোতে ইরানি দূতাবাসের পক্ষ থেকে ইসরায়েলের এ অভিযোগকে ‘বিশাল বড় মিথ্যা’ বলা হয়েছে।

দূতাবাস থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে বলা হয়, তারা উভয় দেশের (মেক্সিকো ও ইরান) মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ ও ঐতিহাসিক সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত করতে চায়। আমরা স্পষ্টভাবে (অভিযোগ) প্রত্যাখ্যান করছি।

ঐতিহ্যগতভাবে মেক্সিকো আন্তর্জাতিক বিষয়গুলোয় হস্তক্ষেপ না করার নীতি অনুসরণ করে। গাজা যুদ্ধ নিয়ে অন্যান্য বামপন্থী সরকারের নেতৃত্বাধীন লাতিন আমেরিকার দেশগুলোর তুলনায় মেক্সিকো সরকার অধিক সতর্ক অবস্থান নিয়েছে।

মেক্সিকো ইসরায়েলের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ তদন্তের পক্ষে সমর্থন দিয়েছে। তবে একই সঙ্গে দেশটি ইসরায়েলের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্কও বজায় রেখেছে।

কয়েক দশক ধরে মেক্সিকো ও ইসরায়েল সৌজন্যমূলক ও শান্তিপূর্ণ কূটনৈতিক সম্পর্কও ধরে রেখেছে।

ভেনেজুয়েলা সংযোগ

একজন মার্কিন কর্মকর্তা বলেন, ইরানের রেভল্যুশনারি গার্ডের অভিজাত বাহিনী কুদস ফোর্স ২০২৪ সালের শেষ দিকে এ ষড়যন্ত্র (ইসরায়েলের রাষ্ট্রদূত হত্যাচেষ্টা) শুরু করেছিল এবং চলতি বছর ওই ষড়যন্ত্র আটকে দেওয়া হয়।

অভিযোগে আরও বলা হয়, এই ষড়যন্ত্রে ভেনেজুয়েলায় ইরানের দূতাবাস থেকে এজেন্টদের নিয়োগ করাও হয়েছিল। তেহরানের সঙ্গে ভেনেজুয়েলার বামপন্থী প্রেসিডেন্ট নিকোলা মাদুরোর কৌশলগত জোট রয়েছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘এটি ইরানের সঙ্গে ভিন্নমত পোষণকারী কূটনীতিক, সাংবাদিক ও সমালোচক এবং দেশটির মতের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া যে কাউকে হত্যাচেষ্টার তেহরানের দীর্ঘ ইতিহাসের সর্বশেষ ঘটনা। ইরানের উপস্থিতি রয়েছে—এমন যেকোনো দেশের জন্য এ ঘটনা গভীর উদ্বেগের কারণ হওয়া উচিত।’

ঐতিহ্যগতভাবে মেক্সিকো আন্তর্জাতিক বিষয়গুলোয় হস্তক্ষেপ না করার নীতি অনুসরণ করে। গাজা যুদ্ধ নিয়ে অন্যান্য বামপন্থী সরকারের নেতৃত্বাধীন লাতিন আমেরিকার দেশগুলোর তুলনায় মেক্সিকো অধিক সতর্ক অবস্থান নিয়েছে।

যদিও এই মার্কিন কর্মকর্তা তাঁর দাবির পক্ষে বিস্তারিত প্রমাণ দেখাতে পারেননি বা কীভাবে এ ষড়যন্ত্র প্রতিহত করা হয়েছে, সে বিষয়েও কিছু বলেননি।

২০২৪ সালের ১ এপ্রিল ইসরায়েল সিরিয়ার দামেস্কে ইরানের দূতাবাস প্রাঙ্গণে হামলা চালিয়ে রেভল্যুশনারি গার্ডের কয়েকজন শীর্ষ কর্মকর্তাকে হত্যা করে। দামেস্ক তেহরানের ঘনিষ্ঠ মিত্র। এখন যে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তোলা হয়েছে, সেটি তখন শুরু হয় বলে দাবি করা হয়েছে। দামেস্কে ইরানের দূতাবাসে হামলার পর তেহরান প্রতিশোধ নেওয়ার প্রতিজ্ঞা করেছিল এবং ইসরায়েলে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছিল।