
স্টুডেন্ট ভিসায় আমেরিকায় এসে পড়াশোনা শেষ করার পর চাকরির মাধ্যমে নন-ইমিগ্র্যান্ট ভিসা (এইচ১বি) এবং গ্রিন কার্ড দুটোই পাওয়া যায়। এইচ১বি নিয়ে যেহেতু বিগত সংখ্যায় আলোচনা করেছি, এবার আমরা চাকরির মাধ্যমে গ্রিন কার্ড ইবি১, ইবি২, ইবি৩ এবং ইবি৪ প্রাপ্তির সব দিকে আলোকপাত করব। আপনার যদি সঠিক দক্ষতা, শিক্ষা, অভিজ্ঞতা ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় যোগ্যতা থাকে, তবে আপনিও চাকরির মাধ্যমে গ্রিন কার্ড নিয়ে আমেরিকায় বাস করতে পারেন।
ইবি১
আমেরিকায় বসবাসের জন্য অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত কর্মী (প্রায়োরিটি ওয়ার্কার) হিসেবে (১) বিজ্ঞান/আর্টস/শিক্ষা/ব্যবসা/অ্যাথলেটিকসে অসাধারণ দক্ষতাসম্পন্ন ব্যক্তি; (২) কমপক্ষে তিন বছরের অভিজ্ঞতা রয়েছে, এমন অসামান্য প্রতিভাসম্পন্ন অধ্যাপক/গবেষক; এবং (৩) পরিচালনা ও কার্যনির্বাহী ভূমিকায় (ম্যানেজারিয়াল ও এক্সিকিউটিভ ক্যাপাসিটিতে) আমেরিকার বাইরে কোনো কোম্পানিতে কমপক্ষে এক বছর চাকরির অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ব্যক্তি ওই একই কোম্পানি অথবা তার কোনো ব্রাঞ্চ, জয়েন্ট ভেঞ্চার, অ্যাফিলিয়েট কোম্পানির বহুজাতিক ব্যবস্থাপক ও কার্যনির্বাহী (মাল্টিন্যাশনাল ম্যানেজার ও এক্সিকিউটিভ) ব্যক্তি ইবি১ ক্যাটাগরিতে গ্রিন কার্ড পেতে পারেন।
ইবি২
যে তিনটি ক্যাটাগরিতে ইবি২ গ্রিন কার্ড-যোগ্যতা নির্ধারিত হয়, সেগুলো হলো (১) আমেরিকার স্নাতক ও এর সমমান ডিগ্রি, পরবর্তী কমপক্ষে ৫ বছরের অভিজ্ঞতা রয়েছে, এমন অথবা অভিজ্ঞতা ছাড়া স্নাতকোত্তর/পিএইচডি/জেডি/এমডির মতো উচ্চ ডিগ্রি রয়েছে, এমন ব্যক্তি, (২) বিজ্ঞান/আর্টস/ব্যবসার ক্ষেত্রে অসাধারণ সামর্থ্য (একসেপশনাল অ্যাবিলিটি) রয়েছে, এমন ব্যক্তি এবং (৩) জাতীয় স্বার্থে ছাড়ের (ন্যাশনাল ইন্টারেস্ট ওয়েভার) আওতায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রয়োজন রয়েছে, এমন পেশায় বিশেষ দক্ষতাসম্পন্ন ব্যক্তি। ইবি২ গ্রিন কার্ডধারীর স্পাউস ইবি২১ ক্যাটাগরিতে ও তার ২১ বছরের কম বয়সী সন্তান ই২২ ক্যাটাগরিতে একই সঙ্গে আমেরিকায় আসতে পারবেন।
ইবি৩
