‘ঈদ চইলা আসল, কিন্তু যাত্রী আসে না’
ঈদের ছুটিতে ঘরমুখী মানুষের যাত্রা শুরু হয়েছে। গত তিন দিনের মতো আজ সোমবার সকালে নারায়ণগঞ্জের ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে যাত্রীর চাপ কম। সকালে নারায়ণগঞ্জের সাইনবোর্ড ও শিমরাইল এলাকায় গিয়ে দেখা যায় যাত্রীর তুলনায় বাসের সংখ্যা বেশি। তবে আজ দুপুরের পর যাত্রীদের চাপ বাড়বে বলে আশা করছেন পরিবহনশ্রমিকেরা।
সকালে সাইনবোর্ড এলাকায় যেতেই দেখা গেল পদচারী–সেতুর সামনে ৮-১০ জনের একদল পরিবহনশ্রমিক যাত্রীর জন্য হাঁকডাক দিচ্ছেন। সেতু থেকে কেউ নামলেই টিকিট বিক্রেতারা তাঁদের একসঙ্গে ঘিরে ধরেছেন। যাত্রীদের গন্তব্য জানতে চাচ্ছেন। এরপর যাত্রীদের টানাটানি করছেন নিজেদের পরিবহনে যেতে। যাত্রীরাও এই সুযোগে টিকিটের দামদর করে নিচ্ছেন। সুবিধামতো টিকিট মূল্যে পরিবহন বাছাই করছেন।
পরিবহনশ্রমিকদের সেই জটলায় কথা হলো একুশে পরিবহনের টিকিট বিক্রেতা আরিয়ান মাহমুদের সঙ্গে। রোববারও তিনি একই যায়গায় যাত্রী খুঁজছিলেন। তখন এই টিকিট বিক্রেতা জানিয়েছিলেন, রোববার সন্ধ্যার পর থেকে যাত্রীর চাপ বাড়বে। সোমবার সকালে নিজের হতাশার কথা জানিয়ে আরিয়ান বলেন, ‘এ বছর সব ধারণা ভুল হইতাছে। ঈদ চইলা আসল, কিন্তু যাত্রী আসে না। তবে আশা করি দুপুরের পর ভালো চাপ যাবে।’
একই কথা জানালেন তাঁর সঙ্গে থাকা অন্য টিকিট বিক্রেতারাও। তাঁরা বলছেন, নারায়ণগঞ্জের অধিকাংশ তৈরি পোশাক কারখানাই আজ সোমবার দুপুরের মধ্যে বেতন দিয়ে ছুটি ঘোষণা করবে। দুপুরের পর থেকে দেশের দক্ষিণ–পূর্বাঞ্চলের শ্রমিক–কর্মচারীরা বাড়ি ফিরতে শুরু করবেন। তখন সড়কে বড় চাপ তৈরি হবে। চাপ বাড়লে টিকিটের মূল্য বাড়বে বলেও জানান এই পরিবহন শ্রমিকেরা।
তবে আজ সকালেও কোনো কোনো পরিবহনে বাড়তি ভাড়া নিতে দেখা গেছে। নোয়াখালীর সোনাইমুড়ীতে যাওয়ার জন্য ইকোনো পরিবহনের টিকিট কেটেছেন সাইনবোর্ড এলাকার বেসরকারি চাকরিজীবী মো. হোসেন। জানালেন, অন্যান্য সময় টিকিটমূল্য ৫০০ টাকা। সোমবার তাঁর কাছ থেকে রাখা হয়েছে ৬৫০ টাকা।
একই কথা জানালেন হোসেনের পাশে বসা যিশু দাস। যিশু যাবেন হবিগঞ্জের বানিয়াচংয়ে। প্রথম আলোকে যিশু জানান, নারায়ণগঞ্জের পাগলায় দিনমজুরির কাজ করেন তিনি। পরিবারের সঙ্গে বৈশাখ উদ্যাপন করতে যাচ্ছেন। লাকি পরিবহনের একটি টিকিট কিনতে ৭০০ টাকা লেগেছে। ঈদের আগে ভাড়া ছিল ৫০০ টাকা।
এই দুটি পরিবহনের কাউন্টার মালিক মো. ফারুকের কাছে বাড়তি টিকিটমূল্য রাখার কারণ জানতে চাইলে বলেন, ‘কাউন্টারে যাত্রী নাই। বেশি ভাড়া রাখার তো কোনো কারণ নাই। এই দুটি পরিবহনের মালিকপক্ষই টিকিটের বাড়তি মূল্য নির্ধারণ করেছেন।’
সকালে কিশোরগঞ্জ পথের শাহ সুলতান পরিবহনের চালক মো. সোলায়মানকে দেখা গেল গাড়ির স্টিয়ারিং ছেড়ে নিজেই যাত্রীর জন্য হাঁকডাক দিচ্ছেন। এই চালকের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, ‘১৬ বছর এই লাইনে। এমন দুর্দিন কোনো সময় দেহি নাই। ঈদের ভরা সিজনে খালি গাড়ি চালাইতে মন টানে না। তাই নিজেই যাত্রী খুঁজতে নামছি।’
এ সময় সোলায়মানসহ অন্য পরিবহনশ্রমিকদের দেখা যায় একজন যাত্রীকে ঘিরে ধরতে। মোসা. নিপা নামের ওই যাত্রী তখন তাঁদের কাছে ভাড়া জানতে চান। একেকজন একেক ভাড়া দাবি করলে নিপা দামদর করে ২৫০ টাকা টিকিটমূল্যে ভৈরবের উদ্দেশে যাত্রা করেন।
নিপা জানান, তিনি নারায়ণগঞ্জের কাশিপুরে গৃহকর্মীর কাজ করেন। কিশোরী দুই মেয়েকে নিয়ে গ্রামে যাচ্ছেন ঈদ করতে। ভয়ে ছিলেন বাড়তি ভাড়া দিয়েও সড়কে ঠিকঠাক গাড়ি পাবেন কি না। তবে তাঁর সেই ভয় সত্যি না হওয়ায় স্বস্তি পেয়েছেন তিনি। নিপার ভাষায়, ‘ঈদের মজা রাস্তায়ই নষ্ট অইয়া যায়। এবার তা অইলো না।’