ইরানে অভ্যুত্থানের পর খোমেনি হয়ে ওঠেন সবচেয়ে প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব
ইরানে অভ্যুত্থানের পর খোমেনি হয়ে ওঠেন সবচেয়ে প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব

ফিরে দেখা

নির্বাসনে থেকেও কীভাবে ইরানে বিপ্লব সফল করলেন রুহুল্লাহ খোমেনি

সৈয়দ রুহুল্লাহ মুসাবি খোমেনি (১৯০২–১৯৮৯) ছিলেন বিশ শতকের অন্যতম প্রভাবশালী ইসলামি চিন্তাবিদ, রাজনীতিক ও ধর্মীয় নেতা। তিনি ইরানের ইসলামি বিপ্লবের নেতা এবং ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের প্রতিষ্ঠাতা। তাঁর জীবন ও চিন্তাধারা শুধু ইরান নয়, গোটা মুসলিম বিশ্বে গভীর প্রভাব ফেলেছে।

খোমেনি ১৯০২ সালে ইরানের খোমেন শহরে জন্মগ্রহণ করেন একটি ধর্মপরায়ণ শিয়া পরিবারে। ছোটবেলায় বাবাকে হারানোর পর তিনি কোম শহরে গিয়ে ইসলামি শিক্ষায় মনোনিবেশ করেন। ফিকহ (ইসলামি আইন), দর্শন ও আধ্যাত্মিকতার গভীর অধ্যয়নের মধ্য দিয়ে তিনি একজন মুজতাহিদ বা স্বাধীন ধর্মীয় ব্যাখ্যাদানের যোগ্য আলেম হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন।

১৯৬০-এর দশকে সৈয়দ রুহুল্লাহ ইরানের রাজতন্ত্র, বিশেষত মোহাম্মদ রেজা শাহ পহলভির পশ্চিমঘেঁষা ও স্বৈরাচারী শাসনের বিরুদ্ধে সোচ্চার হন। ১৯৬৩ সালের ৫ জুন তাঁর নেতৃত্বে ছড়িয়ে পড়ে বিক্ষোভ, যা ‘১৫ খরদাদ বিদ্রোহ’ নামে পরিচিত। সরকারের বিরুদ্ধে এই অবস্থানের কারণে তাঁকে গ্রেপ্তার ও পরে নির্বাসনে পাঠানো হয়।

১৯৬৪ থেকে ১৯৭৯ সাল পর্যন্ত খোমেনি তুরস্ক, ইরাক ও পরে ফ্রান্সে নির্বাসনে ছিলেন। এই সময়ে তিনি ‘বিলায়াত-এ-ফকীহ’ (ধার্মিক শাসকের অভিভাবকত্ব) মতবাদ প্রকাশ করেন, যেখানে বলা হয় একজন যোগ্য আলেম রাষ্ট্র পরিচালনার অধিকার রাখেন। এ ধারণা পরে ইরানের ইসলামি প্রজাতন্ত্রের ভিত্তি হয়ে ওঠে।

১৯৭৯ সালে বিপ্লব চূড়ান্ত রূপ নেয় এবং শাহ দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হন। খোমেনি স্বদেশে ফিরে এসে বিপ্লবের নেতৃত্ব দেন এবং গণভোটের মাধ্যমে ইরানকে ইসলামি প্রজাতন্ত্র ঘোষণা করেন। এরপর তিনি ‘সর্বোচ্চ নেতা’ হিসেবে রাষ্ট্রের সর্বময় ক্ষমতা ধারণ করেন। তাঁর নেতৃত্বে ইরান ইসলামি আইনের ভিত্তিতে পরিচালিত হয় এবং পশ্চিমা আধিপত্যের বিরুদ্ধে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে।

খোমেনির প্রভাব বহুস্তরীয়। একদিকে তিনি একজন ধর্মীয় সংস্কারক, যিনি আধুনিক জাতিরাষ্ট্র ও ইসলামি শাসনব্যবস্থাকে একত্র করতে চেয়েছেন। অন্যদিকে তিনি ছিলেন উপনিবেশবাদ, সাম্রাজ্যবাদ এবং মার্কিন ও ইসরায়েলি প্রভাববিরোধী আন্দোলনের প্রতীক। তাঁর ভাষণ ও লেখাগুলো বিশ্বের বহু ইসলামি আন্দোলনের অনুপ্রেরণা হয়ে ওঠে।

