নিউইয়র্কের কুইন্সের জ্যামাইকা এলাকায় নির্বাচনী প্রচার সভায় বক্তব্য দেন জোহরান মামদানি
নিউইয়র্কের কুইন্সের জ্যামাইকা এলাকায় নির্বাচনী প্রচার সভায় বক্তব্য দেন জোহরান মামদানি

জোহরান মামদানি কেন নিজ এলাকা কুইন্সে কম ভোট পেলেন

জোহরান মামদানি এরই মধ্যে ইতিহাস গড়ে ফেলেছেন। ৫০ শতাংশের বেশি ভোট পেয়ে নিউইয়র্ক নগরের ১১১তম মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন তিনি। শহরটির ইতিহাসে প্রথম মুসলিম ও অভিবাসী পরিবারে জন্ম নেওয়া মেয়র তরুণ এ রাজনীতিক।

ভোটের ফলাফলে দেখা গেছে, নিউইয়র্কের অন্যান্য কয়েকটি এলাকার তুলনায় জোহরান মামদানি নিজের এলাকা কুইন্স বরোতে কম ভোট পেয়েছেন। কিন্তু কেন? ডেমোক্রেটিক পার্টির স্বেচ্ছাসেবক, সাবেক গভর্নর অ্যান্ড্রু কুমোর প্রচার বিভাগ এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের সঙ্গে কথা বলে উত্তর খোঁজার চেষ্টা করা হয়েছে।

দেখা গেছে, নিউইয়র্কের ব্রংস বরোতে জোহরান মামদানি ৫১ দশমিক ৫ শতাংশ ভোট পেয়েছেন। তিনি ব্রুকলিনে ৫৬ দশমিক ৮ শতাংশ, ম্যানহাটনে ৫২ দশমিক ৭ শতাংশ ভোট পেয়েছেন। কিন্তু নিজের এলাকা কুইন্সে পেয়েছেন ৪৭ দশমিক ৩ শতাংশ ভোট।
কুইন্সের এস্টোরিয়া এলাকার বাসিন্দা জোহরান মামদানি। সেখানেই বেড়ে ওঠা তাঁর। মেয়র পদে এখান থেকেই প্রচার শুরু করেছিলেন তিনি। পরে প্রচার ছড়ায় পুরো নগরে। নগরজুড়ে অসংখ্য স্বেচ্ছাসেবক যুক্ত হন তাঁর প্রচার দলে।

২০২৪ সালে জোহরান মামদানির প্রচার দলে যুক্ত হয়ে স্বেচ্ছাসেবকের কাজ করেছেন জে মোল্লা সানি। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, নিউইয়র্কের পাঁচটি বোরোর মধ্যে এই কুইন্সে নানা ধরনের ভুল খবর বেশি ছড়িয়ে পড়েছিল। প্রচারের একেবারে শেষ দিকে এসে কুমোর প্রচার দল নানা অপপ্রচার ছড়ানোয় বিভিন্ন ধর্মীয় সম্প্রদায়ের অনেক ভোটার ভোট দেননি। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বক্তব্যও ভোটারদের ওপর প্রভাব ফেলেছে।

জোহরান মামদানির প্রতিদ্বন্দ্বী অ্যান্ড্রু কুমোর হয়ে প্রচারে কাজ করেছেন মওলানা কাজী কাইয়ুম। ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গি থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নানা বক্তব্য দিয়ে আলোচনায় ছিলেন তিনি। কাজী কাইয়ুম প্রথম আলোকে বলেন, ‘৩৫ বছর ধরে ইমামতি আর অ্যাক্টিভিস্ট হিসেবে কাজ করছি। আমি যা করেছি ও বলেছি, তার সঙ্গে এখনো সম্পূর্ণ একমত।’

জোহরান মামদানি

কাজী কাইয়ুম আরও বলেন, মানুষ প্রচার করেছে, ১৩ জন নারী কুমোর বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ এনেছেন। একজন মানুষ একসঙ্গে ১৩ জনকে যৌন হয়রানি করবে, এটা কি বিশ্বাসযোগ্য? তিনি বলেন, ‘ধর্মীয় ও সামাজিক যেসব কারণে আমরা জোহরান মামদানির বিরোধিতা করেছি, তার একটা পুলিশ ডিফান্ডিং (পুলিশের তহবিল কমানো)।’

শুরুর দিকে জোহরান মামদানির পক্ষে প্রচার চালিয়েছিলেন জ্যাকসন হাইটস বিজনেস অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ফাহাদ সুলাইমান। পরে পক্ষ বদলে তিনি কুমোর হয়ে প্রচার চালান। এ বিষয়ে ফাহাদ সুলাইমান বলেন, ‘আমরা মামদানির নীতি পছন্দ করিনি বলেই তাঁর সঙ্গ ত্যাগ করেছি। আমরা মনে করি, আমরা সফল হয়েছি। তাঁর নিজের এলাকায় সবচেয়ে কম ভোট পেয়েছেন তিনি।’

কুইন্স বরো এলাকার রাজনৈতিক বিশ্লেষক রানা আহমেদ বলেন, ‘দক্ষিণ এশিয়ার মানুষ সব কিছুতে ধর্মকে টেনে নিয়ে আসে। মামদানি এবং তাঁর পরিবার অসাম্প্রদায়িক। তাঁকে মুসলিম হিসেবে ট্যাগ দিয়ে প্রচারণা এবং বিবেচনা করা উচিত হয়নি। কেউ কেউ ধর্মের নৈতিকতার ভিত্তিতে চিন্তা করে ভোট দেওয়া থেকে বিরত ছিলেন। কোনো কোনো সম্প্রদায় ধর্মের কারণে তাঁকে ভোট না দিয়ে বিপরীত পক্ষকে ভোট দিয়েছে।’

রানা আহমেদ জানান, কুইন্সে ৫০ শতাংশের ওপরে খ্রিষ্টান। ধর্মহীন ২৫ শতাংশের বেশি। ইহুদিদের ভোট ৬ শতাংশ। মুসলিম ভোট ৭ শতাংশ। আর হিন্দু ভোট ৪ শতাংশ। তিনি বলেন, ‘অন্য এলাকার ভোটাররা তো মামদানিকে ধর্মের নিরিখে ভোট দেননি। তাহলে আপনারা কেন তাঁকে সেই হিসেবে প্রচার করলেন?’

সব ঠিক থাকলে আসছে নববর্ষে অর্থাৎ ২০২৬ সালের ১ জানুয়ারি নিউইয়র্কের মেয়র হিসেবে জোহরান মামদানির শপথ নেওয়া কথা রয়েছে।