
ঈশ্বর তাঁর মনের মতো করে, সর্বাঙ্গীণ রূপ দিয়েছেন তাঁরই গড়া এই জগৎকে; আর গড়েছেন প্রেম উজাড় করে তাঁর শ্রেষ্ঠ কীর্তি এই মানবকে, দিয়েছেন অনন্ত রূপ, যৌবন আর সম্পদ। মানুষের প্রতি তাঁর বার্তা—বেঁচে থাকো, উপভোগ কর ও অনন্ত জীবনের অধিকারী হও।
ঈশ্বরেরই ব্যক্ত রূপ পরম প্রেমময় শ্রী শ্রী ঠাকুর অনুকূল চন্দ্র; সেই অনন্ত ভোগের তুকটা জানিয়ে দিলেন এই ধরাধামে আবির্ভূত হয়ে। তাঁর হৃদয়ের একান্ত কামনা আমরা বেঁচে থাকি, বেড়ে উঠি। ভোগ-উপভোগ যা কিছু তা বেঁচে থেকেই করা সম্ভব। তাঁর মুখনিঃসৃত বাণী
‘মরো না মেরো না, পারতো মৃত্যুকে অবলুপ্ত কর।’
‘অন্যে বাঁচায় নিজে থাকে, ধর্ম বলে জানিস তাকে।’
‘ধর্মে সবাই বাঁচে-বাড়ে, সম্প্রদায়টা ধর্ম না রে।’
এই পৃথিবীর সর্বত্র নানা বর্ণের, নানা সংস্কারের কত বৈচিত্র্যপূর্ণ মানুষের বাস। খুবই আনন্দ ও উপভোগের বিষয়, সবাই বাঁচতে চায় নিজের মতো করে। অত্যন্ত দুঃখের ব্যাপার, আজ এই সভ্য সমাজে সবচেয়ে বড় সংকট হলো শান্তি ও সমৃদ্ধি নিয়ে বেঁচে থাকা। মানুষের এই বিচ্ছিন্ন জীবন ও বিরোধ—এই নিরন্তর আনন্দ উপভোগের পথে সব সময় বাধা হয়ে দাঁড়ায়। কারও কারও জীবনে এই বিচ্ছিন্নতা সর্বগ্রাসী দানবের মতো সব আনন্দকে গোগ্রাসে গিলে ফেলে। মানুষ বিদগ্ধ অনুভূতি নিয়ে জীবনযাপন করে। আর এই বেঁচে থাকার নৈরাশ্য ও হাহাকার আমরা প্রতিনিয়ত অবলোকন করছি। এ এমতাবস্থায় আমরা সকলেই খুঁজে বেড়াই একটা আশ্রয়, একটি কাঁধ, একটি কোল। মানবের আকুল ক্রন্দন ও প্রার্থনায়, আবির্ভূত হলেন পরমপিতা পরম প্রেমময় শ্রী শ্রী ঠাকুর অনুকূল চন্দ্র। মানুষ যখন তাঁর আশ্রয় গ্রহণ করে তখন সকল দুঃখের মাঝেও পরম আনন্দ, পরম শান্তি উপভোগ করে। ঠাকুর অনুকূল চন্দ্র নিয়ে এলেন অতি সুন্দর, সরল, মনোগ্রাহী এই প্রথা; যাকে বলা হয় যজন-যাজন-ইষ্ট ভৃতি। এই তিনের পরিপালনে মানুষের রক্ষা পাওয়া সুনিশ্চিত করে দিয়েছেন তিনি। জীবন গঠনে সর্বপ্রথম এবং প্রধান উপাদানই হলো তাঁর দেওয়া সৎ দীক্ষা, অর্থাৎ সৎ নাম গ্রহণ ও মনন। জীবনী শক্তি বৃদ্ধির একমাত্র উপায়ই হলো এই সৎ নাম। নিজস্ব যে সংস্কার বা সম্প্রদায়গত আচরণবিধি আছে, তা যথাযথ অটুট রেখে, ওই সংস্কার বা সম্প্রদায়গত আচরণ আরও শক্তিশালী করে তুলতে এই সৎ নাম অপরিহার্য।