খোমেনি ১৯৮৯ সালে মারা যান। তাঁর জানাজায় অংশ নেয় প্রায় এক কোটি মানুষ—এটা ছিল ইতিহাসের বৃহত্তম জানাজাগুলোর একটি। তাঁর জীবন ও মৃত্যু ঘিরে ইরানে গড়ে উঠেছে এক বিশাল প্রতীকের রাজনীতি। সেই রাজনীতি আজও ইরানের ভবিষ্যৎকে নির্ধারিত করে। তিনি একদিকে পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদবিরোধী প্রতিরোধের প্রতীক, অন্যদিকে এক স্বপ্নভঙ্গের কেন্দ্র।

আয়াতুল্লাহ রুহুল্লাহ খোমেনির পোস্টার নিয়ে ইরানে শাহবিরোধী বিশাল বিক্ষোভ

১৯৭৯ সালে ইরানে যে বিপ্লব সংঘটিত হয়েছিল, সেটি শুধু ইসলামিক আন্দোলন ছিল না। ছিল এক বহুমাত্রিক গণ–অভ্যুত্থান। সেখানে মেহনতি শ্রমিক, কৃষক, ছাত্র, নারীবাদী ও বামপন্থী নানা শক্তি মিলেছিল রাজতন্ত্র ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে। এবং সেই সময় ইরানে তাদের সংখ্যা ও প্রভাব ছিল বিপুল। ফলে ইরান বিপ্লব শেষে যে রূপ নেয়, তা অনেকের কাছেই ছিল হতাশাজনক।

একটি জাগরণের স্বপ্ন

১৯৭০-এর দশকে ইরান ছিল মার্কিনপন্থী এক স্বৈরতান্ত্রিক রাজতন্ত্র। সম্রাট ছিলেন শাহ মোহাম্মদ রেজা পাহলভির শাসনে। ইরানে ছিল বিপুল তেলসম্পদ। তবুও দেশের সাধারণ মানুষ ছিল দারিদ্র্যপীড়িত ও রাজনৈতিকভাবে অবদমিত। গ্রামাঞ্চলের কৃষক ও শহরের শ্রমজীবীদের অবস্থা ছিল মর্মান্তিক।

শাহ ‘সাদা বিপ্লব’ নামে পরিচিত তথাকথিত আধুনিকায়ন প্রকল্প নিয়েছিলেন। সেই প্রকল্প মূলত ভূস্বামীদের ক্ষমতা আরও বাড়িয়েছিল। সেই সঙ্গে একপ্রকার পুঁজিবাদের আওতায় এনে কৃষকেরা হয়েছিলেন আরও নিঃস্ব। এর বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়ায় ১৯৭৮-৭৯ সালে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ রাস্তায় নামেন। ধর্মীয় নেতাদের পাশাপাশি বামপন্থী সংগঠন, বিশেষ করে তুদেহ পার্টি ও খালক ওয়ারি বিপ্লবের অন্যতম চালিকা শক্তি ছিল।

শ্রমিকশ্রেণির সক্রিয় অংশগ্রহণ বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। বিপ্লবের এক পর্যায়ে দেশজুড়ে শ্রমিক ধর্মঘট শুরু হয়। দেশের অর্থনীতির প্রাণ তেলক্ষেত্রের কাজ বন্ধ হয়ে যায়। কারখানাগুলোতে শ্রমিকেরা শোরার (শ্রমিক পরিষদ) মাধ্যমে স্বশাসন কায়েম করে। এটা ছিল একধরনের শ্রমিক-জনতান্ত্রিক কল্পনার বাস্তবায়ন। এই শোরা ছিল রাশিয়ার সোভিয়েত আদলের। রুশ বিপ্লবের পর এত বিশাল পরিসরে সাধারণ মানুষের আত্মনিয়ন্ত্রণ প্রচেষ্টা আর দেখা যায়নি।