ইবি৩ গ্রিন কার্ড-যোগ্যতার মানদণ্ড হলো (১) কমপক্ষে ২ বছরের অভিজ্ঞতা রয়েছে, এমন দক্ষ কর্মী (স্কিলড ওয়ার্কার); (২) কমপক্ষে আমেরিকার স্নাতক ও এর সমমান ডিগ্রি রয়েছে, এমন পেশাদার (প্রফেশনাল); এবং (৩) অদক্ষ কর্মী (আনস্কিলড ওয়ার্কার)। দক্ষ কর্মী ও পেশাদার ক্যাটাগরির ইবি৩ গ্রিন কার্ডধারী ব্যক্তির স্বামী/স্ত্রী ই৩৪ ক্যাটাগরিতে এবং ২১-এর কম বয়সী সন্তান ই৩৫ ক্যাটাগরিতে আর অদক্ষ কর্মী ক্যাটাগরির গ্রিন কার্ডধারী ব্যক্তির স্বামী/স্ত্রী ইডব্লিউ৪ ক্যাটাগরিতে এবং ২১-এর কম বয়সী সন্তান ইডব্লিউ৫ ক্যাটাগরিতে একই সঙ্গে আমেরিকায় আসতে পারবেন।
ইবি৪
যেসব ক্যাটাগরিতে ইবি৪ গ্রিন কার্ড পাওয়া যায়, তার মধ্যে বাংলাদেশিদের মধ্যে পরিচিত ও প্রচলিত দুটি ক্যাটাগরি হলো (১) আমেরিকার ভেতরে অবস্থিত কোনো অলাভজনক ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে পূর্ববর্তী দুই বছর আর১ ভিসা নিয়ে অথবা রিলিজিয়াস নন-ইমিগ্র্যান্ট ওয়ার্কার হিসেবে সপ্তাহে কমপক্ষে ৩৫ ঘণ্টা কাজের অভিজ্ঞতার আলোকে অথবা এসডি ক্যাটাগরিতে রিলিজিয়াস ইমিগ্র্যান্ট ওয়ার্কার হিসেবে; এবং (২) অপব্যবহার, বিসর্জন অথবা অবহেলার (অ্যাবিউজ, অ্যাবানডানমেন্ট অথবা নেগলেক্ট) কারণে পিতামাতার সঙ্গে পুনরায় একত্র হতে পারবে না, এই মর্মে আমেরিকার যেকোনো রাজ্যের আদালতের আদেশ রয়েছে, এমন ২১-এর কম বয়সী অবিবাহিত বিশেষ অভিবাসী কিশোর (স্পেশাল ইমিগ্র্যান্ট জুভেনাইল বা এসআইজে)।
শ্রম ছাড়পত্র
ওপরে বর্ণিত ইবি১-এর তিনটি ক্যাটাগরি এবং ইবি২-এর ন্যাশনাল ইন্টারেস্ট ওয়াইভার ক্যাটাগরি বাদে ইবি২-এর অপর দুটি এবং ইবি৩-এর তিনটি ক্যাটাগরিতে আপনাকে প্রথমে একটি মার্কিন প্রতিষ্ঠান থেকে চাকরির অফার পেতে হবে। তবে অফার দেওয়ার আগে কোড অব ফেডারেল রেগুলেশনস ২০ সিএফআর ৬৫৬.১৭-এর আওতায় ওই মার্কিন প্রতিষ্ঠানকে আপনার জন্য দিয়ে শ্রম অধিদপ্তর (ডিপার্টমেন্ট অব লেবার) থেকে শ্রম ছাড়পত্র (লেবার সার্টিফিকেশন) নিতে হবে। আপনার এমপ্লয়ারকে নির্দিষ্ট এলাকায় নির্দিষ্ট জব পজিশনের জন্য প্রযোজ্য প্রিভেইলিং ওয়েজ ডিটারমিনেশন (পিডব্লিউডি) নিতে হবে। এরপর এমপ্লয়ারকে স্টেট ওয়ার্ক ফোর্স এজেন্সিতে একটানা ৩০ দিনের জন্য জব অর্ডার প্লেস করতে হবে, চাকরির এলাকায় রোববার প্রকাশিত হয়, এমন দুটি পত্রিকাসহ কোম্পানির ওয়েবসাইটে, জব ফেয়ারে, এমপ্লয়ি রেফারেল প্রোগ্রামে, জব সার্চ ওয়েবসাইটে, রেডিও/টেলিভিশনে ইত্যাদি যেকোনো তিনটি ভিন্ন মাধ্যমে যেকোনো মেয়াদের জন্য বিজ্ঞাপন দিতে হবে। আগ্রহী সব প্রার্থীর বায়োডাটা সংরক্ষণ করতে হবে। বাছাইকৃত ব্যক্তিদের ইন্টারভিউ নিতে হবে এবং যাঁদের বাদ দেওয়া হলো, তাঁদের বাদ দেওয়ার