
হোয়াইট হাউস থেকে গতকাল বুধবার দেওয়া এক বিরল সন্ধ্যাকালীন ভাষণে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁর সরকারের সাফল্যের কথা তুলে ধরেছেন। একই সঙ্গে তিনি ভোক্তাপণ্যের উচ্চমূল্যের জন্য তাঁর ডেমোক্র্যাট পূর্বসূরির ওপর দায় চাপান। নিজ দল রিপাবলিকান পার্টি আগামী বছরের মধ্যবর্তী নির্বাচনের আগে কঠিন পরিস্থিতির মুখে পড়ার প্রস্তুতির মধ্যে এ ভাষণ দিলেন তিনি।
২০ মিনিটের কম সময়ের এ ভাষণে ট্রাম্প বলেন, ‘১১ মাস আগে আমি একটি বিশৃঙ্খল অবস্থা পেয়েছিলাম, আর আমি সেটি ঠিক করছি।’ ভাষণটি তিনি খুব দ্রুতগতিতে দেন।
রিপাবলিকান এই প্রেসিডেন্ট প্রায়ই অভিযোগ করেন, তাঁর কাজের জন্য তিনি যথাযথ স্বীকৃতি পান না। এ ভাষণে পণ্যের উচ্চমূল্য মোকাবিলায় তিনি তেমন কোনো নতুন নীতিগত উদ্যোগ ঘোষণা করেননি; বরং সাবেক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, আগের বাণিজ্যচুক্তি, অভিবাসী ও তাঁর ভাষায় একটি ‘দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যবস্থা’র ওপর দায় চাপান।
ট্রাম্প এ বছর তাঁর প্রশাসনের কাজের প্রশংসাও করেন। তিনি বলেন, সীমান্তে অবৈধ অনুপ্রবেশ কমানো থেকে শুরু করে কিছু পণ্যের দাম কমানোর মতো নানা ক্ষেত্রে তাঁর সরকার কাজ করেছে।
রিপাবলিকান এই প্রেসিডেন্ট প্রায়ই অভিযোগ করেন, তাঁর কাজের জন্য তিনি যথাযথ স্বীকৃতি পান না। এ ভাষণে পণ্যের উচ্চমূল্য মোকাবিলায় তিনি তেমন কোনো নতুন নীতিগত উদ্যোগ ঘোষণা করেননি; বরং সাবেক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, আগের বাণিজ্যচুক্তি, অভিবাসী ও তাঁর ভাষায় একটি ‘দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যবস্থা’র ওপর দায় চাপান।
ভাষণে ট্রাম্প ঘোষণা দেন, আগামী সপ্তাহে তাঁর প্রশাসন ১৪ লাখ ৫০ হাজার মার্কিন সেনাসদস্যকে ১ হাজার ৭৭৬ ডলার করে ‘ওয়ারিয়র ডিভিডেন্ড’ দেবে। পাশাপাশি তিনি রিপাবলিকানদের একটি প্রস্তাবে সমর্থন জানান। প্রস্তাবে ‘অ্যাফোর্ডেবল কেয়ার অ্যাক্ট’-এর মাধ্যমে ভর্তুকি দেওয়ার বদলে সরাসরি জনগণকে নগদ অর্থ দেওয়ার কথা বলা হয়েছে; যাতে তাঁরা নিজেরাই স্বাস্থ্যবিমার খরচ মেটাতে পারেন। তবে কংগ্রেসে এ প্রস্তাব এখনো পর্যাপ্ত সমর্থন পায়নি।
হলিডের সাজসজ্জায় ভরা একটি কক্ষের সামনে দাঁড়িয়ে ট্রাম্প বলেন, ‘আমি চাই অর্থটা সরাসরি মানুষের হাতে যাক; যেন আপনারা নিজেরাই স্বাস্থ্যসেবা কিনতে পারেন। এতে একমাত্র ক্ষতিগ্রস্ত হবে বিমা কোম্পানিগুলো।’
এ ভাষণ সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় নিয়ে উদ্বেগের জবাব দেওয়ার একটি সুযোগ ছিল। অথচ ট্রাম্প আগেও এসব উদ্বেগকে বারবার ডেমোক্র্যাটদের ‘ভাঁওতাবাজি’ বলে উল্লেখ করেছেন। বুধবারও তিনি বাইডেনের শাসনামলের দিকে আঙুল তুললেও স্বীকার করেন, দাম এখনো বেশি। তবে তাঁর দাবি, অর্থনৈতিক উন্নতির জন্য যুক্তরাষ্ট্র ‘প্রস্তুত অবস্থায়’ রয়েছে।
ট্রাম্প বলেন, ‘আমি এই উচ্চ দাম কমাচ্ছি এবং খুব দ্রুতই তা নামিয়ে আনছি।’
আগামী বছরের নভেম্বরে অনুষ্ঠেয় মধ্যবর্তী নির্বাচনে ট্রাম্পের রিপাবলিকান পার্টি প্রতিনিধি পরিষদ ও সিনেটে নিজেদের নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখতে চাইছে। অন্যদিকে বিরোধী ডেমোক্রেটিক পার্টি জীবনযাত্রার ব্যয় নিয়ে উদ্বেগ ও স্বাস্থ্যনীতি বিষয়ে মতভেদের বিষয় তুলে ধরে ক্ষমতা পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করছে।
আমি এ উচ্চ দাম (ভোক্তাপণ্যের মূল্য) কমাচ্ছি এবং খুব দ্রুতই তা নামিয়ে আনছি।ডোনাল্ড ট্রাম্প, মার্কিন প্রেসিডেন্ট
