ড্রিমারদের বাঁচাতে পারবে কংগ্রেস?

তরুণ অভিবাসীদের সুরক্ষার বিষয়ে কোনো ধরনের পদক্ষেপ না নিয়েই ওয়াশিংটন ত্যাগ করেছেন কংগ্রেস সদস্যরা। অথচ হাতে সময় খুব অল্প। সেপ্টেম্বরে ওবামা আমলের ডিফারড অ্যাকশন ফর চাইল্ডহুড অ্যারাইভালস (ডিএসিএ) বাতিলের সময় তরুণ অভিবাসী তথা ড্রিমারদের প্রতি সহানুভূতি জানিয়ে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এ বিষয়ে একটি আইন প্রণয়নের জন্য কংগ্রেসের হাতে সময় বেঁধে দেন ৫ মার্চ পর্যন্ত। কিন্তু এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্তে আসতে পারেনি কংগ্রেস।
শৈশবে মা–বাবা কিংবা কোনো অভিভাবকের মাধ্যমে আমেরিকায় আসা এবং বর্তমানে তরুণ এমন অনিবন্ধিত অভিবাসীদের বিতাড়নের হাত থেকে রক্ষায় বারাক ওবামা প্রশাসন ডিএসিএ প্রকল্প গ্রহণ করে। এই প্রকল্পের আওতায় ড্রিমারখ্যাত তরুণ অভিবাসীরা শিক্ষা, চাকরিসহ বিভিন্ন সুবিধা পেয়ে থাকে, যা অন্য অনিবন্ধিত অভিবাসীরা পায় না। সেপ্টেম্বরে এই প্রকল্পটি বাতিল করেন ট্রাম্প। কিন্তু খোদ আমেরিকানদের মধ্যেই ড্রিমারদের জনপ্রিয়তার কথা মাথায় রেখে কংগ্রেসকে সময় দেন ডিএসিএর আওতায় প্রদত্ত সুবিধাদিকে আইনি কাঠামোয় আনার। এ জন্য তিনি ৫ মার্চ পর্যন্ত সময় বেঁধে দেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত নতুন বাজেটে ড্রিমারদের জন্য অর্থ বরাদ্দ করা ছাড়া আর কোনো অগ্রগতি দেখাতে পারেনি কংগ্রেস।
এ বিষয়ে বারাক ওবামা প্রশাসনে ডিএসিএ প্রকল্প প্রণয়নের সঙ্গে জড়িত অন্যতম কর্মকর্তা সেসিলিয়া মুনোজ নিউইয়র্কারকে বলেন, ‘ট্রাম্প নিজেই এই সংকটের
জন্ম দিয়েছেন। সুবিধার আওতায় থাকা ব্যক্তিদের অপসারণে একটি নির্দিষ্ট তারিখ বেঁধে দিয়েছেন। আবার তাদেরকে রক্ষার দায়িত্বটি সময়সীমা বেঁধে চাপিয়েছেন কংগ্রেসের ঘাড়ে।’
কংগ্রেসে দুই দলের সদস্যরাই ডিএসিএ ঘিরে সৃষ্ট সংকট নিরসনের আশ্বাস দিয়েছেন। দুই দলেরই সহানুভূতি রয়েছে প্রায় ৮ লাখ ড্রিমারের প্রতি। কিন্তু এখন পর্যন্ত বাস্তবিক কোনো পরিকল্পনা সামনে হাজির করতে পারেননি তারা। এদিকে সংকট থেমে নেই। এই সিদ্ধান্তহীনতার মধ্যে প্রতিদিন গড়ে কয়েক শ তরুণ অভিবাসী তাদের ডিএসিএ স্ট্যাটাস হারাচ্ছেন, যার অর্থ হচ্ছে, তারা আর বৈধভাবে আমেরিকায় কাজ করতে পারবেন না। এই বছর শেষের আগেই এ বিষয়ে একটি আইন পাস করিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন ডেমোক্র্যাট নেতারা। এ ক্ষেত্রে রিপাবলিকান নিয়ন্ত্রিত কংগ্রেসেও ডেমোক্র্যাটরা কিছুটা সুবিধাজনক অবস্থানে ছিল। কারণ সরকারি তহবিল পাস করানোর জন্য ডেমোক্র্যাটদের ভোটের প্রয়োজন রয়েছে রিপাবলিকানদের। এমনকি বিষয়টিকে পুঁজি করার এক ধরনের ঘোষণাও এসেছিল প্রভাবশালী ডেমোক্র্যাট নেতাদের কাছ থেকে।
কামালা হ্যারিস, এলিজাবেথ ওয়ারেন, কোরি বুকারের মতো প্রভাবশালী ডেমোক্র্যাট সিনেটররা এমনকি ডিএসিএ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো সিদ্ধান্ত না হলে, তহবিল অনুমোদন না করে ‘গভর্নমেন্ট শাটডাউনের’ হুমকিও দিয়েছিলেন। কিন্তু গত সপ্তাহেই এটি পরিষ্কার হয়েছে যে, ডেমোক্র্যাটরা এত দূর যাবেন না। ২১ ডিসেম্বর কংগ্রেস জানুয়ারির জন্য ডিএসিএ বাবদ সরকারি তহবিল অনুমোদন দিয়েছে। কিন্তু এটি এখনো অনিশ্চয়তার আবর্তেই ঘুরপাক খাচ্ছে। তবে এই অনুমোদন ডেমোক্র্যাটদের সামনে আরও অন্তত এক মাসের সুযোগ নিয়ে হাজির হয়েছে।
