নিউইয়র্কে কি তাহলে শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্রে ফেন্টানিলের প্রতিক্রিয়ায় শিশুর মৃত্যু হলো

নিউইয়র্কে ডিভিনো নিনো দিবাযত্ন কেন্দ্রটির বাইরে নিকোলাস ডমিনিচি নামের শিশুটিকে স্মরণ করা হচ্ছে
ছবি: এএফপি

যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক সিটিতে একটি শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্রের ট্র্যাপ ডোরের (ছাদ বা মেঝেতে থাকা দরজা) নিচ থেকে বিপুল পরিমাণ ফেন্টানিলসহ অন্যান্য মাদক ও মাদকসংশ্লিষ্ট সরঞ্জাম উদ্ধার করেছে পুলিশ। সম্প্রতি এই দিবাযত্ন কেন্দ্রে (ডে কেয়ার সেন্টার) ওপিওড মাদকের সংস্পর্শে আসার পর এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করে প্রতিষ্ঠানটিতে তল্লাশি চালাতে গিয়ে আরও মাদক উদ্ধার করেছে পুলিশ।

নিউইয়র্কের পুলিশ বিভাগের প্রকাশিত ছবিতে বাদামি ও সাদা রঙের পাউডারভর্তি বেশ কিছু ব্যাগ দেখা গেছে। পুলিশ বলেছে, এ ঘটনায় তদন্ত চলছে।

গত শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক নগরের ব্রঙ্কসে ডিভিনো নিনো দিবাযত্ন কেন্দ্রে এক বছর বয়সী একটি শিশুর মৃত্যু হয়। পুলিশ বলছে, দিবাযত্ন কেন্দ্রটিতে বাচ্চাদের শোবার ঘরের একটি মাদুরের নিচে ফেন্টানিল লুকিয়ে রাখা ছিল। সেখানে ঘুমাচ্ছিল শিশুটি।

নিকোলাস ডমিনিচি নামের শিশুটিকে মৃত্যুর মাত্র এক সপ্তাহ আগে ওই দিবাযত্ন কেন্দ্রে ভর্তি করা হয়েছিল। শক্তিশালী এ মাদকের সংস্পর্শে আসার পর অসুস্থ হয়ে পড়া আরও তিন শিশুকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। অসুস্থ হয়ে পড়া এক শিশুর প্রস্রাবের নমুনায় এ মাদকের উপস্থিতি পাওয়া গেছে।

কৌঁসুলিরা বলেছেন, মাদক রাখার কারণে দিবাযত্ন কেন্দ্রটির মালিক গ্রেই মেন্ডেজ (৩৬) এবং তাঁর সহযোগী কার্লিস্টো অ্যাসেভেডো ব্রিটোর (৪১) বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। তাঁদের বিরুদ্ধে মাদক রাখার কারণে মৃত্যু এবং ষড়যন্ত্রের অভিযোগ আনা হয়েছে। ব্রিটো হলেন মেন্ডেজের স্বামীর চাচাতো ভাই।

ম্যানহাটানের অ্যাটর্নি ড্যামিয়েন উইলিয়ামস চলতি সপ্তাহে বলেন, ‘আমরা অভিযোগে বলেছি, আসামিরা ওই দিবাযত্ন কেন্দ্র থেকে মাদকদ্রব্য সরবরাহের কার্যক্রম চালানোর কারণে চার শিশুর শরীরে বিষক্রিয়া তৈরি হয় এবং তাদের একজন মারা যায়।’

গ্র্যান্ড জুরি গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে মেন্ডেজ ও ব্রিটোর বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযোগ গঠন করেছে। দুই সন্দেহভাজনের জামিন নামঞ্জুর করে তাঁদের আটক রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। দোষী সাব্যস্ত হলে তাঁদের প্রত্যেকের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হতে পারে।

পুলিশ বলছে, যে পরিমাণ মাদক উদ্ধার হয়েছে, তার কারণে পাঁচ লাখ মানুষের মৃত্যু হওয়ার ঝুঁকি ছিল। মাদকগুলো মোড়কজাত করার কাজে জড়িত তিনটি প্রতিষ্ঠানেরও সন্ধান পেয়েছেন তদন্তকারীরা।

মেন্ডেজের এক আইনজীবী বলেছেন, তাঁর মক্কেল অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তাঁর দাবি, স্বামীর চাচাতো ভাই ব্রিটো দিবাযত্ন কেন্দ্রে এসব মাদক রেখেছিলেন এবং তিনি তা জানতেন না।

ব্রিটোর পক্ষে কোনো আইনজীবী মামলা লড়ছেন কি না, তা জানা যায়নি।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেছেন, সিসিটিভি ফুটেজ এবং ফোন রেকর্ড ঘেঁটে জানা গেছে, শিশুটি অসুস্থ হওয়ার পর মেন্ডেজ কয়েকবার তাঁর স্বামীকে ফোন দিয়েছিলেন। এরপর তিনি জরুরি সেবা নম্বর ৯১১-এ ফোন দেন। পরে তাঁর স্বামী ঘটনাস্থলে পৌঁছান এবং দিবাযত্ন কেন্দ্র থেকে জিনিসপত্রভর্তি বেশ কিছু শপিং ব্যাগ সরিয়ে নেন।

কৌঁসুলিরা বলেন, গ্রেপ্তার হওয়ার আগে মেন্ডেজ তাঁর ফোন থেকে ২০ হাজারের মতো খুদে বার্তা মুছে দিয়েছেন বলে অভিযোগ আছে। কর্তৃপক্ষ পরে সেগুলো পুনরুদ্ধার করেছে।


মেন্ডেজের স্বামীকে খুঁজছে পুলিশ। আদালতের নথিতে তাঁকে সহষড়যন্ত্রকারী হিসেব উল্লেখ করা হয়েছে।

পুলিশ বলছে, ঘটনার পর মেন্ডেজের স্বামীর পালিয়ে যাওয়ার দৃশ্যটি সিসি ক্যামেরায় ধরা পড়েছে।

ফেন্টানিল হলো একটি সিনথেটিক পেইনকিলার (ব্যথানাশক)। এটি হেরোইনের চেয়ে ৫০ গুণ বেশি শক্তিশালী। যুক্তরাষ্ট্রে মাদকসংশ্লিষ্ট মৃত্যুহার বেড়ে যাওয়ার জন্য ফেন্টানিলকে দায়ী করা হয়ে থাকে।

যুক্তরাষ্ট্রে ২০১০ সালে অতিরিক্ত মাত্রায় মাদকসেবনের কারণে প্রায় ৪০ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছিল। এর মধ্যে ১০ শতাংশের কম মানুষের মৃত্যুর জন্য দায়ী ছিল ফেন্টানিল। তবে ২০২১ সালের হিসাবে দেখা যায়, অতিরিক্ত মাদকসেবনের কারণে যুক্তরাষ্ট্রে বছরে এক লাখের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়। এর মধ্যে ৬৬ শতাংশের মৃত্যুর জন্য দায়ী ফেন্টানিল।