বাইডেনের চার বছরের শাসনামলে উচ্চ মূল্যস্ফীতি ট্রাম্পকে গত বছরের নির্বাচনে তৎকালীন ভাইস প্রেসিডেন্ট ও পরে প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হওয়া কমলা হ্যারিসকে পরাজিত করতে সহায়তা করেছিল। তবে চলতি বছর ট্রাম্পের আরোপ করা শুল্কনীতি অর্থনীতিতে অনিশ্চয়তা তৈরি করেছে এবং পণ্যের দাম বাড়িয়েছে। প্রায় এক বছর ধরে তাঁর প্রশাসন অর্থনীতি দেখভাল করলেও ট্রাম্পও বাইডেনের মতো জনগণকে বোঝাতে হিমশিম খাচ্ছেন যে অর্থনীতি ভালো অবস্থায় আছে।
গত মঙ্গলবার প্রকাশিত রয়টার্স/ইপসোসের এক নতুন জরিপে দেখা গেছে, মাত্র ৩৩ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক মার্কিন নাগরিক অর্থনীতি পরিচালনায় ট্রাম্পের কাজকে অনুমোদন করছেন।
ট্রাম্পের গতকালের ভাষণ হোয়াইট হাউসের ‘ডিপ্লোম্যাটিক রিসেপশন রুম’ থেকে দেওয়া হয়। সাধারণত প্রেসিডেন্টরা এ ধরনের ভাষণ ওভাল অফিস থেকে দিয়ে থাকেন।
ভাষণে ট্রাম্প বলেন, তিনি ১৮ ট্রিলিয়ন (১৮ লাখ কোটি) ডলারের বিনিয়োগ আকর্ষণ করেছেন, যা নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও কারখানা চালু করবে। এর পেছনে তাঁর শুল্কনীতির বড় ভূমিকা রয়েছে বলে তিনি দাবি করেন। ট্রাম্প বলেন, ‘এক বছর আগে আমাদের দেশ মৃতপ্রায় ছিল। এখন আমরা সারা বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত দেশ।’
ট্রাম্প আরও জানান, খুব শিগগিরই তিনি যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভের নতুন চেয়ারম্যানের নাম ঘোষণা করবেন। তাঁর ভাষায়, এমন একজনকে বেছে নেওয়া হবে, ‘যিনি অনেক বেশি সুদ কমানোর পক্ষে বিশ্বাস করেন। এতে গৃহঋণের কিস্তি আরও কমবে।’
বাইডেনের চার বছরের শাসনামলে উচ্চ মূল্যস্ফীতি ট্রাম্পকে গত বছরের নির্বাচনে তৎকালীন ভাইস প্রেসিডেন্ট ও পরে প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হওয়া কমলা হ্যারিসকে পরাজিত করতে সহায়তা করেছিল। তবে চলতি বছর ট্রাম্পের আরোপ করা শুল্কনীতি অর্থনীতিতে অনিশ্চয়তা তৈরি করেছে এবং পণ্যের দাম বাড়িয়েছে। প্রায় এক বছর ধরে তাঁর প্রশাসন অর্থনীতি দেখভাল করলেও ট্রাম্পও বাইডেনের মতো জনগণকে বোঝাতে হিমশিম খাচ্ছেন যে অর্থনীতি ভালো অবস্থায় আছে।
ট্রাম্পের এ ভাষণের ঠিক একদিন পরই যুক্তরাষ্ট্রের ‘শ্রম পরিসংখ্যান ব্যুরো’ মূল্যস্ফীতির সর্বশেষ তথ্য প্রকাশ করার কথা ছিল। ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে মাত্র তিন মাসের মাথায়, গত এপ্রিলে বার্ষিক মূল্যস্ফীতি নেমে চার বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন ২ দশমিক ৩ শতাংশে পৌঁছেছিল। তবে এর পর থেকে মূল্যস্ফীতি আবার ধীরে ধীরে বাড়ছে।
সর্বশেষ প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, ভোক্তা মূল্যসূচক আগের বছরের তুলনায় ৩ শতাংশ বেড়েছে। এটি জানুয়ারির পর সর্বোচ্চ ও ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি।
তিনি (ট্রাম্প) প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, প্রথম দিন থেকেই খরচ কমাবেন। সেটিই ছিল তাঁর এক নম্বর প্রতিশ্রুতি। সেই প্রতিশ্রুতির কারণেই তিনি নির্বাচন জিতেছিলেন। অথচ এখন খরচ শুধু বাড়ছেই, বাড়ছেই।চাক শুমার, নিউইয়র্কের সিনেটর ও সিনেটে ডেমোক্র্যাটদের শীর্ষ নেতা
ভাষণের আগে নিউইয়র্কের সিনেটর ও সিনেটে ডেমোক্র্যাটদের শীর্ষ নেতা চাক শুমার অভিযোগ করেন, ট্রাম্প তাঁর নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি পূরণে ব্যর্থ হয়েছেন।
ক্যাপিটল হিলে এক সংবাদ সম্মেলনে শুমার বলেন, ‘তিনি (ট্রাম্প) প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, প্রথম দিন থেকেই খরচ কমাবেন। সেটিই ছিল তাঁর এক নম্বর প্রতিশ্রুতি। সেই প্রতিশ্রুতির কারণেই তিনি নির্বাচন জিতেছিলেন। অথচ এখন খরচ শুধু বাড়ছেই, বাড়ছেই।’