এই সংকট থেকে ড্রিমারদের রক্ষার একটিই পথ, আর তা হলো, ড্রিম অ্যাক্ট পাস করা, যা সেই ২০০১ সাল থেকে পাঁচবার সিনেটে উত্থাপিত হয়েছে। এই আইন পাস হলে ড্রিমারদের সামনে নাগরিকত্ব পাওয়ার পথ উন্মুক্ত হবে। কিন্তু এটি কতটা বাস্তবে রূপ নেবে তা নিয়ে সংশয় রয়েছে অভিবাসন আইনজীবীদের। এ বিষয়ে সম্প্রতি ন্যাশনাল ইমিগ্রেশন ল সেন্টারের কামাল এসাহেব বলেন, ‘আমরা লড়াই চালিয়ে যাব। সমস্যা হচ্ছে এই বছর এ ধরনের কোনো উদ্যোগ না নিলে ২০১৮ সালে তা আরও কঠিন হয়ে পড়বে, যা সময়ের সঙ্গে ক্রমে আরও কঠিন হতে থাকবে।’
তবে অনেকেই মনে করছেন, এ ধরনের আইন নির্বাচনের আগের বছর পাস হলেও হতে পারে। যদিও ডেমোক্র্যাটরা তার আগেই এটিকে আইনের আওতায় আনার চেষ্টায় আছেন। এ ক্ষেত্রে রিপাবলিকান পার্টির অভ্যন্তরে অনেকেই ড্রিমারদের পক্ষে থাকলেও, তা নিয়ে উচ্চকণ্ঠ হচ্ছেন না, নিজেদের রাজনৈতিক অবস্থানের কারণে। সামনের বছরই অনেক নেতা মুখোমুখি হচ্ছেন সিনেট নির্বাচনের। আর বিষয়টি নিয়ে নিজেদের অবস্থানকে প্রকাশ করলে তা ভোটের ফলে প্রভাব ফেলতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন তারা।
কংগ্রেসের সাবেক এক উপদেষ্টার উদ্ধৃতি দিয়ে নিউইয়র্কার জানায়, নির্বাচনের বছরে যেকোনো কিছুই অনেক কঠিন হয়ে পড়ে। গত সপ্তাহে কংগ্রেস যদি একই সঙ্গে কর পুনর্গঠন, ডিএসিএ সংকট নিরসন ও সরকারি তহবিল নিয়ে কথা বলত, তাহলে মানুষের মধ্যে এই তিনটিকে ঘিরেই এক ধরনের বিভাজন তৈরি হতে পারত। গড়পড়তায় রিপাবলিকানরা এই আইনের পক্ষেই আছেন। কিন্তু পুরো বিষয়টি নির্ভর করছে তারা কোন অঞ্চলের প্রতিনিধিত্ব করছেন, আর সামনে নির্বাচন আছে কিনা তার ওপর। তবে ফেব্রুয়ারিতে ডিএসিএ ইস্যু সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে বলে মত দিয়েছেন এই উপদেষ্টা।
ডিসেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে হোয়াইট হাউসের ঘোষণায় বলা হয়, ২০১৮ সালে বৈধ অভিবাসনের পন্থা আরও কঠোর করতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এটি নিশ্চিতভাবেই অনেক কঠোর অবস্থান হলেও এটিই আবার ডিএসিএ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে রিপাবলিকানদের ওপর চাপ বাড়াবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এদিকে ১৯ ডিসেম্বর একটি দ্বিদলীয় প্রতিনিধি দল হোয়াইট হাউসের চিফ অব স্টাফের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। ওই দলে ছিলেন রিপাবলিকান সিনেটর জেফ ফ্লেক, লিন্ডসে গ্রাহাম, টম কটন, ডেভিড পারডুসহ আরও অনেকে। তারা ড্রিম অ্যাক্টের বিষয়ে এখনো আশাবাদী। জেফ ফ্লেক জানিয়েছেন, সিনেটের সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা মিচ ম্যাককোনেল তাঁকে ব্যক্তিগতভাবে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যে, জানুয়ারির মাঝামাঝি ড্রিমারদের বিষয়টি তিনি আবার তুলবেন। কিন্তু এসবই এখনো প্রতিশ্রুতি। কারণ এখনো বাস্তবিক কোনো অগ্রগতি দৃষ্টিগ্রাহ্য নয়। আর ৫ মার্চ খুব একটা দূরে নয়।