গতকাল ২৯ মে ২০২৫, বৃহস্পতিবার—এই দিনটা আমার জীবনের সবচেয়ে কষ্টের ও অস্থির একটি দিন ছিল। সকাল থেকেই আবহাওয়া ছিল অস্বাভাবিক। আকাশ ছিল মেঘে ঢাকা, ঠান্ডা বাতাস বইছিল। মনে হচ্ছিল, ঝড়-বৃষ্টি আসবেই। তবু আমার এক আত্মীয় অসুস্থ হওয়ায় আমাকে ধানমন্ডি থেকে উত্তরা যেতে হয়েছিল। পরিকল্পনা ছিল, সকালে বের হয়ে দুপুরের মধ্যেই ফিরে আসব। কিন্তু বাস্তবতা একেবারেই ছিল তার উল্টো।
সকাল ৯টায় রওনা দিলেও গাড়ি পাইনি। অনেক খোঁজাখুঁজি করে একটা সিএনজি অটোরিকশা পেলাম। কিন্তু বের হতেই দেখি সড়কে পানি জমে আছে। রিকশা, সিএনজি, প্রাইভেট কার—সব থেমে আছে। যানজট এতটাই ভয়াবহ ছিল যে ১৫ মিনিটের রাস্তা পাড়ি দিতে এক ঘণ্টা লেগে যায়। এর মধ্যেই শুরু হয় বৃষ্টি। প্রথমে হালকা, পরে তা মুষলধারে শুরু হয়।
আমি যখন কলাবাগান পেরিয়ে র্যাব অফিসের কাছে আসি, তখন দেখি একটি অ্যাম্বুলেন্স আটকে আছে জ্যামে। সাইরেন বাজছে, কিন্তু গাড়িগুলো সরতে পারছে না। এই দৃশ্য দেখে আমি কষ্ট পেয়েছি। একটি অসুস্থ মানুষ যখন অ্যাম্বুলেন্সে, তখন তার জন্য সময়ের মূল্য কতটা, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
বৃষ্টির পানি এতটাই জমেছে যে অনেক জায়গায় রিকশাও চলতে পারছে না। বাধ্য হয়ে সিএনজি থেকে নেমে রিকশায় উঠি। কিছুদূর যাওয়ার পর দেখি রিকশা আর চলতে পারছে না, তখন হাঁটা শুরু করি। ভিজে যাচ্ছি, শরীর কাঁপছে, হাতে ফোন, পকেটে ভিজে যাচ্ছে টাকা—একটা অসহায় অবস্থা।
রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে অনেক ধরনের মানুষের মুখোমুখি হয়েছি। কেউ অফিস থেকে ফিরছে, কেউ আবার ফ্লাইট ধরতে ব্যস্ত, কেউ ছোট শিশুকে কোলে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে বাসের জন্য। সবাই যেন একটা যুদ্ধ করছে এই দুর্যোগের মধ্যে।
উত্তরায় যখন পৌঁছাই তখন বিকেল পেরিয়ে সন্ধ্যা। আত্মীয়ের বাসায় গিয়ে দেখি, তার অবস্থাও ভালো না। পাশে বসে তার খোঁজ নিতে নিতে মনে হচ্ছিল, এত কষ্ট করে আসাটা সার্থক হয়েছে, কিন্তু শহরের এই দুরবস্থা নিয়ে কিছু একটা করা দরকার।
এই অভিজ্ঞতা আমাকে শেখাল, আমাদের নগর ব্যবস্থাপনায় এখনো অনেক ঘাটতি আছে। শুধু উন্নত ভবন বানালেই হয় না, বৃষ্টি হলে পানি জমে না এমন রাস্তা, সঠিক ড্রেনেজ, ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা—সবকিছু উন্নত করা জরুরি।
২৯ মে ২০২৫ আমার জীবনে একটা বড় শিক্ষা হয়ে থাকবে। এমন দিনে মানুষ কতটা অসহায় হয়, তা আমি নিজের চোখে দেখেছি এবং শরীর দিয়ে অনুভব করেছি।