ফ্রি ট্রেড বা মুক্ত বাণিজ্যের মাধ্যমে এক দেশ আরেক দেশে তার কাজগুলো ওই দেশের কর্মী বাহিনীকে দিয়ে কম শ্রমমূল্যে উৎপাদন করানোর নামই মনে হয় গ্লোবালাইজেশন বা বিশ্বায়ন। এটার ফলে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ তার জনশক্তিকে দিতে পেরেছে কর্মসংস্থান এবং দেশ গুলো পেয়েছে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি।
যদিও বিশ্বায়ন দিয়েছে এক নতুন সীমান্তহীন পৃথিবী এবং নতুন নতুন উদ্ভাবন। অপর দিকে এটা এনেছে অনেক ধরনের সমস্যা, যেমন আমেরিকা তার টেক্সটাইল উৎপাদন এবং মেক্সিকোর ভুট্টার ফসলের খামার প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে অন্যান্য দেশের বা আন্তর্জাতিক মূল্য প্রতিযোগিতার ফলে।
সত্যিকার অর্থে, বিশ্বায়নের উদ্দেশ্য তা আধুনিক ও উপযুক্ত একটি প্রণালি, তথাপিও আসলে এটি একটা কাল্পনিক, অবাস্তব, অসম্ভব ও ভাববাদী একটা মতাদর্শ। বাস্তবের সঙ্গে অমিল একটা আদর্শবাদ-নির্ভর চিন্তা প্রসূত মতবাদ।
এসব কিছুরই প্রমাণ মিলছে আজকের বিশ্বব্যাপী কোভিড–১৯–এর প্রকোপের আলামতে আসলেই কি গ্লোবালাইজেশন নামক ইউটোপিয়া বেঁচে থাকবে কি এরপর?
আসুন আমরা একটু চিন্তা করি নিচের অনুমান গুলো নিয়ে—
* অনেক দেশ মনে করছে-বিশ্বায়নের প্রক্রিয়ার কারণেই এই মহামারি ভাইরাসের উৎপত্তি
* ভাইরাস মোকাবিলা করার জন্য ডাক্তার-নার্স-হাসপাতালের কর্মী, পরিচ্ছন্ন কর্মীদের নিরাপত্তায় পরিধেয় পিপিই। বিশ্বায়নের বেড়াজালে পড়ে কোন উন্নত দেশই তার স্বাস্থ্যকর্মীদের সময়মতো ওই পিপিই সরবরাহ করতে সক্ষম হয়নি। যার ফলে হাজার হাজার স্বাস্থ্যকর্মী আত্মত্যাগ করেছে।
* ফ্রি ট্রেডে ট্যারিফ যুদ্ধ প্রশমনে কি এই জীবতাত্ত্বিক অস্ত্র ব্যবহার করে উন্নত বিশ্বকে অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল করার চেষ্টা করা হয়ে থাকতে পারে বলে অনেক অনুসন্ধিৎসু মন প্রশ্ন করছে।
* বিলিয়ন-ট্রিলিয়ন ডলার-পাউন্ড-ইউরো ব্যয় করে বানানো অস্ত্র, মিসাইল, স্টিলথ বিমান, পরমাণু বোমা এবং যুদ্ধবিমান ও সৈন্যবহনকারী জাহাজ সবই কুপোকাত এই অদৃশ্য আণুবীক্ষণিক সংক্রমণকারী জীবাণুর কাছে।
* পৃথিবীর সব পুঁজিবাদী দেশ আজ সমাজতান্ত্রিক দেশের মতো তাদের নিজ নিজ দেশের অর্থনীতিকে রাষ্ট্রীয়করণ করে কি পুঁজিবাদী সমাজ ব্যবস্থার কবর রচনা করল?
* সোশ্যালিস্টদের আজীবনের লালিত ইচ্ছা, রাষ্ট্রের সব নাগরিককে সরকারি ভাতা দেওয়ার মাধ্যমে কি পুঁজিপতিদের সব পুঁজি রাষ্ট্র বাজেয়াপ্ত করার পাঁয়তারা করছে কি?
* এই মহামারি কি উন্নত-পুঁজিবাদী-প্রযুক্তিতে সফল দেশগুলোতে প্রান্তিক জাতীয়তাবাদী সরকার আসার খাল কেটে কুমির আনতে সহায়তা করবে কি?
* যদি এক এক করে পশ্চিম, উত্তর ইউরোপ ও অন্যান্য ধনী দেশগুলোতে যুবক বয়সী প্রান্তিক জাতীয়তাবাদী নেতাদের হাতে এসব দেশের শাসনব্যবস্থা অর্পিত হয়, তাহলে এই নতুন নেতারা কি কোভিড–১৯–এর আলোকে শিক্ষাগ্রহণ করত, হয়তো অন্য দেশের মুখাপেক্ষী না হয়ে নিজেই নিজের দেশের জনগণ এবং অর্থনীতির চাকাকে নিজেরাই সচল রাখতে উদ্যোগী হবে, তাহলে তারা ধীরে ধীরে নিজের দেশেই ভর্তুকির মাধ্যমে নিজেদের উৎপাদন নিজের দেশের কলকারখানায় শুরু করে দেবে কি?
এগুলো সবই এক ধরনের অনুমান! হয়তো বা। কিন্তু, যেমন জানুয়ারি ২০২০ সালে পৃথিবী জানত না, এমন ধরনের এক মহামারি আসছে ধেয়ে মানব জাতিকে চিড়িয়াখানায় বন্দী করে ফেলবে আর পৃথিবী সহসা হয়ে যাবে বন্য প্রাণীদের অভয় কংক্রিট অরণ্য?
আসুন, আবার একটু ভাবি, কীভাবে চোখের পলকে পৃথিবীটা বদলে যাওয়ার এক অশনিসংকেতের সম্মুখীন আমরা।