রাজশাহীতে নির্বাচন–পরবর্তী সহিংসতায় আহত ১১, বরজের পান খামারের মুরগি লুট
শফিকুল ইসলামের বাড়ি রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলার নওপাড়া ইউনিয়নের আলীপুর গ্রামে। আজ সোমবার সকালে ঘুম থেকে উঠে শুনতে পান, তাঁর পানবরজের বেড়া পড়ে গেছে। পরে খোঁজ নিয়ে দেখেন, বরজের সব পান লুট হয়ে গেছে। আরেকটু বেলা বাড়ার সঙ্গে দেখেন, পুকুরের মাছ ভেসে উঠেছে। শফিকুলের দাবি, তিনি রাজশাহী-৫ (পুঠিয়া-দুর্গাপুর) আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থীর হয়ে সক্রিয়ভাবে কাজ করেছেন। নির্বাচনে তাঁরা হেরে যাওয়ার পর প্রতিপক্ষ তাঁর এমন ক্ষতি করেছে। শফিকুল বিকেলে দুর্গাপুর থানায় এ বিষয়ে অভিযোগ দিতে গিয়েছেন।
শফিকুল নওপাড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। তাঁর বাবার নাম খলিলুর রহমান। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী (ঈগল প্রতীক) জেলা যুবলীগের সাবেক সহসভাপতি মো. ওবায়দুর রহমানের হয়ে কাজ করেছেন। এই আসনে বিজয়ী হয়েছেন নৌকার প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল ওয়াদুদ। বেসরকারি ফলাফলে আব্দুল ওয়াদুদ ৮৬ হাজার ৯১৩ ভোট পেয়েছেন। ওবায়দুর পেয়েছেন ৮৩ হাজার ৮৬২ ভোট।
শফিকুল বলেন, তাঁর ১৮ কাঠা জমিতে পানের বরজ ছিল। আনুমানিক ১৪ লাখ টাকার পান লুট হয়েছে। সকালে গিয়ে দেখেন, মাছ ভেসে উঠেছে। তিন ভাগের এক ভাগ মাছ বিক্রি করতে পেরেছেন। আরও তিন লাখ টাকার মাছ মরে বিক্রির অযোগ্য হয়ে গেছে। ভোটে ঈগলের পক্ষে কাজ করায় নৌকার লোকজনেরা এই কাজ করেছেন।
এদিকে রাজশাহী-৬ (বাঘা-চারঘাট) আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী (কাঁচি প্রতীক) জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. রাহেনুল হকের পক্ষে কাজ করেছেন নাট্যকর্মী শিমুল সরকার। এই আসনে টানা চতুর্থবারের মতো বিজয়ী হয়েছেন নৌকার প্রার্থী বর্তমান সংসদ সদস্য ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম। তিনি ১ লাখ ১৫ হাজার ৯৯ ভোট পেয়েছেন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী রাহেনুল হক পেয়েছেন ৭৪ হাজার ২৭৮ ভোট। ফলাফলের পর গতকাল রোববার রাত সাড়ে ৯টার দিকে প্রতিপক্ষের হামলার শিকার হয়েছেন শিমুল সরকার। এ ঘটনার পর শিমুলকে বাঘা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। এ ঘটনায় তাঁর মাথায় দুটি সেলাই পড়েছে। এ ছাড়া শরীরের বিভিন্ন জায়গায় আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।
শিমুল জানান, নৌকার সমর্থকেরা তাঁকে মারধর করেছেন। আজ তাঁর ছোট ভাই ফরহাদ হোসেন পাঁচজনের নাম উল্লেখ ও আরও পাঁচজনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে বাঘা থানায় অভিযোগ দিয়েছেন।
এ ব্যাপারে বাঘা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আমিনুল ইসলাম বলেন, গতকাল রাতে ঘটনার পর তিনি পুলিশ পাঠিয়েছিলেন। এ ব্যাপারে তাঁরা মামলা করবে বলে জানিয়েছিলেন। কিন্তু তিনি অভিযোগ পাননি বলে জানান।
