উখিয়ায় দুই পক্ষের গোলাগুলিতে ২ রোহিঙ্গা নিহত, আশ্রয়শিবিরে আতঙ্ক

উখিয়া উপজেলার বালুখালী রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবির
ফাইল ছবি

কক্সবাজারের উখিয়ার দুটি আশ্রয়শিবিরে মিয়ানমারের দুই সশস্ত্র গোষ্ঠীর সন্ত্রাসীদের মধ্যে গোলাগুলিতে দুই রোহিঙ্গা নিহত হয়েছেন। আজ সোমবার ভোরে এই ঘটনায় আশ্রয়শিবিরে উত্তেজনা বিরাজ করছে। নিহত দুজন সশস্ত্র গোষ্ঠী আরকান স্যালভেশন আর্মির (আরসা) সদস্য বলে জানিয়েছেন আশ্রয়শিবিরের রোহিঙ্গা নেতারা (মাঝি)।

এদিকে হত্যাকাণ্ডের পর সন্ত্রাসীদের ধরতে আশ্রয়শিবিরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী  বাহিনীর সদস্যরা অভিযান চালালেও আজ দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত আটকের খবর পাওয়া যায়নি। গোলাগুলির ঘটনায় সাধারণ রোহিঙ্গার মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।

পুলিশ ও রোহিঙ্গা নেতারা বলেন, আজ ভোর চারটার দিকে উখিয়ার কুতুপালং আশ্রয়শিবিরের (ক্যাম্প-২ ই) বিডব্লিউ ব্লকে আরসা ও রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশনের (আরএসও) সন্ত্রাসীদের মধ্যে গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। গুলিতে ছানা উল্লাহ (২৭) নামের এক রোহিঙ্গা নিহত হন। তিনি বালুখালী আশ্রয়শিবিরের (ক্যাম্প-৭) বি-২ ব্লকের নীর আহমদের ছেলে। তিনি আরসার কুতুপালং ক্যাম্পের কমান্ডারের দায়িত্বে ছিলেন। এক বছর আগে ছানা উল্লাহর নেতৃত্বে আরসা সন্ত্রাসীরা আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) সদস্য সাইদুল ইসলামকে কুপিয়ে জখর করেছিল। আশ্রয়শিবিরে রোহিঙ্গা মাঝি আবুল কালাম, তাহের মাঝি, আমিন মাঝি হত্যা মামলার পলাতক আসামি ছানা উল্লাহ।

আরও পড়ুন

এর কিছুক্ষণ আগে ভোর সাড়ে তিনটার দিকে উখিয়ার বালুখালী আশ্রয়শিবিরে (ক্যাম্প-৭) আরএসওর সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত হন আহম্মদ হোসেন (৩৬) নামের আরেক রোহিঙ্গা যুবক। আশ্রয়শিবিরের ক্যাম্প-৫–এর এ-৮ ব্লকের আলী জোহারের চায়ের দোকানের সামনে এই হত্যাকাণ্ড ঘটে। আহম্মদ ক্যাম্প-৭–এর জি ব্লকের (সাব ব্লক-১/৩৮) বাসিন্দা আবদুল গফুরের ছেলে। তিনিও আরসা সদস্য বলে জানা গেছে।

রোহিঙ্গা নেতারা বলেন, আহম্মদ হোসেন আরসার সদস্য। পূর্বশত্রুতার জের ধরে আরএসও সন্ত্রাসীরা তাঁকে ঘর থেকে তুলে নিয়ে আলী জোহারের চায়ের দোকানে সামনে গিয়ে প্রথমে মারধর ও পরে গুলি করে পালিয়ে যায়। এ ঘটনায় আশ্রয়শিবিরে উত্তেজনা বিরাজ করছে। সাধারণ রোহিঙ্গাদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।

আরও পড়ুন

উখিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মোহাম্মদ আলী বলেন, আশ্রয়শিবিরে আধিপত্য বিস্তার ও পূর্বশত্রুতার জের ধরে মিয়ানমারের দুটি সশস্ত্র গোষ্ঠীর মধ্যে পৃথক গোলাগুলি ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। তাতে দুই রোহিঙ্গার মৃত্যু হয়েছে। নিহত রোহিঙ্গারা আরসার সদস্য বলে জানা গেছে। সন্ত্রাসীদের ধরতে আশ্রয়শিবিরে অভিযান চালাচ্ছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

নিহত আহম্মদ হোসেনের সুরতহাল প্রতিবেদন প্রস্তুত করেন উখিয়া থানার উপপরিদর্শক (এসআই) এ বি এম তারেক হোসেন। তিনি বলেন, নিহত ব্যক্তির শরীরে একাধিক গুলির চিহ্ন রয়েছে। আশ্রয়শিবিরে পুলিশের টহল বাড়ানো হয়েছে। তবে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় কাউকে আটক করা সম্ভব হয়নি। ময়নাতদন্তের জন্য লাশ কক্সবাজার সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে।

নিহত ছানা উল্লাহর সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করেন উখিয়া থানার এসআই কাউছার হামিদ। তিনি বলেন, গুলিতেই ছানা উল্লাহর মৃত্যু হয়েছে। তাঁকে আশ্রয়শিবিরের (ক্যাম্প-২-ই) বি-ডব্লিউ ব্লকের রোহিঙ্গা মাহমুদুল হকের ঘরের সামনে সিঁড়িতে গুলি করা হয়। লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য কক্সবাজার সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে।

পুলিশ জানায়, এর আগে গত ৩ অক্টোবর রাতে উখিয়ার বালুখালী আশ্রয়শিবিরে আরসা ও আরএসওর মধ্যে গোলাগুলি ও সংঘর্ষের ঘটনায় আরসার শীর্ষ কমান্ডার মো. ইউসুফ (৩৮) ও আরএসও সদস্য মো. আরাফাত নিহত হন। পুলিশ ও রোহিঙ্গা নেতাদের দেওয়া তথ্যমতে, গত সাড়ে আট মাসে আশ্রয়শিবিরে ৫৬টি সংঘর্ষ ও গোলাগুলির ঘটনায় অন্তত ৬৮ রোহিঙ্গা নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ১৭ রোহিঙ্গা মাঝি, ২১ জন আরসা সদস্য, ৩ জন আরএসও সদস্য, ১ জন স্বেচ্ছাসেবক ও অন্যরা সাধারণ রোহিঙ্গা।

আরও পড়ুন