যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীর সরবরাহ করা একটি ছবিতে দেখা যাচ্ছে, লস অ্যাঞ্জেলেসে রওনা হওয়ার প্রস্তুতিকালে যানবাহনের পাশে দাঁড়িয়ে রয়েছেন মেরিন সদস্যরা। ছবিটি কোথায় তোলা হয়েছে, জানা যায়নি। ৯ জুন ২০২৫
যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীর সরবরাহ করা একটি ছবিতে দেখা যাচ্ছে, লস অ্যাঞ্জেলেসে রওনা হওয়ার প্রস্তুতিকালে যানবাহনের পাশে দাঁড়িয়ে রয়েছেন মেরিন সদস্যরা। ছবিটি কোথায় তোলা হয়েছে, জানা যায়নি। ৯ জুন ২০২৫

ইরাক-সিরিয়ার চেয়ে বেশি মার্কিন সেনা এখন লস অ্যাঞ্জেলেসে

যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের লস অ্যাঞ্জেলেসে অভিবাসনবিরোধী অভিযানের প্রতিবাদে সহিংস বিক্ষোভের জেরে শহরটিতে এখন ইরাক ও সিরিয়ার চেয়ে বেশি মার্কিন সেনা মোতায়েন রয়েছেন।

মার্কিন গণমাধ্যম এবিসি নিউজের বরাতে ব্রিটিশ দৈনিক দ্য গার্ডিয়ান জানিয়েছে, লস অ্যাঞ্জেলেসে বর্তমানে ৪ হাজার ৮০০ ন্যাশনাল গার্ড ও মেরিন সদস্য মোতায়েন আছেন। অন্যদিকে ইরাক ও সিরিয়ায় মোতায়েন রয়েছেন যথাক্রমে আড়াই ও দেড় হাজার মার্কিন সেনা।

এক সংবাদ সম্মেলনে বিষয়টিকে গুরুত্বের সঙ্গে তুলে ধরেছেন লস অ্যাঞ্জেলেসের মেয়র ক্যারেন ব্যাস। তিনি বলেন, ‘খবরে জানা গেছে, মোতায়েনের জন্য নির্ধারিত সেনাসংখ্যা বর্তমানে ইরাকে অবস্থানরত মার্কিন সেনাসংখ্যার চেয়ে বেশি হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘এর জন্য খরচ হচ্ছে ১৩৪ মিলিয়ন ডলার। অথচ এই বিপুল অর্থ আমাদের দেশের শহরগুলো ভালোভাবে কাজে লাগাতে পারত।’

গতকাল বুধবার ‘টাস্ক ফোর্স ৫১’-এর কমান্ডার মেজর জেনারেল স্কট শারম্যান এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, লস অ্যাঞ্জেলেসে মোতায়েন সেনাদের গ্রেপ্তার করার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। পুলিশ গ্রেপ্তার করার আগপর্যন্ত তাঁরা লোকজনকে গ্রেপ্তার করতে পারবেন। টানা ছয় দিন ধরে চলা বিক্ষোভে উত্তাল শহরটিতে আরও কয়েক শ মেরিন সেনা মোতায়েনের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে বলেও জানান তিনি।

প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অভিবাসনবিরোধী অভিযানের কারণে ক্যালিফোর্নিয়ায় শুরু হওয়া বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে যুক্তরাষ্ট্রের অন্যান্য শহরেও। আগামী শনিবার সারা দেশে শতাধিক স্থানে কর্মসূচি পালনের ডাক দিয়েছেন বিক্ষোভকারীরা।
মেজর জেনারেল স্কট শারম্যান বলেন, অভিবাসনবিরোধী বিক্ষোভ চলাকালে লস অ্যাঞ্জেলেস থেকে ন্যাশনাল গার্ডের সেনারা কিছু বিক্ষোভকারীকে সাময়িকভাবে আটক করেছেন। পরে দ্রুতই তাঁদের পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। বার্তা সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস এ খবর জানিয়েছে।

আইসিই কর্মকর্তাদের সঙ্গে সেনারা সরাসরি লোকালয়ে প্রবেশ করলে অনেক সময় তা আইন প্রয়োগ বা গ্রেপ্তারের মতো ঘটনায় রূপ নিতে পারে। আর সেটি ‘পসি কমিটাটাস আইন’-এর স্পষ্ট লঙ্ঘন হিসেবে গণ্য হবে।
রব বন্টা, ক্যালিফোর্নিয়ার অ্যাটর্নি জেনারেল

