আজ ২৯ মে। সকাল থেকেই একটানা বৃষ্টি। সকালে ঘর থেকে বের হওয়ার সময় আবহাওয়ার পূর্বাভাস দেখে কিছুটা প্রস্তুতি নিয়েই বের হয়েছিলাম। তবু অফিসে পৌঁছাতে কাকভেজা হতে হলো রেইনকোট থাকা সত্ত্বেও। সকালটা যতটা মনোরম ছিল, বিকেল গড়িয়ে সেই অনুভূতি যেন একেবারেই উধাও।
সন্ধ্যা ৬টায় অফিস থেকে বের হয়ে স্ত্রীকে ফোন করলাম, সে–ও অফিসে আটকে আছে। ঢাকার মতো ব্যস্ত শহরে, বৃষ্টির দিনে গণপরিবহনে ভরসা করার মতো মানসিক প্রস্তুতি সবার থাকে না। তাই রওনা দিলাম মহাখালীর দিকে।
ধানমন্ডি থেকে বিজয় সরণি হয়ে মহাখালীর পথে রওনা হতেই বৃষ্টির প্রকৃত চেহারা সামনে এল। জলের নিচে ঢাকা রাস্তা, বৃষ্টি মাথায় নিয়ে হেঁটে চলা মানুষ, আর যানজটে স্থবির শহর—সব মিলিয়ে একটি ধৈর্যের পরীক্ষা শুরু হলো। বিজয় সরণি থেকে জাহাঙ্গীর গেটের দিকে মোড় নিতে গিয়ে দেখি, এক বাইকার পানিতে পিছলে পড়ে গেছেন। পাশ দিয়ে ছুটে যাওয়া সিএনজিচালিত অটোরিকশার ছিটানো পানিতে ভিজে গেল শরীর।
মহাখালী পৌঁছে স্ত্রীকে বাইকে তুললাম। ওর হাতে দিলাম রেইনকোটের উপরের অংশটা। দুজনেই হেলমেট পরে গুগল ম্যাপে রুট দেখলাম। মহাখালী থেকে আগারগাঁও হয়ে ৬০ ফিট রোড—রীতিমতো রক্তাক্ত রুট। জ্যাম, পানি, ভাঙা রাস্তা—সব মিলিয়ে সেদিকে যাওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। অবশেষে সিদ্ধান্ত নিলাম, কালশী ও ইসিবি হয়ে ফিরব।
চেয়ারম্যানবাড়ি থেকে সৈনিক ক্লাব পর্যন্ত মনে হচ্ছিল শহরের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে ছুটছি। রাস্তার পাশে মানুষের ভিড়, বাসের জন্য লাইন, আর ক্লান্ত চেহারাগুলো একধরনের ভার তৈরি করছিল মনে। ইসিবি পর্যন্ত যেতে যেতে মনে হচ্ছিল, এই শহরে বাস করা প্রতিদিনই একেকটা যুদ্ধ।
কালশী কবরস্থানের সামনে গিয়ে দেখা গেল, রাস্তাই ডুবে আছে। উড়ালসেতু, কিন্তু সেখানে স্থির গাড়ির সারি। শেষ পর্যন্ত অলিগলি পেরিয়ে লাভ রোডের সামনে পৌঁছালাম। সেখানে দাঁড়িয়ে ছিলাম চায়ের দোকানে কয়েক মিনিট।
বৃষ্টির দিনে বাইকে বসে ভেজা শরীর নিয়ে সেই গরম চা শুধু স্বস্তি নয়, শহরের অগোছালো ছন্দের মাঝে একটুখানি বিরতি। রাত ৯টার কিছু আগে বাড়িতে পৌঁছালাম।
ভেজা জামাকাপড়, ক্লান্ত শরীর, কিন্তু মনের ভেতর ছিল একটা অনুভব—এই শহরের প্রতিদিনের জীবন আসলে একেকটা নীরব সংগ্রাম।