খোমেনির উত্থান

এই সময়েই প্যারিসে নির্বাসিত আয়াতুল্লাহ রুহুল্লাহ খোমেনির নাম মানুষের মুখে মুখে ফিরতে থাকে। ধর্মীয় ভাষায় উচ্চারিত তাঁর রাজনৈতিক বার্তাগুলো সাধারণ মানুষের কাছে বোধগম্য এবং প্রভাবশালী হয়ে ওঠে। তিনি পশ্চিমা আধিপত্য, শাহের দমননীতি ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলেন। কিন্তু তিনি কখনো খোলাখুলি একটি ইসলামি প্রজাতন্ত্রের কৌশলগত কাঠামো তুলে ধরেননি। তাঁর বয়ানে বিপ্লব ছিল ‘স্রষ্টাভিত্তিক ইনসাফের পুনঃপ্রতিষ্ঠা’।

ফরাসি দার্শনিক মিশেল ফুকো এই সময় ইরানে এসে বিপ্লবী পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেন। পশ্চিমা জগতে বিপ্লব মানে ছিল মার্ক্সবাদ, শ্রেণি সংগ্রাম, পুঁজিবিরোধী তত্ত্ব। কিন্তু ফুকো খোমেনির নেতৃত্বে উদীয়মান ধর্মীয় বিপ্লবকে একধরনের ‘আত্মিক রাজনৈতিক জাগরণ’ বলে মনে করেছিলেন। তাঁর ধারণা ছিল, পশ্চিমের ক্ষমতা-কাঠামোর বাইরে দাঁড়িয়ে ইরান একটি নতুন প্রতিরোধের ভাষা তৈরি করছে। সেই ভাষা আত্মা, স্রষ্টা, সমাজ ও ন্যায়বিচারকে একসূত্রে বেঁধে দেয়।

কিন্তু বিপ্লবের কয়েক বছরের মধ্যে যখন ইসলামিক প্রজাতন্ত্র গড়ে ওঠে, নারী প্রশ্ন ভিন্নভাবে দেখা হয়, বামপন্থীদের গণহারে গ্রেপ্তার ও হত্যা শুরু হয়—তখন ফুকো তাঁর অবস্থান নিয়ে নীরব থাকেন। পরে তিনি ব্যক্তিগতভাবে স্বীকার করেন, তিনি পরিস্থিতির গভীরতা বোঝেননি। ফুকো তখনো ধর্ম ও মুক্তির সংমিশ্রণের বাস্তবতা বুঝে উঠতে পারেননি। অবশ্য এখনো তা অনেকেই উপলব্ধি করতে পারেননি।

ইরানে বিপ্লব সফল হয়েছে। শাহ পালিয়েছেন। ফ্রান্সের প্যারিসে নিজের বাসভবন থেকে বের হয়েছেন খোমেনি। গন্তব্য তেহরান— ৩১ জানুয়ারি, ১৯৭৯

খোমেনি কেন সফল হয়েছিলেন

খোমেনি কেন সফল হয়েছিলেন—এই প্রশ্নটির উত্তর খুঁজতে হলে আমাদের দেখতে হবে তাঁর রাজনৈতিক দূরদৃষ্টি, সময়ের বাস্তবতা, সমাজের অন্দরে জমে থাকা ক্ষোভ এবং ধর্মীয় ভাষার শক্তিকে কীভাবে তিনি কাজে লাগিয়েছিলেন। তাঁর সাফল্য কেবল ব্যক্তিগত ক্যারিশমার কারণে নয়, বরং একটি সমাজব্যবস্থার ভেতর জমে থাকা গভীর অস্থিরতা ও আত্মপরিচয়ের সংকটের মধ্য দিয়ে এসেছে।

খোমেনির সবচেয়ে বড় কৌশল ছিল—ধর্মকে নিছক ব্যক্তিগত আচারের জায়গা থেকে টেনে এনে রাষ্ট্রীয় ও রাজনৈতিক শক্তিতে রূপান্তরিত করা। তিনি ইসলামের ভাষায় এমন এক ন্যায়বিচারপূর্ণ সমাজের ভাবনা নির্মাণ করেছিলেন, যেখানে ধনী-গরিবের ব্যবধান থাকবে না, দুর্নীতিবাজ আমলারা থাকবে না এবং সমাজ হবে ধর্মভিত্তিক ন্যায়পরায়ণ। তাঁর বক্তৃতা ও লেখায় বারবার ‘মোস্তাজাফিন বা নিপীড়িতদের পক্ষে কথা এসেছে। এই আখ্যান ইরানের দরিদ্র, গ্রামীণ, প্রান্তে বাস করা মানুষদের কাছে আবেদন রেখেছিল।

