‘ইলা মিত্র: কাঁটাতারে প্রজাপতি’

তেভাগা আন্দোলনের অবিসংবাদিত নেত্রী ইলা মিত্রের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে যোগ দিতে সাঁওতালেরা সাজগোজ করে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদরে আসেনছবি: প্রথম আলো

‘হেঁই সামালো ধান হো/ কাস্তে দাও শান হো...।’ গতকাল শুক্রবার থেকে ফেসবুকে এই স্লোগান লেখা একটা ফটোকার্ড ভেসে বেড়াচ্ছে। ইলা মিত্রের ছবির সঙ্গে স্লোগানটি ব্যবহার করা হয়েছে। সাদা-কালো ছবিটির ব্যাকগ্রাউন্ড লাল। লাল অংশে লেখা হয়েছে স্লোগানের প্রথম অংশ। বাকি অংশ লেখা হয়েছে সাদা ছবির ওপর।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক সেলিম রেজা নিউটন ফটোকার্ডটির শিরোনাম করেছেন সেলিনা হোসেনের ‘কাঁটাতারে প্রজাপতি’ উপন্যাসের নাম দিয়ে। ‘ইলা মিত্র: কাঁটাতারে প্রজাপতি’। মূল কার্ডটি তৈরি করেছেন এম আসলাম লিটন।

এসব আয়োজনই বলে দেয় চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোলের ঐতিহাসিক তেভাগা আন্দোলনের অবিসংবাদিত নেত্রী ইলা মিত্রের জন্মশতবার্ষিকী এসে গেছে। আজ শনিবার ১৮ অক্টোবর শোষিত ও নিপীড়িত সাঁওতাল কৃষকদের রানিমাখ্যাত বিপ্লবী ইলা মিত্রের জন্মের শতবর্ষ পূর্ণ হলো।

আরও পড়ুন

১৯২৫ সালের ১৮ অক্টোবর ইলা মিত্রের জন্ম হয়েছিল কলকাতায়। বাবা নগেন্দ্রনাথ সেন ছিলেন ব্রিটিশ সরকারের অধীন বাংলার অ্যাকাউন্ট্যান্ট জেনারেল। তাঁদের আদিনিবাস ছিল ঝিনাইদহের শৈলকুপার বাগুটিয়া গ্রামে। ইলা মিত্র ১৯৪৪ সালে কলকাতার বেথুন কলেজ থেকে স্নাতক ডিগ্রি নেন।

আরও পড়ুন

জন্মশতবার্ষিকীতে কোথায় কী আয়োজন—খোঁজ নিতে গিয়ে জানা গেল, আজ চাঁপাইনবাবগঞ্জে তেভাগা আন্দোলনের নেত্রী ইলা মিত্রের জন্মশতবার্ষিকী উদ্‌যাপন পরিষদ গঠন করা হয়েছে। তাঁরা শোভাযাত্রা, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ও বাঙালি কৃষক সমাবেশের আয়োজন করেছেন। শহরের ফায়ার সার্ভিস মোড় থেকে সকাল সাড়ে ১০টায় শোভাযাত্রা বের হয়। চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌর পার্কে সমাবেশের আয়োজনও আছে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরের ফায়ার সার্ভিস মোড় থেকে সকাল সাড়ে ১০টায় শোভাযাত্রা বের হয়
ছবি: প্রথম আলো

১৯৯৬ সালের ৭ নভেম্বর রাজশাহীর ভুবনমোহন পার্কে ইলা মিত্রকে গণসংবর্ধনা দেওয়া হয়েছিল। সেখান থেকে তিনি গিয়েছিলেন নাচোলের কৃষক সমাবেশে। সংবাদের তৎকালীন সাংবাদিক নাট্যকার মলয় ভৌমিক সেই নিউজ কাভার করার জন্য নাচোলে গিয়েছিলেন। জন্মশতবর্ষের কথা নিয়ে তাঁর সঙ্গে অনেক কথাই হলো। তিনি বললেন, সেদিন সাঁওতাল কৃষকেরা তাঁদের রানিমাকে দেখতে আসার জন্য নতুন জামাকাপড় বানিয়েছিলেন। অনুষ্ঠানে তাঁরা নতুন কাপড় পরেই এসেছিলেন।

আরও পড়ুন

মলয় ভৌমিক বললেন, সেটি বিশাল সমাবেশ ছিল। তাঁর মনে আছে, সেই সমাবেশের ছবি সংবাদের শেষ পৃষ্ঠায় ইলা মিত্রের ছবির পাশে বড় করে ছাপা হয়েছিল। তিনি ইলা মিত্রের আদিনিবাস দেখতে ঝিনাইদহের বাগুটিয়া গ্রামেও গিয়েছিলেন। শৈলকুপা থেকেই লোকজন ইলা মিত্রের বাড়ির ঠিকানা বলে দিতে পারেন। বাড়িঘর এখনো আছে, কিন্তু তাতে বাস করেন অন্য লোকজন।