৪ হাজারের বেশি ন্যাশনাল গার্ড ও ৭০০ মেরিন সেনার সমন্বয়ে গঠিত ‘টাস্ক ফোর্স ৫১’–এর এই কমান্ডার এপিকে আরও বলেন, প্রায় ৫০০ গার্ড সেনাকে অভিবাসনবিরোধী অভিযানে অংশ নেওয়ার জন্য প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।

ইতিমধ্যে ন্যাশনাল গার্ড সেনারা আইসিই কর্মকর্তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে কাজ করছেন—ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষের প্রকাশিত কয়েকটি ছবিতে এমন দৃশ্য দেখা গেছে।

সেনাবাহিনীর সরবরাহ করা একটি ছবিতে দেখা যাচ্ছে, ক্যালিফোর্নিয়ার লস অ্যাঞ্জেলেসে এক ব্যক্তিকে আটক করছেন পুলিশ সদস্যরা। ১০ জুন ২০২৫

আইসিইয়ের অভিযানে সেনাসহায়তা নিয়ে আইনি বিতর্ক

গত মঙ্গলবার মার্কিন ফেডারেল অভিবাসন সংস্থা ‘আইসিই’ কিছু ছবি প্রকাশ করেছে। তাতে দেখা যায়, সশস্ত্র ন্যাশনাল গার্ড সেনারা পাশে দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় আইসিই কর্মকর্তারা একদল অভিবাসনপ্রত্যাশীকে গাড়ির পাশে দাঁড় করিয়ে হাতকড়া পরাচ্ছেন।

আইসিই কর্মকর্তাদের সঙ্গে সেনারা ঠিক কয়টি অভিযানে অংশ নিয়েছেন, শারম্যান তা নির্দিষ্ট করে জানাননি। তবে তিনি বলেছেন, এরই মধ্যে প্রায় এক হাজার সেনা সরকারি ভবনের সুরক্ষা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় পরিচালিত বিভিন্ন অভিযানে অংশ নিয়েছেন।

এ দৃশ্য ঘিরেই শুরু হয়েছে আইনি বিতর্ক। কারণ, ১৮৭৮ সালের ‘পসি কমিটাটাস অ্যাক্ট’ অনুযায়ী, ন্যাশনাল গার্ডসহ মার্কিন সামরিক বাহিনীর সদস্যরা বেসামরিক নাগরিকদের বিরুদ্ধে আইন প্রয়োগে অংশগ্রহণ করতে পারেন না।

তবে ক্যালিফোর্নিয়ায় মোতায়েন সেনারা একটি ভিন্ন ফেডারেল আইনের আওতায় কাজ করছেন, যা উল্লিখিত আইনটির সঙ্গে সাংঘর্ষিক না হলেও আইন প্রয়োগকারী কার্যক্রমের মাধ্যমে তাঁরা ফেডারেল কর্মকর্তাদের সুরক্ষা দিতে পারবেন। অর্থাৎ সেনারা কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারবেন না ঠিকই, কিন্তু আইসিই কর্মকর্তাদের গ্রেপ্তার অভিযানে পাশে থেকে সুরক্ষা দিতে পারবেন।

এডওয়ার্ড আর রয়বাল ফেডারেল ভবনের বাইরে দাঁড়িয়ে ক্যালিফোর্নিয়া ন্যাশনাল গার্ডের সদস্যরা। ৮ জুন ২০২৫

কিন্তু এতেও বিতর্ক থেমে নেই। ক্যালিফোর্নিয়ার অ্যাটর্নি জেনারেল রব বন্টা রয়টার্সকে বলেন, আইসিই কর্মকর্তাদের সঙ্গে সেনারা যদি সরাসরি লোকালয়ে প্রবেশ করেন, তবে সেটি অনেক সময় আইন প্রয়োগ বা গ্রেপ্তারের ঘটনায় রূপ নিতে পারে। আর তা ‘পসি কমিটাটাস আইন’-এর স্পষ্ট লঙ্ঘন হিসেবেই গণ্য হবে।

আইসিই কর্মকর্তাদের সঙ্গে সেনারা ঠিক কয়টি অভিযানে অংশ নিয়েছেন, শারম্যান তা নির্দিষ্ট করে জানাননি। তবে তিনি বলেছেন, এরই মধ্যে প্রায় এক হাজার সেনা সরকারি ভবনের সুরক্ষা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় পরিচালিত বিভিন্ন অভিযানে অংশ নিয়েছেন।