
ক্যাপ্টেন আবদুল্লাহর পর মেজর মনসুর আলী। আমেরিকায় বাংলাদেশিদের অগ্রযাত্রার মাইলফলক। এক বছর আগে বিশ্বের অন্যতম সেরা পুলিশ বিভাগ এনওয়াইপিডি–তে ক্যাপ্টেন হিসেবে আবদুল্লাহর অভিষেকের পর প্রবাসে বাংলাদেশিদের মুখ উজ্জ্বল করলেন ডা. মনসুর আলী।
সেনাবাহিনীতে জাতিগোষ্ঠীর পরিচয় দিয়ে তথ্য দেওয়া হয় না বলে জানা যায়নি, মার্কিন সেনাবাহিনীতে মনসুর আলীই বাংলাদেশি বংশোদ্ভুত প্রথম মেজর কি না। সেনাবাহিনীর মেডিকেল কোরে খবর নিয়ে এর আগে বাংলাদেশি বংশোদ্ভুত কোনো মার্কিন ডাক্তার মেজরের তথ্য পাওয়া যায়নি।
টেক্সাসের ফোর্ট হুড আর্মি বেজ–এর ডার্নাল আর্মি মেডিকেল সেন্টারে এক জমকালো অনুষ্ঠানে মনসুর আলী ক্যাপ্টেন থেকে ইউএস আর্মির মেডিকেল কর্পস–এর মেজর হিসেবে পদোন্নতি লাভ করেন। তাঁকে শপথ পাঠ করান কর্নেল এম ডি কিম ডিলিও। সঙ্গে ছিলেন মেজর এন্ডারসন এম ডি, সার্জেন্ট টিটারলিসহ ঊর্ধ্বতন সামরিক কর্মকর্তারা।
মনসুর আলীর পদোন্নতি অনুষ্ঠানে পরিবারের সদস্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন তাঁর পিতা কেরামত আলী, স্ত্রী ফাহমিদা আলী ও তিন বছরের ছেলে ইব্রাহীম আলী।
২৩ বছর আগের ১৯৯৬ সালে বাবা-মার হাত ধরে অভিবাসী হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রে আসেন মনসুর। মেধাবী শিক্ষার্থী হিসেবে নিউইয়র্কের সিটি কলেজ থেকে ব্যাচেলর করে মার্কিন সেনাবাহিনীর বৃত্তিতে ডাক্তারি পড়েন টেনেসি মেডিকেল কলেজে।
সেখানে কঠোর পরিশ্রম দায়িত্বশীলতা আর অধ্যবসায়ের স্বাক্ষর রেখেছিলেন হবিগঞ্জ জেলার নবীগঞ্জ উপজেলার আউশকান্দি ইউনিয়নের উমরপুর গ্রামের কেরামত আলীর পুত্র ডাক্তার মনসুর আলী। মেডিসিনে বিশেষজ্ঞ হিসেবে মার্কিন সেনাবাহিনীতে নিজেকে গড়ে তোলেন একজন চৌকস অফিসার হিসেবে। স্বপ্ন আর সম্ভাবনার দেশ আমেরিকায় মনসুর আলী এখন হয়ে উঠেছেন সাফল্যের প্রতীক।
প্রথম আলোর সঙ্গে ১২ জুন বুধবার কথা হয় মনসুরের বাবা ব্যবসায়ী কেরামত আলীর সঙ্গে। সদা সমাজ কর্ম নিয়ে ব্যস্ত বাংলাদেশি আমেরিকান অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান জানালেন তাঁর ছেলের সাফল্যের কথা। ছেলের এ সাফল্য যেন মানবতার জন্য উৎসর্গীকৃত হয়, এ কথাই বলছিলেন বারবার কেরামত আলী।
মনসুরের গর্বিত মা শামসুন্নাহার আলী বললেন, ‘ছেলে আমার এ জন্য গর্ব হচ্ছে।’ বললেন, ‘আমার ছেলে যেন দেশ ও দশের জন্য কাজ করে তাঁর সাফল্যকে কাজে লাগায় এ জন্য আপনারা দোয়া করবেন।’ শামসুন্নাহারের চার ছেলের মধ্যে দ্বিতীয় মনসুর আলী নিজেও জানিয়েছেন, নিজের উৎসের দেশের জন্য চিকিৎসা ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে কিছু করার চিন্তা আছে তাঁর মাথায়।
বেঁচে আছেন মনসুরের দাদা সাজন আলী (৮৫)। নাতির এ সাফল্যে আপ্লুত সাজন আলী বারবার আল্লাহর কাছে দোয়া করছিলেন। সাজন আলীর ভাই নিউইয়র্কে বাংলাদেশিদের পরিচিত মুখ হাসান আলী। নিউইয়র্কে বাংলাদেশি কমিউনিটির উত্থানপর্বে যে কজন নিবেদিত মানুষের নাম উচ্চারিত হয়, এর মধ্যে হাসান আলী অন্যতম। নিজের পরিবারের একজনের এমন সাফল্য অন্যদের মধ্যেও ছড়িয়ে পড়ুক-এ কামনা তাঁর।
বৃহত্তর সিলেটের হবিগঞ্জ জেলার নবীগঞ্জ উপজেলার আউশকান্দি ইউনিয়নের উমরপুর গ্রামের কেরামত আলীর পুত্র ডাক্তার মনসুর আলী। একজন প্রবাসী ব্যবসায়ী হলেও চিন্তায় ও উদ্যোগে একজন প্রচারবিমুখ সমাজসেবী কেরামত আলী। সমাজসেবার জন্য গঠন করেছেন ‘সিদ্দিকীয়া ফাউন্ডেশন’ নামের সংস্থা। বড় ছেলে মামুন আলীকে ফাউন্ডেশনের দায়িত্ব দিয়েছেন। বাংলাদেশে নিজের এলাকায় অনগ্রসর আত্মীয়স্বজন এবং এলাকাবাসীর জন্য নানা কাজ করে থাকেন। লোকজনের প্রবাস যাত্রা থেকে শিক্ষা, চিকিৎসা ও বাসস্থান নির্মাণে নীরবে কাজ করে যান। পারিবারিকভাবে সমাজকর্ম ও উদ্যোগ উদ্দীপনা নিয়ে বড় হওয়া ডা. মনসুর আলী মার্কিন সেনাবাহিনীতে নিজের সাফল্যকে ধরে রেখে এক সময় বাংলাদেশে নিজের এলাকার জনগণের পাশে দাঁড়াবে-এ প্রত্যাশা করেন কেরামত আলী।
কেরামত আলী’র পরিবারে চলছে খুশির বন্যা। চার ছেলের গর্বিত মা শামসুন্নাহার আলী অন্য সন্তানদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসার জবাবে জানালেন, বড় ছেলে ব্যবসা ও বাণিজ্য নিয়ে স্নাতক করেছে। মনসুরের ছোট অর্থাৎ তৃতীয় ছেলে মনহাজ আলী কম্পিউটার বিজ্ঞানে এ বছরই ব্যাচেলর করে আই টি কাজে যোগ দিচ্ছে। সব ছোট ছেলে এখনো স্কুলগামী। নিজেকে সুখী মা হিসেবে উল্লেখ করে, তাঁর সন্তান ও পরিবারের জন্য দোয়া করার জন্য বললেন।