খোমেনির সাফল্যের পেছনে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক ছিল তাঁর মোর্চা গঠনের কৌশল। ১৯৭০-এর দশকে ইরানে ইসলামপন্থী, বামপন্থী, জাতীয়তাবাদী, শ্রমিক, ছাত্র ও পেশাজীবী—সবাই–ই শাহবিরোধী ছিল, কিন্তু তাদের কোনো ঐক্য ছিল না। খোমেনি এমন একজন ব্যক্তিত্ব হয়ে উঠেছিলেন, যিনি সবাইকে এক কেন্দ্রে টানতে পেরেছিলেন। যদিও এই ঐক্য ছিল সাময়িক এবং দ্ব্যর্থতাপূর্ণ। কিন্তু শাহবিরোধী শক্তির কাছে তিনি হয়ে উঠেছিলেন সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য প্রতীক। তাঁর নেতৃত্বে বিপ্লবের একটি মৌলিক আদর্শিক কাঠামো দাঁড়ায়, যেখানে ‘শাহবিরোধিতা’ এবং ‘ইসলামিক ন্যায়ের রাষ্ট্র’ এক হয়ে যায়।

খোমেনি যখন ইরান ছেড়ে ইরাক, পরে প্যারিসে নির্বাসিত অবস্থায় ছিলেন, তখনো তিনি অত্যন্ত সংগঠিতভাবে তাঁর অনুসারীদের মাধ্যমে প্রচার চালিয়েছেন। ক্যাসেট টেপ, লিফলেট, হুজরা বা ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ব্যবহার করে তিনি একটি শক্তিশালী যোগাযোগব্যবস্থা গড়ে তোলেন। এই প্রযুক্তিগত কৌশল ছিল বিপ্লবের নতুন দিগন্ত। তাঁর বক্তৃতা ও বার্তা ক্যাসেট টেপের মাধ্যমে দেশের গ্রামেগঞ্জে, মসজিদে মসজিদে ছড়িয়ে পড়ে—একটি অদৃশ্য কিন্তু সুসংগঠিত বিপ্লবী আন্দোলন গড়ে ওঠে।

খোমেনি তাঁর বয়ানে আবেগ, শোক ও নৈতিক উচ্চতার এক অদ্ভুত মিশ্রণ আনতে পেরেছিলেন। তিনি ‘কারবালা’ বা ‘হুসাইনি আত্মত্যাগ’-এর বয়ানকে রাজনীতির ভাষায় রূপ দেন। তিনি বলতেন, শাহের বিরুদ্ধে সংগ্রাম আসলে হকের পক্ষে বাতিলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ। এই তাত্ত্বিক কাঠামো ইরানিদের ঐতিহাসিক শোক ও আত্মপরিচয়ের বোধের সঙ্গে মিলে যায়। ধর্মীয় আবেগকে রাজনৈতিক লড়াইয়ের ভাষায় অনুবাদ করতে তাঁর জুড়ি ছিল না।

খোমেনি নিজে একটি প্রতীকে রূপান্তরিত হয়েছিলেন। তিনি ছিলেন একাধারে গভীর ধর্মীয় পণ্ডিত, অথচ রাজনৈতিকভাবে কৌশলী, ধৈর্যশীল, নির্লোভ। এই ভাবমূর্তিই তাঁকে সাধারণ নেতার বাইরে তুলে দেয়। শাহ যখন বিলাসিতায় আকণ্ঠ ডুবে, তখন খোমেনির জীবনের সাদাসিধে ভঙ্গিমা মানুষের মধ্যে গভীর আস্থা জাগায়।

