হোয়াইট হাউসের ইস্ট উইং-এর সামনে ভবন ভাঙার কাজ চলছে। এখানে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের পরিকল্পিত বলরুম নির্মাণ করা হবে। ওয়াশিংটন ডিসি, যুক্তরাষ্ট্র, ২১ অক্টোবর ২০২৫
হোয়াইট হাউসের ইস্ট উইং-এর সামনে ভবন ভাঙার কাজ চলছে। এখানে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের পরিকল্পিত বলরুম নির্মাণ করা হবে। ওয়াশিংটন ডিসি, যুক্তরাষ্ট্র, ২১ অক্টোবর ২০২৫

হোয়াইট হাউসে ট্রাম্পের বিলাসবহুল বলরুম তৈরিতে অর্থ ঢালছেন কারা

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন ২৫০ মিলিয়ন (২৫ কোটি) ডলারের হোয়াইট হাউস বলরুমের নির্মাণকাজ শুরু হয়েছে। তবে এ প্রকল্পের জন্য কোন কোন ধনাঢ্য ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান অনুদান বা অর্থ দিচ্ছে, তা নিয়ে রহস্য চলছেই।

গত সোমবার ৯০ হাজার বর্গফুটের (৮,৩৬০ বর্গমিটার) এ বিলাসবহুল বলরুমের নির্মাণকাজ শুরু হয়েছে। প্রকল্পের শুরুতে খননকারী ও নির্মাণকর্মীরা হোয়াইট হাউসের ইস্ট উইংয়ের কিছু অংশ ভেঙে দিচ্ছিলেন।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বলেছেন, তিনি নিজেই প্রকল্পের বড় অংশের জন্য অর্থ দেবেন। তিনি আরও ইঙ্গিত দিয়েছেন, কিছু অজ্ঞাতদাতা ২০ মিলিয়ন (২ কোটি) ডলারের বেশি খরচ করতে রাজি হতে পারেন।

এ অর্থায়নপদ্ধতি নিয়ে কিছু আইন বিশেষজ্ঞ উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তাঁরা বলছেন, এ ধরনের দান সরাসরি রাষ্ট্রীয় কাজ বা প্রশাসনের সুবিধা নেওয়ার বিনিময়ে হতে পারে।

‘আমি এ বিশাল বলরুমকে নৈতিকভাবে এক দুঃস্বপ্ন বলে মনে করি’, বলেন রিচার্ড পেইন্টার। তিনি ২০০৫ থেকে ২০০৭ পর্যন্ত হোয়াইট হাউসের চিফ এথিকস লইয়ার ছিলেন। তিনি আরও বলেন, ‘এটি হোয়াইট হাউসের সঙ্গে যোগাযোগকে ব্যবহার করে অর্থ সংগ্রহের একটি উপায়। আমি এটি পছন্দ করি না। এসব করপোরেশন সরকার থেকে কিছু না কিছু পেতে চায়।’

গত ১৫ অক্টোবর হোয়াইট হাউসে সম্ভাব্য দাতাদের জন্য আয়োজিত এক নৈশভোজে অংশ নিয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের কয়েকটি প্রধান কোম্পানির জ্যেষ্ঠ নির্বাহীরা। তাঁদের মধ্যে ছিলেন ব্ল্যাকস্টোন, ওপেনএআই, মাইক্রোসফট, কয়েনবেস, প্যালান্টির, লকহিড মার্টিন, অ্যামাজন ও গুগলের কর্মকর্তারা।

১৫ অক্টোবর হোয়াইট হাউসে সম্ভাব্য দাতাদের জন্য আয়োজিত এক নৈশভোজে অংশ নিয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের কয়েকটি প্রধান কোম্পানির জ্যেষ্ঠ নির্বাহীরা। তাঁদের মধ্যে ছিলেন ব্ল্যাকস্টোন, ওপেনএআই, মাইক্রোসফট, কয়েনবেস, প্যালান্টির, লকহিড মার্টিন, অ্যামাজন ও গুগলের কর্মকর্তারা।

