–পুরুষেরা হিলওয়ালা জুতো পরে না কেন?
–আরে মশাই, আপনার প্রশ্নের গোড়ায় তো গলদ। বলুন, পুরুষেরা হাই হিলওয়ালা জুতো এখন আর পরে না কেন বা পরা বন্ধ করল কেন?
–হ্যাঁ, তো বলুন কেন?
–আরে ভাই, সে এক মজার কাহিনি। সত্যি কথা বলতে কি, মেয়েদের অনেক আগে পুরুষেরাই হাই হিল জুতো পরত। না না, ফ্যাশনের জন্য নয়, বরং অনেক প্র্যাকটিক্যাল কারণে, যার মধ্যে প্রধান ছিল কাদার (মাড) হাত থেকে বাঁচা। তখনকার বেঁটে রাজা–রাজড়া বা ধনীদের এটি একটি রক্ষাকবচ ছিল। আবার বিভিন্ন শ্রেণিবিভেদের জন্যও এটা ব্যবহৃত হতো, যেমন আমাদের দেশে আছে ব্রাহ্মণ ও দলিতদের ব্যবধান। এই হাই হিল ব্যাপারটার উৎপত্তি হয়েছিল মূলত এশিয়া ও আফ্রিকার দেশগুলোতে। পরে ইউরোপ ও এশিয়ার মধ্যে ইরান ও তুরস্কে এটা ছড়িয়ে পড়ে। আবার প্রাচীন মিশরে জুতো পরাটা একটা কৌলীন্যের প্রতীক ছিল। গরিবেরা জুতো পরতে পেত না, আর বড়লোকেরা নিজেদের মধ্যে একাত্মতা রাখতে সবাই ‘ফ্ল্যাট’ জুতো পরত।
আসলে হিল জুতো চালু হয়েছিল মিশরে, সেই খ্রিষ্টপূর্ব ৩৫০০ সালে। তখন কেবল কসাইরা হাই হিল জুতো পরত কাটা পশুর রক্ত লেগে যাওয়া থেকে পা বাঁচাতে। এশিয়ার মধ্যে প্রথম ইরানি অশ্বারোহীরা হাই হিল জুতো ব্যবহার করে। ঘোড়ার পিঠে চড়া অবস্থায় তাদের পা’টা ঠিকমতো সামলাতে পারত। তা ছাড়া নেমে তির মারার সময় পা উল্টাপাল্টা জায়গায় না পড়ে শরীরটাকে সোজা রাখতে সাহায্য করত।
মধ্যযুগের পরের ঘটনা একটু অন্যরকম। এ সময় ইউরোপীয়রা পারস্যবাসীদের থেকে হাই হিল জুতো পরা শেখে। ইরানিদের ইউরোপীয়রা তখন খুবই খাতির করত। কারণ, তারা তখন তুরস্কের অটোমান সাম্রাজ্যের সঙ্গে যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছিল। এ সময় ইউরোপীয়রা নানা দিক দিয়ে পারস্য সভ্যতার দ্বারা প্রভাবিত হয়ে গিয়েছিল।
মেয়েরা এই সময় থেকে হাই হিল জুতো পরা শুরু করে, প্রথমত তাদের উচ্চতা বাড়ানোর জন্য ও দ্বিতীয়ত যেভাবেই হোক, পুরুষদের সমকক্ষ হওয়ার ভেতরকার তাগিদ থেকে। রেকর্ড বলছে, ১৬০০ খ্রিষ্টাব্দের দিকে ক্যাথরিন দ্য মেডিচি নামে এক ভদ্রমহিলা সর্বপ্রথম হাই হিল জুতো পরা শুরু করেন। বিয়ের সময় তাঁর হাই হিল জুতো পরার বিশেষ দরকার ছিল, কারণ তাঁর উচ্চতা ছিল মাত্র ১৫০ সেন্টিমিটার, যা পাঁচ ফুটেরও কম। এর পর হু হু করে মেয়েরা হাই হিল জুতো পরা শুরু করে। অনেকে নাকি সাড়ে তেইশ ইঞ্চি হাই হিল জুতো পরেছে বলে জানা গেছে। মুশকিল হলো, এতে নারীদের হোঁচট খেয়ে পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে গিয়ে বিপদ ডেকে আনতো, বিশেষ করে অন্তঃসত্ত্বা নারীদের। পরে অবশ্য ডিজাইনের অনেক উন্নতি হয়েছে। জুতোর সামনের দিকটা ‘কার্ভ’ করে, পেছনের দিকের ওপর শরীরের ভরটা ন্যস্ত করার ব্যবস্থা হয়েছে।
–আরে ভাই, আপনি তো আসল রাস্তা ছেড়ে উল্টো রাস্তায় হাঁটা শুরু করলেন।
–মানে কি?
–কথা ছিল, পুরুষেরা কেন হাই হিল ব্যবহার করে না, সে কথা জানাবেন।
–ওহো, সরি। পুরুষেরা দেখল, এটা তাদের দরকার নেই। বরং এটি একটা বাড়তি ঝামেলা। তারা সাধারণত, মেয়েদের তুলনায় অপেক্ষাকৃত লম্বা। তাই ও ব্যাপারে নারীদের সঙ্গে ‘ফাইট’ করার কোনো দরকার নেই। তাদের আর বেঢ়প মাঠে নেমে তির ধনু বা বল্লম ছুড়তে হচ্ছে না। এখন ড্রোন থেকে অত্যাধুনিক সব সমরাস্ত্র তাদের কষ্টের কাজগুলো অনেক সহজ করে দিয়েছে, দিচ্ছে। আর আধুনিক রাস্তা, মাঠ–ঘাট, পায়ে কাদা বা রক্ত লেগে যাওয়ারও কোনো সম্ভাবনা নেই।