সড়কে জন্ম নেওয়া নবজাতক
ফাইল ছবি

ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলায় সড়ক দুর্ঘটনার সময় বিস্ময়করভাবে জন্ম নেওয়া সেই নবজাতককে রাজধানীর সরকারি ছোটমণি নিবাসে পাঠানো হয়েছে। আজ শুক্রবার বেলা সোয়া ১১টার দিকে একটি মাইক্রোবাসে করে শিশুটিকে নিয়ে ময়মনসিংহ থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেওয়া হয়েছে। গাড়িতে রয়েছেন ত্রিশাল উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মাহমুদুল হাসান।

শিশুটিকে পুরো যাত্রাপথে কোলে রাখবেন ময়মনসিংহ সরকারি বালিকা এতিমখানার কর্মচারী তাহমিনা আক্তার স্বপ্না। এ ছাড়া দুজন নারী কনস্টেবলসহ মোট তিনজন পুলিশ ও শিশুটির দাদা মোস্তাফিজুর রহমান রয়েছেন এই মাইক্রোবাসে।

এর আগে আজ সকাল ১০টা থেকেই ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শিশুটিকে হস্তান্তরের আনুষ্ঠানিকতা হয়। ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন শিশুটিকে ছাড়পত্র দিয়ে সমাজসেবা অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের কাছে হস্তান্তর করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। হস্তান্তরপত্রে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের পক্ষে স্বাক্ষর করেন ২৫ নম্বর ওয়ার্ডের নবজাতক ইউনিটের ইনচার্জ (নার্স) শান্তি লতা। আর সমাজসেবা অধিদপ্তরের পক্ষে স্বাক্ষর করেন ত্রিশাল উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মাহমুদুল হাসান।

আরও পড়ুন

ত্রিশালে সড়কে জন্ম নেওয়া নবজাতককে সরকারি নিবাসে পাঠাতে চায় প্রশাসন

১৬ জুলাই ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে ট্রাকচাপায় মারা যান শিশুটির বাবা জাহাঙ্গীর আলম (৪২), মা রত্না বেগম (৩২) এবং এ দম্পতির ছয় বছর বয়সী মেয়ে সানজিদা। ওই সড়ক দুর্ঘটনার সময় সড়কেই নবজাতকটি ভূমিষ্ঠ হয় বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান।

জন্মের পরপর শিশুটির চিকিৎসার দায়িত্ব নেন ময়মনসিংহের বেসরকারি লাবীব হাসপাতালের মালিক শাহ জাহান। পরে ১৮ জুলাই শিশুটির জন্ডিস, রক্ত স্বল্পতা ও শ্বাসকষ্ট দেখা দিয়ে তাকে ভর্তি করা হয় ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সেখানে শিশুটির চিকিৎসায় পাঁচ সদস্যের বোর্ড গঠন করে চিকিৎসা শুরু হয়।

ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নবজাতক ওয়ার্ডের প্রধান নজরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, শিশুটির যেসব সমস্যা নিয়ে ভর্তি হয়েছিল, সেগুলো সম্পূর্ণ সেরে গেছে। তবে দুর্ঘটনার সময় ভেঙে যাওয়া ডান হাতের কবজি সম্পূর্ণ সারতে আরও দুই সপ্তাহ লাগতে পারে।

আরও পড়ুন

নবজাতকটি সুস্থ হচ্ছে, আগের চেয়ে ভালো আছে

শিশুটিকে ঢাকায় পাঠানো আগে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপপরিচালক মো. ওয়েজউদ্দীন ফরাজী বলেন, গত বুধবার ময়মনসিংহ জেলা শিশুকল্যাণ বোর্ডের সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, শিশুটিকে রাজধানীর ছোটমণি নিবাসে পাঠানো হচ্ছে।

সমাজসেবা অধিদপ্তরের ময়মনসিংহ কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. ওয়ালী উল্লাহ বলেন, ‘শিশুটির পরিবারের সার্বিক বিষয় বিবেচনা করে জানতে পারি, তাকে নিজেদের কাছে রেখে লালন–পালন করার মতো সক্ষমতা নেই পরিবারটির। যে কারণে শিশুকল্যাণ বোর্ডের সভায় এমন সিদ্ধান্ত হয়েছে।’

আরও পড়ুন

নবজাতকটি যখন পৃথিবীতে এল, দুর্ঘটনায় তখন পরপারে বাবা-মা-বোন

শিশুটিকে সরকারি নিবাসে পাঠানোর বিষয়ে শুরুতে তার দাদা মোস্তাফিজুর রহমানের মত না থাকলেও শেষ পর্যন্ত তিনি রাজি হয়েছেন। মোস্তাফিজুর রহমান আজ শুক্রবার সকালে প্রথম আলোকে বলেন, ‘ছয় বছর বয়স পর্যন্ত শিশুটিকে সরকারি নিবাসে রাখা হবে। ছয় বছর পর আবারও আমাদের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হবে। এটি জানার পর আমি ছোটমণি নিবাসে দিতে রাজি হয়েছি। এ ছাড়া আমি চাইলে যেকোনো সময় নাতনিকে দেখতে যেতে পারব।’ তিনি আরও বলেন, ‘শিশুটির বড় বোন দশ বছর বয়সী জান্নাত শিশুটির নাম রেখেছে ফাতেমা খাতুন। আমরা এ নামটিই চূড়ান্ত করেছি।’