নৈশভোজে আরও উপস্থিত ছিলেন নিউইয়র্ক জেটস এনএফএল টিমের মালিক উডি জনসন এবং শেরি ও এডওয়ার্ড গ্লেজার। শেরি ও এডওয়ার্ড গ্লেজার এবং তাঁদের ভাইবোনেরা টাম্পা বে বকানিয়ার্স ও ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের মালিক।

যুক্তরাষ্ট্রে বিবিসির অংশীদার সিবিএস নিউজ দাতাদের একটি প্রতিশ্রুতি ফরম দেখেছে। তাতে ইঙ্গিত দেওয়া হয়, যাঁরা দান করবেন, তাঁরা ‘স্বীকৃতি’ পেতে পারেন। যদিও পরিকল্পনা এখনো চূড়ান্ত হয়নি, তবে এ স্বীকৃতি হতে পারে তাঁদের নাম স্থাপত্যের মধ্যে খোদাই করে দেওয়া।

আমি এ বিশাল বলরুমকে নৈতিকভাবে এক দুঃস্বপ্ন বলে মনে করি। এটি হোয়াইট হাউসের সঙ্গে যোগাযোগকে ব্যবহার করে অর্থ সংগ্রহের একটি উপায়। আমি এটি পছন্দ করি না। এসব করপোরেশন (বলরুম নির্মাণে অর্থদাতা) সরকার থেকে কিছু না কিছু পেতে চায়।
রিচার্ড পেইন্টার, ২০০৫ থেকে ২০০৭ পর্যন্ত হোয়াইট হাউসের চিফ এথিকস লইয়ার

হোয়াইট হাউস আগে জানিয়েছিল যে এই বিশাল বলরুমে ৬৫০ জনের বসার ক্ষমতা থাকবে। তবে এ সপ্তাহে ট্রাম্প বলেছেন, এটি ৯৯৯ জনের জন্য যথেষ্ট হবে।

এখন পর্যন্ত মাত্র একজন দাতার নাম প্রকাশিত হয়েছে।

আদালতের নথি অনুযায়ী, ইউটিউব এ প্রকল্পের জন্য ২২ মিলিয়ন (২ কোটি ২০ লাখ) ডলার দেবে। এটি ট্রাম্পের সঙ্গে একটি মামলার সমাধানের অংশ হিসেবে। মামলাটি ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি ক্যাপিটলে সহিংসতার ঘটনায় ট্রাম্পের ইউটিউব অ্যাকাউন্ট স্থগিত করা সংশ্লিষ্ট।

কিন্তু নৈশভোজে উপস্থিত অন্যদের মধ্যে কতজন দান করতে রাজি হয়েছেন বা কত অর্থ দান করেছেন, তা স্পষ্ট নয়। একটি আনুষ্ঠানিক তালিকা এখনো প্রকাশিত হয়নি। তবে হোয়াইট হাউসের কর্মকর্তা বলেছেন, তাঁরা এক দাতার নাম প্রকাশের পরিকল্পনা করছেন।

হোয়াইট হাউস জোর দিয়ে বলেছে, অনুদান আহ্বানে কোনো অসংগতি ছিল না। বলরুমটি ভবিষ্যৎ প্রশাসনও ব্যবহার করবে। তারা বলেছে, সংস্কারকাজের জন্য সাধারণ জনগণের ট্যাক্সের কোনো অর্থ খরচ হবে না।

সিবিএসের সংগৃহীত নথিতে দেখা যায়, দানগুলো ‘ট্রাস্ট ফর দ্য ন্যাশনাল মলের’ মাধ্যমে পরিচালিত হবে। অলাভজনক সংস্থাটি ন্যাশনাল পার্ক সার্ভিসের সঙ্গে কাজ করে এবং মল ও হোয়াইট হাউসের প্রকল্পগুলোর জন্য অর্থ সংগ্রহ করে।

সম্ভাব্য দাতাদের অনুষ্ঠানে ট্রাম্প বলেছেন, অনেকে ‘সত্যিই খুব উদার’ ছিলেন। কিছু দাতা ২৫ মিলিয়ন (২ কোটি ৫০ লাখ) ডলার উপযুক্ত দান কি না, জিজ্ঞেস করেছিলেন। ট্রাম্প বলেছেন, ‘আমি বললাম, আমি নেব।’

