
তেহরান যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে সরাসরি কোনো আলোচনা করবে না। দেশটির সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি ওয়াশিংটনের সঙ্গে আলোচনাকে ‘সম্পূর্ণ নিষ্ফল চেষ্টা’ হিসেবে উল্লেখ করে এ মন্তব্য করেন।
তেহরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের ফাঁকে কূটনৈতিক আলোচনা চলার মধ্যে এ মন্তব্য করলেন খামেনি।
ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে গতকাল মঙ্গলবার খামেনির এ বক্তব্যের আগে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি জার্মানি, ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্যের কূটনীতিকদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। দেশ তিনটিকে একত্রে ‘ই থ্রি’ বলা হয়। ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) পররাষ্ট্রনীতিবিষয়ক প্রধান কায়া কালাসের সঙ্গেও আলোচনা করেন তিনি। ইরানের ওপর শাস্তিমূলক পদক্ষেপ (নিষেধাজ্ঞা) কখন ও কীভাবে আবার কার্যকর হবে, সেটি ছিল এ আলোচনার মূল বিষয়বস্তু। কয়েক দিনের মধ্যে এ নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হওয়ার কথা।
ইরানকে কখনো পারমাণবিক অস্ত্রের অধিকারী হতে দেওয়া হবে না। দেশটি বিশ্বের ‘এক নম্বর সন্ত্রাসের পৃষ্ঠপোষক’।ডোনাল্ড ট্রাম্প, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট
ইরান নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আবার আলোচনা শুরু করা কূটনীতিকদের জন্য বড় সমস্যা। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে দেওয়া ভাষণে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, ইরানকে কখনো পারমাণবিক অস্ত্রের অধিকারী হতে দেওয়া হবে না। তিনি তেহরানকে ‘বিশ্বের এক নম্বর সন্ত্রাসের পৃষ্ঠপোষক’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন।
আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ইতিমধ্যেই আলোচনার ফলাফল ঘোষণা করেছে। ফলাফল হবে, তেহরানের পারমাণবিক কার্যক্রম ও ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কর্মসূচি বন্ধ করা। এটি কোনো আলোচনা নয়। এটি একটি নির্দেশ, একটি আরোপ করা বিষয়।
ইরানকে শাস্তিমূলক পদক্ষেপ থেকে অব্যাহতি দেওয়ার মেয়াদ বৃদ্ধির এক প্রস্তাব জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ প্রত্যাখ্যান করার কয়েক দিন পর খামেনি এ মন্তব্য করলেন।
ইরানকে শাস্তিমূলক পদক্ষেপ থেকে অব্যাহতি দেওয়ার মেয়াদ বৃদ্ধির এক প্রস্তাব জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ প্রত্যাখ্যান করার কয়েক দিন পর খামেনি এ মন্তব্য করলেন।
ই থ্রি তেহরানকে তার পারমাণবিক প্রতিশ্রুতি লঙ্ঘনের অভিযোগ করেছে। এর মধ্যে রয়েছে ২০১৫ সালের পারমাণবিক চুক্তির তুলনায় ৪০ গুণের বেশি ইউরেনিয়াম মজুত করা। ট্রাম্প ২০১৮ সালে একতরফাভাবে ওই চুক্তি থেকে সরে আসেন।
যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বশক্তিগুলোর সঙ্গে সই করা ‘দ্য জয়েন্ট কম্প্রিহেনসিভ প্ল্যান অব অ্যাকশন (জেসিপিওএ)’ চুক্তির মাধ্যমে দেশটির পারমাণবিক আকাঙ্ক্ষা সীমিত করার বিনিময়ে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয়েছিল।
যুক্তরাষ্ট্র ইতিমধ্যেই আলোচনার ফলাফল ঘোষণা করেছে। ফলাফল হবে, তেহরানের পারমাণবিক কার্যক্রম ও ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কর্মসূচি বন্ধ করা। এটি কোনো আলোচনা নয়। এটি একটি নির্দেশ, একটি আরোপ করা বিষয়।আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি, ইরানের সর্বোচ্চ নেতা
কিন্তু ট্রাম্প ২০১৮ সালে তাঁর ‘সর্বোচ্চ চাপ’ প্রয়োগের নীতি অনুযায়ী ইরানের বিরুদ্ধে ওই নিষেধাজ্ঞা আবার আরোপ করেন। পরবর্তী সময়ে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসন প্রাথমিকভাবে ট্রাম্পের নীতির সমালোচনা করলেও সেটি অব্যাহত রেখেছে।
ইউরোপীয় দেশগুলো জানিয়েছে, যদি ইরান যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সরাসরি আলোচনায় ফেরে, জাতিসংঘের নিরীক্ষকেরা তার পারমাণবিক স্থাপনায় প্রবেশ করতে পারেন এবং তেহরান ৪০০ কেজির (৮৮০ পাউন্ড) বেশি উচ্চমাত্রায় সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের হিসাব দেয়, তবে শাস্তি থেকে অব্যাহতির সময়সীমা বাড়ানো সম্ভব।
গতকাল সাধারণ অধিবেশনের ফাঁকে এ বিষয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে খুব বেশি অগ্রগতি হয়নি। জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইয়োহান ওয়াডেফুল বলেন, এটি বিশেষ ফলপ্রসূ হয়নি।
ইউরোপীয় দেশগুলো জানিয়েছে, যদি ইরান যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সরাসরি আলোচনায় ফেরে, জাতিসংঘের নিরীক্ষকেরা তার পারমাণবিক স্থাপনায় প্রবেশ করতে পারেন এবং তেহরান ৪০০ কেজির (৮৮০ পাউন্ড) বেশি উচ্চমাত্রায় সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের হিসাব দেয়, তবে শাস্তি থেকে অব্যাহতির সময়সীমা বাড়ানো সম্ভব।
শাস্তি এড়াতে ইউরোপীয় কূটনৈতিক দল ইরানের পক্ষ থেকে কিছু বাস্তব পদক্ষেপ দেখতে চায়। ইইউ পররাষ্ট্রনীতিবিষয়ক প্রধান কায়া কালাস বলেন, ‘কূটনৈতিক প্রচেষ্টার সুযোগ আছে। সময়সীমা চলছে, দেখা যাক। ইরানের পক্ষ থেকেও কিছু বাস্তব কর্মকাণ্ড দেখতে হবে।’