আমরা একজন সংসারীকে যত দ্রুত আপন করতে পারি, একজন জটাজুট গেরুয়াধারী সন্নাসীকে পারিবারিকভাবে ততটা আপন করতে দ্বিধাগ্রস্ত হই। পরম প্রেমময় শ্রী শ্রী ঠাকুর অনুকূল চন্দ্র তা বুঝেই এবার পরিবার গড়ে দিয়ে গেলেন। রেখে গেলেন পরম্পরায় পরম পূজ্যপাদ শ্রী শ্রী বড় দাকে, পরম পূজ্যপাদ আচার্য্যদেব শ্রী শ্রী দাদাকে; শুধু তাই নয় তিনি গড়ে দিয়ে গেলেন আচার্য পরম্পরা, যা চলতে থাকবে যুগ যুগ ধরে অনন্ত কাল মনুষ্যত্বের পূর্ণ বিকাশার্থে।
তিনি বাণী দিয়ে গেলেন:
‘দীক্ষা নিয়ে শিক্ষা ধরিস
আচার্যকে করে সার
আচরণই বোধ চয়নে
জ্ঞানের সাগর হ’ না পাড়।’
জগতের প্রতিটি মানুষ তার যাবতীয় সুখ-দুঃখ পরম পূজ্যপাদ আচার্যদেবের চরণে নিবেদন করে সান্ত্বনা ও সমাধান পেয়ে চলেছে। কারণ একটাই আমার পরিবারের অভিভাবক যে তিনি; পরম পূজ্যপাদ শ্রী শ্রী দাদা! তাই আজও নিত্য লাখ লাখ মানুষ বিভিন্ন সম্প্রদায়ের, বিভিন্ন সংস্কারের, তাঁর শ্রীচরণে আশ্রয় পেয়ে ধন্য হচ্ছেন। আজ পৃথিবীর কোটি কোটি মানুষ এই সৎ নামে দীক্ষিত হয়েছেন। দীক্ষা গ্রহণের এই ধারা অব্যাহত আছে, থাকবে যুগ যুগ ধরে।
তিনি জগতের বুকে হাজার-হাজার শ্রীমন্দির, কেন্দ্র গড়ে তুলে পরম প্রেমময় শ্রী শ্রী ঠাকুরের ভাবধারা প্রতিষ্ঠিত করছেন। দেওঘর ধামে পরম দয়ালের মূল আশ্রমে বা লীলাভূমিতে জগতের মানুষের ঢল নিরন্তর বয়ে চলেছে। আর তারা পেয়ে চলেছে আচার্য দেবের দর্শ নেতাদের ঈপ্সিত একান্ত হৃদয়ের গহিনের চাওয়া শ্রী শ্রী ঠাকুরের অমীয় পরশ।
পরম দয়াল শ্রী শ্রী ঠাকুর অনুকূল চন্দ্রের মুখনিঃসৃত যে হাজার হাজার বাণী ও প্রশ্ন-উত্তর যা কিনা মনুষ্য জীবনে অমৃততুল্য, মাতৃদুগ্ধের ন্যায় অপরিহার্য। তাঁর একেকটি বাণী এককটি মুমূর্ষু মানবের কাছে জীবনদায়ী। ভাষা দিয়ে পরম প্রেমময় শ্রী শ্রী ঠাকুরের প্রকাশ ঘটানো কখনো সম্ভব না। জানালার ছিদ্র দিয়ে মহাকাশ পর্যবেক্ষণ যেমন সম্ভব নয়। পরম দয়াল শ্রী শ্রী ঠাকুর অনুকূল চন্দ্র, আচার্য দেব শ্রী শ্রী দাদার মধ্যে কতটা প্রকট তা, শ্রী শ্রী ঠাকুরের বাণীতে পাই:
‘দেবদেবতা হাজার ধরিস্
আচার্য যার ইষ্ট নয়
স্পষ্টতর বুঝে রাখিস্
জীবন চলনায় নেহাৎ ভয়।’