কারণ লিপিবদ্ধ করে একটি রিক্রুটমেন্ট রিপোর্ট তৈরি করতে হবে। এমপ্লয়ারকে এই বিজ্ঞাপনের ব্যাপারে একটি পোস্টিং নোটিশ কমপক্ষে ১০ দিন তাঁর ওয়ার্ক প্লেসে রাখতে হবে এবং পোস্টিং নোটিশটি নামিয়ে ফেলার পর কতজন আগ্রহী প্রার্থী আবেদন করেছেন, সে-সংক্রান্ত একটি নোটেশন টানিয়ে রাখতে হবে। পোস্টিং নোটিশ নামিয়ে ফেলার অথবা স্টেট ওয়ার্ক ফোর্স এজেন্সিতে প্লেস করা জব অর্ডার শেষ করার সর্বনিম্ন ৩০ দিন পর এবং যেকোনো একটি রোববারের বিজ্ঞাপন প্রকাশের সর্বোচ্চ ১৮০ দিনের আগে এমপ্লয়ারকে অনলাইনে ইটিএ ফরম ৯০৮৯ জমা দিয়ে ডিপার্টমেন্ট অব লেবারের অধীনে এমপ্লয়মেন্ট অ্যান্ড ট্রেনিং অ্যাডমিনিস্ট্রেশন থেকে পারমানেন্ট লেবার সার্টিফিকেশন নিতে হবে। ইবি১, ইবি৪ আর ন্যাশনাল ইন্টারেস্ট ওয়েভারের ক্ষেত্রে আপনি নিজেই আবেদন করতে পারবেন, আপনার এমপ্লয়ার আপনার জন্য আবেদন করার অথবা লেবার সার্টিফিকেশন নেওয়ার প্রয়োজন হবে না।
কীভাবে আবেদন করবেন
ইবি২ ও ইবি৩-এর ক্ষেত্রে আপনার এমপ্লয়ার লেবার সার্টিফিকেশন পাওয়ার ১৮০ দিনের মধ্যে ও ইবি১-এর ক্ষেত্রে যেকোনো সময় ৭০০ ইউএস ডলার ফি দিয়ে ফরম আই-১৪০, ইমিগ্র্যান্ট পিটিশন ফর এলিয়েন ওয়ার্কার আর ইবি৪-এর জন্য যেকোনো সময় ৪৩৫ ইউএস ডলার ফি দিয়ে ফরম আই-৩৬০, পিটিশন ফর অ্যামেরেশিয়ান, উইডোয়ার অর স্পেশাল ইমিগ্র্যান্ট জমা দিতে হবে। এই ক্যাটাগরিগুলোতে ভিসা বুলেটিন অনুযায়ী গ্রিন কার্ড এখন চলমান রয়েছে, অর্থাৎ আবেদনের পর অনুমোদনের জন্য দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হবে না। অনুমোদনের পর আপনি যুক্তরাষ্ট্রের ভেতরে বৈধভাবে থাকলে ১ হাজার ১৪০ ইউএস ডলার ফি দিয়ে ফরম আই-৪৮৫, অ্যাপ্লিকেশন টু রেজিস্টার পারমানেন্ট স্ট্যাটাস অর অ্যাডজাস্ট স্ট্যাটাস জমা দেবেন আর বাইরে থাকলে ফরম ডিএস-২৬০, অনলাইন ইমিগ্র্যান্ট ভিসা অ্যান্ড এলিয়েন রেজিস্ট্রেশন অ্যাপ্লিকেশন জমা দেবেন ও ১৬০ ইউএস ডলার ইমিগ্র্যান্ট ফি দেবেন। আমেরিকায় বৈধভাবে আসার পর অনুমোদিত মেয়াদের পরও থাকলে আপনি ওপরে বর্ণিত একটি ক্যাটাগরিতে গ্রিন কার্ডের জন্য বিবেচিত হবেন না।
বিশেষ দ্রষ্টব্য: এই লেখা কোনো রকম আইনি পরামর্শ নয়। এটি কেবল ইউএসসিআইএস ও ইউএস ডিপার্টমেন্ট অব স্টেটের ওয়েবসাইটে প্রদর্শিত এ-সংক্রান্ত তথ্যের সন্নিবেশ মাত্র।
লেখক: ব্যারিস্টার অ্যাট ল, নিউইয়র্ক-প্রবাসী
সেল: (৯২৯)৩৯১-৬০৪৭; ই-মেইল: expa.expe@gmail.com