
যুক্তরাষ্ট্রের ফার্স্ট লেডি মেলানিয়া ট্রাম্প দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের ছেলে হান্টার বাইডেনের বিরুদ্ধে ১০০ কোটি ডলারের মানহানি মামলা করার হুমকি দিয়েছেন। মেলানিয়ার এই ক্ষোভের কারণ, হান্টার দাবি করেছেন, কুখ্যাত শিশু যৌন নিপীড়নকারী জেফরি এপস্টেইনের মাধ্যমেই ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে মেলানিয়ার পরিচয় হয়েছিল।
মেলানিয়ার আইনজীবীরা হান্টারের দাবিকে ‘মিথ্যা, অবমাননাকর, মানহানিকর ও উত্তেজনাপূর্ণ’ বলে বর্ণনা করেছেন। ২০০৫ সালে ট্রাম্প-মেলানিয়ার বিয়ে হয়।
চলতি মাসের শুরুতে এক সাক্ষাৎকারে জেফরি এপস্টেইনের সঙ্গে মেলানিয়ার নাম জড়িয়ে এ কথা বলেন হান্টার বাইডেন। ওই সাক্ষাৎকারে তিনি ট্রাম্পের সঙ্গে এপস্টেইনের অতীত সম্পর্কের কঠোর সমালোচনাও করেন।
ডোনাল্ড ট্রাম্পের বন্ধু ছিলেন এপস্টেইন। তবে ট্রাম্প বলেছেন, ২০০০ সালের শুরুর দিকে তাঁদের দুজনের মধ্যে সম্পর্ক ভেঙে যায়। কারণ, ট্রাম্পের ফ্লোরিডার গলফ ক্লাবের কর্মীদের সঙ্গে এপস্টেইন অশোভন আচরণ করেছিলেন।
হান্টার বাইডেনের এক আইনজীবীর কাছে পাঠানো চিঠিতে ফার্স্ট লেডি মেলানিয়ার আইনজীবীরা লিখেছেন, হান্টার বাইডেন যেন নিজের ওই বক্তব্য প্রত্যাহার করেন ও ক্ষমা চান। নইলে ‘১০০ কোটি ডলারের বেশি ক্ষতিপূরণের’ মামলা মোকাবিলা করতে হবে।
চলতি মাসের শুরুর দিকে প্রকাশিত চলচ্চিত্র নির্মাতা অ্যান্ড্রু ক্যালাঘানের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে হান্টার বাইডেন দাবি করেন, এপস্টেইন সম্পর্কিত অপ্রকাশিত নথি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে ‘অভিযুক্ত’ করবে।
হান্টার আরও বলেন, এপস্টেইনই মেলানিয়ার সঙ্গে ট্রাম্পের পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন। তাঁদের মধ্যে সম্পর্ক খুবই বিস্তৃত ও গভীর ছিল।
মেলানিয়ার পাঠানো আইনি চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, সাংবাদিক মাইকেল উলফের বক্তব্যের ওপর আংশিকভাবে নির্ভর করে হান্টার বাইডেন এমন মন্তব্য করেছেন। মাইকেল উলফ প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে নিয়ে একটি সমালোচনামূলক জীবনী লিখেছেন।
সম্প্রতি মার্কিন গণমাধ্যম দ্য ডেইলি বিস্টের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে উলফ কয়েকবার দাবি করেন, ফার্স্ট লেডি মেলানিয়ার যখন তাঁর বর্তমান স্বামীর সঙ্গে আলাপ হয়, তখন তিনি এপস্টেইনের একজন সহযোগী হিসেবে পরিচিত ছিলেন।
পরে মেলানিয়ার আইনজীবীদের কাছ থেকে চিঠি পেয়ে সংবাদমাধ্যমটি ওই সংবাদ প্রত্যাহার করে নেয়। এপস্টেইনের মাধ্যমে ট্রাম্প ও মেলানিয়ার আলাপ হওয়ার কোনো প্রমাণ এখন পর্যন্ত নেই।
বিবিসি হান্টার বাইডেনকে দেওয়া মেলানিয়ার আইনি হুমকি সম্পর্কে জানতে তাঁর আইনজীবী আলেজান্দ্রো ব্রিটোর সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি তাঁর সহকারী নিক ক্লিমেন্সের দেওয়া একটি বিবৃতি দেখতে বলেন।
ওই বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ফার্স্ট লেডি মেলানিয়া ট্রাম্পের আইনজীবীরা সক্রিয়ভাবে নিশ্চিত করছেন, যাঁরা ক্ষতিকর, মানহানিকর মিথ্যা তথ্য ছড়াচ্ছেন, তাঁদের তৎক্ষণাৎ তা প্রত্যাহার করে নিতে ও ক্ষমা প্রার্থনা করতে হবে।
হারপারস বাজারের ২০১৬ সালের জানুয়ারি সংখ্যার একটি প্রোফাইলে বলা হয়েছে, মেলানিয়া ও ট্রাম্পের পরিচয় হয় ১৯৯৮ সালের নভেম্বর, একটি মডেলিং এজেন্সির আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে।
মেলানিয়া সে সময় বলেছিলেন, ওই অনুষ্ঠানে ট্রাম্প মেলানিয়ার ফোন নম্বর চেয়েছিলেন। কিন্তু মেলানিয়া তা দিতে অস্বীকার করেন। কারণ, সে সময় ট্রাম্প অন্য একজনের সঙ্গে সম্পর্কে ছিলেন।
বিবিসি হান্টার বাইডেনের আইনজীবীর সঙ্গে যোগাযোগ করেছে।
শিশুদের যৌন নিপীড়নের অভিযোগে হওয়া মামলায় ২০১৯ সালে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন এপস্টেইন। তাঁর বিচারকাজ শুরুর প্রক্রিয়া চলছিল। এরই মধ্যে নিউইয়র্কের একটি কারাগার থেকে এপস্টেইনের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এপস্টেইন আত্মহত্যা করেছেন, নাকি তাঁকে হত্যা করা হয়েছে, এ নিয়ে বিতর্ক উঠেছিল। পরে বিচার বিভাগ থেকে বলা হয়েছে, এপস্টেইন আত্মহত্যা করেছেন।
সে সময়ে এপস্টেইনের মামলার নথি প্রকাশের দাবিতে ট্রাম্পের বর্তমান প্রশাসনের শীর্ষ পর্যায়ের কয়েকজন সরব হয়েছিলেন। এমনকি ট্রাম্প এবার তাঁর নির্বাচনী প্রচারের সময় বলেছিলেন, তিনি ক্ষমতায় গেলে অপ্রকাশিত ওই সব নথি প্রকাশ করবেন।
জুলাইয়ের শুরুতে যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগ ও কেন্দ্রীয় তদন্ত ব্যুরো (এফবিআই) একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। সেখানে বলা হয়, এপস্টেইন কোনো গ্রাহক তালিকা রাখতেন বা ক্ষমতাবান ব্যক্তিদের ব্ল্যাকমেইল করতেন বলে কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
ট্রাম্পের বিচার বিভাগের এই প্রতিবেদন তাঁর কট্টর সমর্থকদের মধ্য হতাশার জন্ম দিয়েছে। তাঁদের আশা ছিল, ট্রাম্প ক্ষমতায় ফিরলে প্রয়াত ধনকুবের এপস্টেইনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ধনীদের মুখোশ খুলে যাবে।
এপস্টেইন–কাণ্ডে কয়েক সপ্তাহ ধরে হোয়াইট হাউস চাপে রয়েছে।