সংঘর্ষে ১০ জন আহত
রাজশাহী-৩ (পবা-মোহনপুর) আসনে বিজয়ী নৌকার প্রার্থী আসাদুজ্জামান আসাদ ও বর্তমান সংসদ সদস্য (প্রার্থী ছিলেন না) আয়েন উদ্দিনের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। আজ সকালে পবা উপজেলার পারিলা বাজারে এই সংঘর্ষে অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন।
স্থানীয় লোকজন জানান, গতকাল ভোট চলা অবস্থায় ওই দুই গ্রুপ প্রথম দফায় সংঘর্ষে জড়ায়। এ সময় পারিলা ইউনিয়ন শ্রমিক লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান ওরফে মুরাদ এক হাতে রামদা ও আরেক হাতে পিস্তল নিয়ে ভয়ভীতি দেখানোর চেষ্টা করেন। পরে আসাদুজ্জামানের সমর্থকদের ধাওয়ায় মেহেদী পালিয়ে যান। আসাদুজ্জামানের কর্মীরা তাঁদের রাজনৈতিক কার্যালয়ে হামলা চালান। আজ সকালে বাজারে পেয়ে সংসদ সদস্য আয়েনের সমর্থকেরা আসাদুজ্জামানের সমর্থকদের ধাওয়া দেন। এ সময় বাজারে অবস্থিত আসাদুজ্জামানের সমর্থকদের কয়েকটি দোকান ও মুরগির খামারে হামলা চালায় আয়েন পক্ষ। এ সময় দুই পক্ষের অন্তত ১০ জন আহত হন।
হামলার শিকার মুরগির খামারি ইয়াসির মুঠোফোনে বলেন, গতকাল তাঁর পরিবারের লোকজন ভোট দিতে যান। কিন্তু বর্তমান সংসদ সদস্য আয়েন উদ্দিনের সমর্থক পারিলা ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের সভাপতি সোহরাব হোসেনের নির্দেশে তাঁদের ভোট দিতে যাওয়ার পথে বাধা দেওয়া হয়। তখন এলাকাবাসী তাঁদের ধাওয়া দিয়ে তাড়িয়ে দেন। মুরাদ (মেহেদী হাসান) নামে একজন রামদা ও পিস্তল প্রদর্শন করেন। তার জের ধরে আজ সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বাড়ি থেকে একটু দূরে তাঁর মুরগির খামারে হামলা চালানো হয়। সোহরাবের নেতৃত্বে বেশ ৪০-৫০ জন মিলে খামারে আসেন। খামারে ৩ হাজার ২০০ মুরগি ছিল। এক লাখ টাকার ডিমই ছিল। ডিম-মুরগি তাঁরা লুট করে নিয়ে যান।
অভিযোগের ব্যাপারে কথা বলতে সোহরাব আলীকে ফোন করা হলে তাঁকে পাওয়া যায়নি। পবা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সোহরাওয়ার্দী হোসেন বলেন, তিনি ঘটনাস্থল গিয়েছিলেন। দুই পক্ষেরই ক্ষতি হয়েছে বলে জেনেছেন। তবে মুরগির খামারে বেশি ক্ষতি হয়েছে। এ ঘটনায় কোনো পক্ষই মামলা করেনি। আর প্রকাশ্যে অস্ত্র প্রদর্শন করা তরুণকেও আটকের চেষ্টা করছেন তাঁরা।
রাজশাহী-৩ আসনের সংসদ সদস্য আয়েন উদ্দিন আওয়ামী লীগের মনোনয়নবঞ্চিত হয়ে প্রথম দিকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন। কিন্তু পরে তিনি নৌকার বিপক্ষে নির্বাচন করবেন না জানিয়ে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নেন।
এ আসনে নৌকার প্রার্থী আসাদুজ্জামান আসাদ ১ লাখ ৫৪ হাজার ৯০৯ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী জাতীয় পার্টির (লাঙ্গল প্রতীক) আব্দুস সালাম পেয়েছেন ৫ হাজার ২৪৭ ভোট।