তাঁদের ট্রমা এখনো কাটেনি

বৃষ্টি এবং সেইসঙ্গে সৃষ্টি হওয়া যানজটে গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীবাসীর দুর্ভোগ। মতিঝিল এলাকা থেকে তোলাছবি: দীপু মালাকার

ধানমন্ডিতে এক বন্ধুর বাসায় নিমন্ত্রণ ছিল। যানজট পেরিয়ে যার যার মতো পৌঁছে গেলাম। দাওয়াত শেষ করে রাত ১০টায় সবাই বেরিয়ে পড়লাম বাসার উদ্দেশে। গতকাল বৃহস্পতিবারের (২৯ মে ২০২৫) ঘটনা। বৃহস্পতিবারের রাত বলে সকাল থেকেই প্রস্তুত ছিলাম, রাত জেগে ভালো সিনেমা দেখব এবং এরপর আয়েশ করে ঘুমাব। আর অনেক দেরিতে ঘুম থেকে উঠব শুক্রবার।

কিন্তু বিধিবাম। বন্ধুর বাড়ি থেকে বেরিয়ে যানজট ও পানিতে চার থেকে পাঁচ ঘণ্টা আটকে রইলেন উত্তরাগামী এক বান্ধবী। দিবাগত রাত আড়াইটায় খবর পেলাম, অবশেষে তিনি বাড়ি পৌঁছেছেন।

আরেকজন উত্তরাযাত্রী এক্সপ্রেসওয়েতে ভিড় দেখে মিরপুর হয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে ফেঁসে গেলেন।  রাত তিনটায় কাজীপাড়ায় পানির মধ্যে গাড়ি রেখে উল্টো পথে গিয়ে সিএনজি অটোরিকশা নিয়ে একাই উত্তরার উদ্দেশে রওনা হলেন এই নারী।

আরও পড়ুন

তখনো কাজীপাড়ায় শত শত যানবাহন দাঁড়ানো ছিল। পানির জন্য কেউ নড়তে পারছে না। গাড়ি গরম হয়ে যাওয়ায় স্টার্ট বন্ধ করে বসে থাকতে হয়েছিল অধিকাংশের। ওই যানজটে দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে, রাস্তার বিভিন্ন পথচারী দেখে আমার বন্ধুদের ভয় হচ্ছিল, এখানে আবার কোনো ছিনতাইকারী নেই তো!

এরই মধ্যে বিমানবন্দরে ল্যান্ড করেছে আমার পরিচিত আরেকজন। তিনি এই দুর্গতির খবর পেয়ে এবং আমার সেই উত্তরাগামী বন্ধুকে সিএনজি থেকে রাত সোয়া তিনটায় গাড়িতে তুলে নিয়ে গাড়ি ঘুরিয়ে উত্তরায় পৌঁছে দিতে গেছেন।

রাত ৩টা ৪০ মিনিটের দিকে খবর পেলাম আমার বন্ধুর গাড়িসহ সব গাড়ি সেনাবাহিনীর সদস্যরা এসে কাজীপাড়া থেকে একটা করে পার করে দিয়েছেন। ভোর চারটায় যে যার গন্তব্যে যাচ্ছেন। আশা করি, ভোর হওয়ার আগেই তাঁরা পৌঁছে যাবেন নিজ বাড়িতে।

এদিকে আমার যে বন্ধু রাত আড়াইটায় উত্তরায় পৌঁছেছিলেন, তিনি বাড়ির কাছাকাছি গিয়ে দেখলেন, সেখানে আরেকটি গাড়িতে ছিনতাই হচ্ছে। পরে গাড়ি ঘুরিয়ে অন্য পথে বাসায় যেতে হলো।

আরও পড়ুন

আর আমি টেনশনে সারা রাত জেগে আর ফোনাফোনি করে কাটালাম অবিশ্বাস্য এক দুর্যোগের রাত।

আর আমি?

বিকেল পাঁচটায় শান্তিনগরের অফিস থেকে বের হয়ে আড়াই ঘণ্টা পথে আটকে থেকে সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় ধানমন্ডি পৌঁছাই। এর মধ্যে আমাদের সবার জন্য আরেকটি বড় সমস্যা ছিল টয়লেটের চাপ। রাস্তায় তিন থেকে চার ঘণ্টা যানজটে বসে থেকে একজন নারীর পক্ষে টয়লেট আটকে রাখা ভয়ংকর কষ্টের। নাগরিক জীবনে এ আরেক ট্রমা, যা আমরা গতকাল রাতে সবাই ভোগ করেছি।

আমার বন্ধুদের বললাম, ‘তোমরা কালকের বৃষ্টি ও অন্ধকার যানজটের ভয়াবহ চার থেকে পাঁচ ঘণ্টার যাত্রা আর বিড়ম্বনা নিয়ে লেখো।’ তাঁরা বললেন, ‘এখনো ট্রমা আর ক্লান্তি যায়নি। ভয়ে শিউরে উঠছি। ঘুমে শরীর ভেঙে আসছে। ওই ট্রমার কথা আর মনেও করতে চাই না।’

(প্রিয় পাঠক, এ বিষয়ে আপনার অভিজ্ঞতা লিখে ফেলুন এখনই। পাঠিয়ে দিন [email protected]–এ)

আরও পড়ুন