হামলায় সন্তান আহত, ফেসবুক লাইভে কাঁদলেন আওয়ামী লীগ নেতা
রাজশাহী-৪ (বাগমারা) আসনের নৌকার কর্মী হামিরকুৎসা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খোরশেদ আলমের শিশুসন্তানের ওপর হামলা হয়েছে। স্বতন্ত্র প্রার্থী ও বর্তমান সংসদ সদস্য এনামুল হকের (কাঁচি প্রতীক) কর্মীরা এই হামলা করেন বলে অভিযোগ করেছেন খোরশেদ। শিশুটিকে বাগমারা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়ার পর সেখান থেকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে। মেয়ের অবস্থা দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন খোরশেদ। ফেসবুক লাইভে এসে কান্নাজড়িত কণ্ঠে ঘটনার বর্ণনা দেন তিনি।
রাজশাহী নেওয়ার পথে চলন্ত অ্যাম্বুলেন্সে লাইভে খোরশেদ আলম বলেন, ‘দীর্ঘদিন এমপির (স্বতন্ত্র প্রার্থী এনামুল) সঙ্গে থেকেছি। নৌকার পক্ষে শপথ করিয়ে নেওয়ার পরও কেন সে বিদ্রোহী ভোট করে আমার নিরীহ ছাওয়ালকে (মেরেছে)? নৌকার ভোট করার কারণে আমার মেয়েকে এভাবে মেরে অজ্ঞান করেছে।’
এনামুল হক রাজশাহী-৪ আসনের আওয়ামী লীগ দলীয় টানা তিনবারের সংসদ সদস্য। এবারের নির্বাচনে অংশ নিতে তিনি দলীয় মনোনয়ন চেয়েও পাননি। দলের মনোনয়ন পেয়েছেন তাহেরপুর পৌরসভার মেয়র এবং আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপকমিটির বন ও পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ।
আজ সোমবার বিকেলে হামলায় আহত হয় খোরশেদ আলমের শিশুকন্যা হাসি খাতুন (১২)। সে হামিরকুৎসা উচ্চবিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, বিকেলে কাঁচি প্রতীকের কর্মী উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য সাফিনুন্নাহার ১০-১২ জন নারী কর্মী নিয়ে হামিরকুৎসা গ্রামে গণসংযোগ করছিলেন। তাঁরা ওই গ্রামে খোরশেদ আলমের বাড়িতে যান। এ সময় কাঁচি প্রতীকে খোরশেদের পরিবারের সদস্যরা সরাসরি অসম্মতি জানান। নৌকার প্রার্থীকে ভোট দেবেন বলে জানালে কাঁচির নারী কর্মীরা ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন এবং বাগ্বিতণ্ডায় জড়ান। এ সময় কাঁচির এক নারী কর্মী ভিডিও ধারণ করছিলেন। এ সময় সেখানে থাকা শিশু হাসি খাতুন বারণ করলে কাঁচির নারী কর্মীরা শিশুকে চড়থাপ্পড় মারেন। এতে শিশুটি অচেতন হয়ে পড়ে। এ ঘটনা জানার পর প্রতিবেশীরা ছুটে এসে শিশুকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠায়। এ সময় এলাকার নারীর সংঘবদ্ধ হয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থীর কর্মীদের ধাওয়া দিলে তাঁরা সটকে পড়েন।
বাগমারা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে শিশু হাসিকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার পর রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। এ সময় মেয়ের অবস্থা দেখে কান্নায় ভেঙে পড়ে ফেসবুক লাইভে ঘটনার বর্ণনা দেন বাবা খোরশেদ আলম। তিনি বলেন, ‘বিকেল সাড়ে চারটার দিকে কাঁচি প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী এনামুল হকের বোন বেবি আক্তার ও তাঁর সহযোগী সাফিকুন্নাহারসহ কয়েকজন আমার বাড়ির পাশে এসে আমার অবুঝ শিশুটিকে মেরেছে। এমপি এনামুলের ১৫ বছর রাজনীতি করেছি। তিনি শিক্ষা দিয়েছেন যে, আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের বাইরে কাউকে না যেতে। সংগত কারণে এবারও আমরা নৌকার বাইরে যেতে পারিনি। তিনি (এনামুল) নৌকা প্রতীক না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ভোট করছেন। এই ক্ষোভে তিনি মহিলা সন্ত্রাসীদের দিয়ে আমার মেয়ের ওপর হামলা চালিয়েছেন।’
খোরশেদ বলেন, ‘মেয়ের ওপর হামলা হওয়ার পর হারিমকুৎসা থেকে মেয়েকে নিয়ে বাগমারা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যাই। কিন্তু সেখানে অক্সিজেন লাগিয়ে মেয়েকে নিয়ে এখন রাজশাহী মেডিকেলে যাচ্ছি। আপনারা সবাই আমার মেয়ের জন্য দোয়া করবেন।’
ভিডিওটি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। দুই-তিন ঘণ্টার মধ্যে কয়েক হাজার লোকজন দেখেছেন এবং বিচারে দাবি জানিয়েছেন। এ বিষয়ে নৌকার প্রার্থী আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘একজন শিশুর ওপর যে হামলা চালানো হয়েছে, তা বর্বরোচিত। কত বড় অমানুষ হলে এমন কাজ করতে পারেন।’ আবুল কালাম আজাদ এর বিচার দাবি করেন।
অভিযোগের বিষয়ে কথা বলার জন্য সাফিকুন্নাহারের সঙ্গে যোগাযোগ করে কথা বলা সম্ভব হয়নি। তবে তাঁর স্বামী আবদুল বারিক প্রথম আলোকে বলেন, স্বতন্ত্র প্রার্থীর ভোট চাইতে গেলে সাফিকুন্নাহারের ওপর হামলা করা হয়েছে। তিনি চিকিৎসা নিচ্ছেন।
অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে কাঁচি প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী এনামুল হক সাংবাদিকের বলেন, ‘আমার কর্মী-সমর্থকেরা কারও ওপর হামলা করছে এটি সত্য না, বরং একের পর এক স্বতন্ত্র প্রার্থীর ওপরই কালামের সমর্থকেরা হামলা চালাচ্ছে।’
বাগমারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) অরবিন্দ সরকার প্রথম আলোকে বলেন, এ বিষয়ে কেউ অভিযোগ করেনি। করলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।