তেহরানে উড়োজাহাজ থেকে নামছেন আয়াতুল্লাহ রুহুল্লাহ খোমেনি। ১ ফেব্রুয়ারি, ১৯৭৯

শ্রমিক, কৃষক ও নারীর স্বপ্নভঙ্গ

ইসলামিক প্রজাতন্ত্র ঘোষণার পর বিপ্লবী চেতনার নানা অংশ ধ্বংস করা হয়। শ্রমিকদের স্বশাসিত শোরাগুলো ভেঙে ফেলা হয়। ধর্মীয় নজরদারির আওতায় নিষিদ্ধ হয় শ্রমিক ইউনিয়ন। কৃষকদের স্বপ্ন ছিল জমির মালিকানা। কিন্তু ইসলামি শাসনে ‘ওয়াক্‌ফ’ ও ধর্মীয় ট্রাস্টের নামে জমি আবার নতুন একধরনের শোষণ কাঠামোয় ফিরে যায়।

নারীদের অবস্থা ছিল সবচেয়ে করুণ। যারা বিপ্লবে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়েছে, তারাই ‘হিজাববিরোধী’, ‘অবাধ্য’ ইত্যাদি নানা অপবাদে নিপীড়নের শিকার হয়। নারীদের শিক্ষা, পোশাক, কর্মসংস্থান—সব ক্ষেত্রেই কঠোর বিধিনিষেধ চাপিয়ে দেওয়া হয়।

তুদেহ পার্টি প্রথম দিকে খোমেনির সঙ্গে সমঝোতার চেষ্টা করেছিল। তারা বিশ্বাস করেছিল ইসলামিক বিপ্লবের ভেতর দিয়েই হয়তো সমাজতান্ত্রিক সম্ভাবনা তৈরি হবে। কিন্তু ১৯৮৩ সালের মধ্যে তুদেহ নিষিদ্ধ হয়, হাজারো বামপন্থীকে কারারুদ্ধ করা হয়, অনেককে প্রকাশ্যে হত্যা করা হয়। ১৯৮৮ সালে কারাগারে ৪০০০-৫০০০ রাজনৈতিক বন্দীকে একসঙ্গে ফাঁসি দেওয়া হয়।

খোমেনি জীবদ্দশায় একদলীয় ইসলামি তত্ত্বের কাঠামো নির্মাণ করেছিলেন—ভিলায়েতে ফকিহ অর্থাৎ শাসক আলেমের আধিপত্য তত্ত্বের মাধ্যমে। এই কাঠামো আজও ইরানের রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করে। তিনি ধর্মকে শুধু ব্যক্তিগত অনুশাসনের মধ্যে রাখেননি, বরং তা দিয়ে রাষ্ট্র, আইন, বিচার ও নৈতিকতার নিয়ন্ত্রণ কায়েম করেছিলেন।

তাঁর এই উত্তরাধিকার একদিকে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে স্থায়ী প্রতিরোধের প্রতীক। তবে অন্যদিকে দেশের ভেতরে ভিন্ন চিন্তার, নারী স্বাধীনতার, শ্রমিক অধিকারের প্রশ্নে রাষ্ট্র হয়েছে কঠোর।

বিপ্লব কি পথ হারিয়েছিল

প্রতিটি বিপ্লবই একটি শূন্যতার ওপর গড়ে ওঠে। একটা পুরোনো ব্যবস্থার পতনের পর নতুন ব্যবস্থার ভবিষ্যৎ থাকে এক অনিশ্চিত ভবিষ্যতের মাঝে লুকিয়ে। ১৯৭৯ সালের বিপ্লবে সেই শূন্যতা পূরণ করেছিল ধর্মীয় বিশ্বাসের শক্তি। যদিও সেই শক্তি শেষ পর্যন্ত একনায়কতন্ত্রে রূপ নিয়েছে কি না, তা নিয়ে অনেকের প্রশ্ন আছে। তবে খোমেনি সেই বিশ্বাসের প্রতীক হয়ে উঠেছিলেন। তাঁর মৃত্যুদিনে তাঁকে মনে করাটা এক প্রশ্নকে সামনে আনার সুযোগ দেয়। ইরানের জনগণ যে গণতান্ত্রিক, শ্রমিকবান্ধব, নারীবান্ধব ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখেছিল—সেটি আসলে ঠিক কোন পথে অর্জন সম্ভব? সেই আশা এখন খোদ ইরানে কি এখনো জীবিত?

• জাভেদ হুসেন প্রথম আলোর সম্পাদকীয় সহকারী