
যুক্তরাষ্ট্রের ডানপন্থী প্রভাবশালীরা নিউইয়র্কের নবনির্বাচিত মেয়র জোহরান মামদানিকে মিথ্যা তথ্য দিয়ে ইসলামিক স্টেট (আইএস) গোষ্ঠীর সঙ্গে জড়িয়ে ফেলার চেষ্টা করেছেন। তাঁরা এমন এক মনগড়া বিবৃতি প্রচার করেছেন, যা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লাখ লাখ ভিউ হয়েছে। গবেষকেরা গতকাল বৃহস্পতিবার এ কথা বলেন।
যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় নগর নিউইয়র্কে প্রথম মুসলিম ও দক্ষিণ এশীয় বংশোদ্ভূত মার্কিন হিসেবে জোহরান মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন। নীতিগত প্রস্তাব ও তাঁর ধর্মীয় পটভূমির ওপর তীব্র আক্রমণের পরও তিনি এই সপ্তাহে সুস্পষ্ট জয় নিশ্চিত করেছেন।
ধনকুবের ইলন মাস্কের মালিকানাধীন প্ল্যাটফর্ম ‘এক্স’–এ (সাবেক টুইটার) জোহরানবিরোধী বেশ কিছু অ্যাকাউন্ট ইসলামিক স্টেটের কথিত একটি বিবৃতি প্রচার করেছে, যার শিরোনাম ছিল ‘অপারেশন ম্যানহাটান প্রজেক্ট’। এতে নির্বাচনের দিন নিউইয়র্ক নগরে হামলার ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছিল।
যেসব প্রভাবশালী এই ভুয়া বিবৃতিকে জোহরান মামদানির সঙ্গে যুক্ত করেছেন, তাঁদের মধ্যে ছিলেন প্রভাবশালী রক্ষণশীল নেতা লরা লুমার, যিনি ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত।
লুমার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে এক পোস্টে লিখেছেন, ‘মুসলিম মেয়র প্রার্থীর জয় উদ্যাপন করতে মুসলিমরা আজ নিউইয়র্ক নগরে আইএসআইএস (ইসলামিক স্টেট) হামলা চালানোর চেয়ে ভালো কোনো উপায় ভাবতে পারে না।’
লুমারের এই পোস্ট ২ লাখের বেশি ভিউ পেয়েছে।
অন্যান্য রক্ষণশীল এক্স অ্যাকাউন্ট থেকে কথিত বিবৃতি উদ্ধৃত করে ভুয়া দাবি করে লিখেছে, চরমপন্থী গোষ্ঠীটি মেয়র হিসেবে জোহরানকে সমর্থন করেছে। এক্সে এসব পোস্ট সম্মিলিতভাবে লাখ লাখ ভিউ পেয়েছে।
ডিজইনফরমেশন ওয়াচডগ নিউজগার্ডসহ একাধিক গবেষকের মতে, জিহাদিদের আমাক নিউজ এজেন্সির লোগো–সংবলিত কথিত এই চিঠিটি ছিল পুরোপুরি বানোয়াট।
আমেরিকান ইউনিভার্সিটির শিক্ষাবিদ মেইলি ক্রিজিস ওয়াচডগকে জানান, কথিত এই বিবৃতির সঙ্গে আমাক থেকে প্রকাশিত অন্যান্য বিবৃতির কোনো মিল নেই।
ক্রিজিস বলেন, আমাক ইসলামিক স্টেটের খবর শেয়ার করতে এবং হামলার দায় স্বীকার করতে ব্যবহৃত হয়। স্ক্রিনশটে যা বলা হয়েছে, আমাক সেভাবে কোনো হুমকি দেয় না।
আরেকটি গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইনফরমেশন এপিডেমিওলজি ল্যাবও বলেছে, প্রচারিত বিবৃতির ভাষা, শৈলী, ফর্ম্যাটিং এবং বিতরণ আইএস ‘মিডিয়া’ থেকে একেবারে ভিন্ন।
মনগড়া এই বিবৃতি সম্ভবত প্রথমে ফোর–চান নামক উগ্র-ডানপন্থী মেসেজ বোর্ডে প্রকাশিত হয়েছিল, যা ষড়যন্ত্র তত্ত্বের জন্য পরিচিত।
ফিলিস্তিনিদের দীর্ঘদিনের সমর্থক জোহরান মামদানি নাইন–ইলেভেন হামলার পর নিজে ইসলামোফোবিয়ার শিকার হয়েছিলেন। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে তিনি ফিলিস্তিনিদের সমর্থনের পাশাপাশি ইহুদি-বিদ্বেষেরও কড়া নিন্দা জানিয়েছেন।
৩৪ বছর বয়সী নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের আইনসভার এই সদস্য বারবারই বর্ণবাদী আচরণ এবং ভুয়া তথ্যের শিকার হয়েছেন।
নিউইয়র্ক নগরের বহু প্রতীক্ষিত নির্বাচনের আগে বার্তা সংস্থা এএফপির ফ্যাক্ট-চেকাররা জোহরান মামদানিকে লক্ষ্য করে ইন্টারনেটে প্রচারিত বেশ কয়েকটি মিথ্যা দাবি খণ্ডন করেছেন। এর মধ্যে ছিল একজন অনাবাসী অবৈধভাবে তাঁকে ভোট দিয়েছেন এবং তাঁর প্রচার দলের একজন কর্মী নাৎসি স্বস্তিকা গ্রাফিতির পাশে পোজ দিয়েছেন বলে দাবি করা হয়েছিল।