হোয়াইট হাউস জোর দিয়ে বলেছে, অনুদান আহ্বানে কোনো অসংসতি ছিল না। বলরুমটি ভবিষ্যৎ প্রশাসনও ব্যবহার করবে। তারা বলেছে, সংস্কারকাজের জন্য সাধারণ জনগণের ট্যাক্সের কোনো অর্থ খরচ হবে না।

হোয়াইট হাউসের সাবেক নির্বাহী শেফ ও ক্যাম্প ডেভিডের জেনারেল ম্যানেজার মার্টিন মঙ্গিয়েলো বিবিসিকে বলেছেন, বলরুমের জন্য দেওয়া অর্থ ‘শেষ পর্যন্ত নিজের খরচ মেটাবে ও খরচ বাঁচাবে।’ অর্থাৎ, নতুন বলরুম থাকলে ভবিষ্যতে বড় অনুষ্ঠান বা টেন্ট ভাড়া দেওয়ার খরচ বাঁচবে। মঙ্গিয়েলো সাতটি প্রশাসনের অধীন কাজ করেছেন।

মঙ্গিয়েলো আরও বলেন, অনুষ্ঠানের জন্য মাঝেমধ্যে হোয়াইট হাউসের বাইরে টেন্ট বসানো হয়। তিনি এটিকে ‘বিব্রতকর’ হিসেবে বর্ণনা করেন। এ ধরনের টেন্টের খরচ প্রায় ১ মিলিয়ন (১০ লাখ) ডলার বা এর বেশি হয় এবং বড় অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে এর সঙ্গে অন্য অতিরিক্ত খরচ যুক্ত হয়।

ভারী যন্ত্রপাতি দিয়ে ভাঙা হচ্ছে হোয়াইট হাউস কমপ্লেক্সের ভবনের সামনের অংশ। এখানেই ফার্স্ট লেডির কার্যালয়, একটি থিয়েটার ও বিদেশি অতিথিদের স্বাগত জানানোর জন্য ভিজিটর এন্ট্রান্স ছিল

কিন্তু রিচার্ড পেইন্টার বললেন, এটি একটি ‘পে-টু-প্লে স্কিম’(দানের বিনিময়ে সুবিধা) হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। এ ধরনের ব্যবস্থা আগে দুই প্রধান রাজনৈতিক দলের হোয়াইট হাউস প্রশাসনের সময়ও দেখা গেছে।

উদাহরণস্বরূপ, ১৯৯০-এর দশকে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন লিনকন বেডরুমে রাত কাটানোর সুযোগ বিক্রি করে সমালোচনার মুখে পড়েছিলেন। অভিযোগ ছিল, নিজের নির্বাচনী তহবিল সংগ্রহের বিনিময়ে এ উদ্যোগ নিয়েছিলেন তিনি।
সাম্প্রতিক কালে ট্রাম্প গত এপ্রিল মাসে বার্ষিক ‘হোয়াইট হাউস ইস্টার এগ রোলের’ জন্য করপোরেট স্পনসর খুঁজেছিলেন। কিছু বিশ্লেষক বলেছিলেন, এতে কোম্পানিগুলো তাঁর মনোযোগ আকর্ষণের জন্য প্রতিযোগিতা করতে পারে।

ট্রাম্প ও তাঁর প্রশাসনের কর্মকর্তারা বলেছেন, নতুন বলরুম করা জরুরি। কারণ, রাষ্ট্রীয় নৈশভোজ ও অন্যান্য অনুষ্ঠানের জন্য বড় কোনো স্থানের অভাব ছিল। হোয়াইট হাউস প্রায়ই বিদেশি নেতাদের সম্মানে সাউথ লনে টেন্ট ব্যবহার করে ও রাষ্ট্রীয় নৈশভোজের জন্য বড় অতিথিতালিকা সাজায়।

কিন্তু নতুন বলরুমের আকার নিয়ে পেইন্টার বলেন, ‘রাজনৈতিক তহবিল সংগ্রহের জন্য এটি বড় প্রলোভন’ তৈরি করবে। আগে এমন বড় সুযোগ ছিল না। যদিও দুই দলের প্রেসিডেন্টই তাঁদের সমর্থকদের হোয়াইট হাউসের অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন।