মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর ভবনের বাইরের সাইনবোর্ড। ওয়াশিংটন ডিসি, যুক্তরাষ্ট্র। ১১ জুলাই, ২০২৫
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর ভবনের বাইরের সাইনবোর্ড। ওয়াশিংটন ডিসি, যুক্তরাষ্ট্র। ১১ জুলাই, ২০২৫

৩০ রাষ্ট্রদূতকে প্রত্যাহার করেছে ট্রাম্প প্রশাসন

বিশ্বজুড়ে মার্কিন দূতাবাসে ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতির প্রতিফলন নিশ্চিত করতে প্রায় ৩০ জন রাষ্ট্রদূত এবং অন্যান্য ঊর্ধ্বতন পেশাদার কূটনীতিককে প্রত্যাহার করছে ট্রাম্প প্রশাসন। তবে সমালোচকদের মতে, এই পদক্ষেপ বিদেশে যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্বাসযোগ্যতা ক্ষুণ্ন করবে।

প্রত্যাহার করে নেওয়া কূটনীতিকদের তালিকা দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর। সোমবার দপ্তরের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, এই পদক্ষেপ ‘যেকোনো প্রশাসনের জন্য একটি আদর্শ প্রক্রিয়া’। কিন্তু সমালোচকেরা বলছেন, বিষয়টি তেমন নয়।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই কর্মকর্তা বলেন, একজন রাষ্ট্রদূত প্রেসিডেন্টের ব্যক্তিগত প্রতিনিধি। আর এসব দেশে আমেরিকা ফার্স্ট এজেন্ডা এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার মতো ব্যক্তিরা থাকবেন, তা নিশ্চিত করার অধিকার প্রেসিডেন্টের রয়েছে।

বিষয়টি সম্পর্কে জানেন এমন ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, ওয়াশিংটনে ফিরে আসার নির্দেশ পাওয়া কর্মকর্তাদের মধ্যে প্রায় ৩০ জন জ্যেষ্ঠ কূটনীতিক রয়েছেন।

ওই ব্যক্তিরা বলেন, তাঁদের এমন ছোট দেশগুলোতে পদায়ন করা হয়েছিল, যেখানে শীর্ষ মার্কিন প্রতিনিধি হিসেবে ঐতিহ্যগতভাবে পররাষ্ট্র বিভাগের কর্মকর্তাদেরই নিয়োগ দেওয়া হয়; যেটা তাঁদের পেশাদার কূটনীতিকই বানায়, যাঁদের সঙ্গে কোনো রাজনৈতিক দলের সম্পৃক্ততা নেই।

যুক্তরাষ্ট্রের আরেক কর্মকর্তা বলেছেন, প্রত্যাহার করা কূটনীতিকদের পররাষ্ট্র দপ্তরেই নতুন দায়িত্ব দেওয়া হতে পারে।

কয়েকজনকে কোনো ব্যাখ্যা ছাড়াই ফোনে প্রত্যাহারের কথা জানানোর পর পররাষ্ট্র বিভাগের কর্মকর্তাদের প্রতিনিধিত্বকারী সংগঠন আমেরিকান ফরেন সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন জানিয়েছে, কোন সদস্যদের প্রত্যাহার করা হয়েছে, তা নিশ্চিত করতে তারা কাজ করছে। সংগঠনটির মুখপাত্র এ প্রক্রিয়াকে ‘খুবই অস্বাভাবিক’ বলে অভিহিত করেন।

মুখপাত্র নিকি গেমার এক ই–মেইল বার্তায় বলেন, ‘আকস্মিকভাবে ব্যাখ্যা ছাড়াই প্রত্যাহার করে নেওয়াটা প্রাতিষ্ঠানিক অন্তর্ঘাত ও রাজনৈতিকীকরণের সেই একই নমুনার প্রতিফলন, যা আমাদের জরিপের তথ্য অনুযায়ী ইতিমধ্যে মনোবল, কার্যকারিতা এবং বিদেশে যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্বাসযোগ্যতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে।’

গেমারের মন্তব্যের বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর।

শুক্রবার পররাষ্ট্র দপ্তরের এক কর্মকর্তার বরাত দিয়ে পলিটিকো জানিয়েছে, দুই ডজন রাষ্ট্রদূতকে তাঁদের পদ ছাড়তে বলা হয়েছে।

প্রথম মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা সংস্থাগুলোর মধ্যে পররাষ্ট্রনীতির অগ্রাধিকার বাস্তবায়নে বাধার মুখে পড়ার কারণে দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতা গ্রহণ করে ট্রাম্প ঊর্ধ্বতন পদগুলোতে অনুগতদের বসানোর চেষ্টা করছেন।

প্রায় ৮০টি রাষ্ট্রদূতের পদ শূন্য থাকার পরও কূটনীতিকদের প্রত্যাহারের ঘটনায় রিপাবলিকান প্রশাসনের তীব্র সমালোচনা করেছেন মার্কিন সিনেটের পররাষ্ট্র সম্পর্কবিষয়ক কমিটির শীর্ষ ডেমোক্র্যাট জিন শাহীন।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে এক পোস্টে শাহীন বলেন, ‘ক্ষমতায় যে-ই থাকুক না কেন, বিশ্বস্তভাবে দায়িত্ব পালনকারী যোগ্য পেশাদার রাষ্ট্রদূতদের সরিয়ে দিয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প মার্কিন নেতৃত্ব চীন ও রাশিয়ার হাতে তুলে দিচ্ছেন। এর ফলে যুক্তরাষ্ট্র কম নিরাপদ ও দুর্বল হচ্ছে।’