২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন দেখতে ক্লিক করুন
মূল সাইট দেখতে ক্লিক করুন

অধ্যক্ষকে বদলির পর বগুড়ায় আইএইচটি দাপিয়ে বেড়ানো সেই ছাত্রলীগ নেতা গ্রেপ্তার

অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতা সজল কুমার ঘোষ
ছবি: সংগৃহীত

বগুড়ার ইনস্টিটিউট অব হেলথ টেকনোলজির (আইএইচটি) শিক্ষার্থীদের নির্যাতনের ঘটনায় করা মামলার প্রধান আসামি ও জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক সজল কুমার ঘোষকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

আজ মঙ্গলবার সকালে বগুড়ার শেরপুর উপজেলার ছনকা বাজার এলাকা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। দুপুরে আদালতের মাধ্যমে তাঁকে কারাগারে পাঠানো হয়।

আরও পড়ুন

সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইহান ওলিউল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, নির্যাতনের অভিযোগে আইএইচটির এক শিক্ষার্থী থানায় মামলা করার পর সজল কুমার ঘোষ আত্মগোপনে চলে যান। ঘনঘন অবস্থান পরিবর্তনের কারণে তাঁকে গ্রেপ্তার করা যাচ্ছিল না। গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে আজ সকালে শেরপুর থানা-পুলিশের সহযোগিতায় ছনকা বাজার এলাকা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করে সদর থানা-পুলিশের একটি দল। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তিনি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছেন। তাঁর বিরুদ্ধে রিমান্ডের আবেদনের বিষয়ে পরে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

এর আগে গতকাল সোমবার স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবারকল্যাণ বিভাগ পারসোনাল-১ শাখা (উপসচিব) মোহাম্মদ রুহুল কুদ্দুস স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে শিক্ষার্থীদের নির্যাতনে সহায়তার অভিযোগে আইএইচটির অধ্যক্ষ আমায়াত-উল-হাসিনকে সাত কর্মদিবসের মধ্যে বাগেরহাট ম্যাটসের সিনিয়র লেকচারার হিসেবে যোগদান করতে বলা হয়। অন্যথায় অষ্টম কর্মদিবসে ‘স্ট্যান্ড রিলিজ’ বলে গণ্য হবে বলে আদেশে উল্লেখ করা হয়। এ ছাড়া বগুড়া আইএইচটির সিনিয়র লেকচারার ওমর ফারুক মীরকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

আরও পড়ুন

তবে অধ্যক্ষকে বদলির পরও ক্লাসে ফেরেননি শিক্ষার্থীরা। ছাত্রলীগ নেতা সজলকে গ্রেপ্তার ও শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবিতে ১৫তম দিনের মতো আজও ক্লাস বর্জন করে বিক্ষোভ কর্মসূচি অব্যাহত রেখেছেন শিক্ষার্থীরা। তবে দুপুরের দিকে সজলকে গ্রেপ্তারের খবর পাওয়ার পর শিক্ষার্থীদের মধ্যে স্বস্তি ফিরেছে। পরে বিকেলে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা তাঁদের প্রধান দুটি দাবি পূরণ হওয়ায় বৃহস্পতিবার থেকে ক্লাসে ফেরার ঘোষণা দেন।

আইএইচটির ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ওমর ফারুক মীর আজ প্রথম আলোকে বলেন, অধ্যক্ষকে বদলির পরও সকাল থেকে ক্লাস বর্জন করে ক্যাম্পাসে অবস্থান ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করছেন শিক্ষার্থীরা। ১৭ সেপ্টেম্বর থেকে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা হওয়ার কথা আছে। অভিযুক্ত সজলকে গ্রেপ্তারের মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থীদের তিনটি দাবির মধ্যে প্রধান দুটি দাবি পূরণ হয়েছে। আগামী বৃহস্পতিবার থেকে শিক্ষার্থীরা ক্লাসে ফিরবেন বলে তিনি আশাবাদী।

আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের মধ্যে আইএইচটির ফিজিও থেরাপি বিভাগের শিক্ষার্থী মাহফুুজুল ইসলাম বলেন, ‘তিন দফা দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা ক্লাসে ফিরব না বলে ঘোষণা দিয়েছিলাম। সেই দাবির মধ্যে ছিল ছাত্রলীগ নেতা সজলকে গ্রেপ্তার, অধ্যক্ষকে প্রত্যাহার ও ক্যাম্পাসে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। ১৭ সেপ্টেম্বর থেকে পরীক্ষা হবে। তা ছাড়া সজলকে গ্রেপ্তার ও অধ্যক্ষকে বদলি করার মধ্য দিয়ে আমাদের প্রধান দুটি দাবি পূরণ হয়েছে। এ কারণে আমরা বৃহস্পতিবার থেকে ক্লাসে ফেরার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’

আরও পড়ুন

এদিকে আইএইচটির ঘটনায় স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের গঠিত তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গতকাল সরেজমিনে তদন্তে আসে। কমিটির সদস্যরা ঘটনা সম্পর্কে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির অন্তত ১১ জন শিক্ষার্থীর সাক্ষাৎকার নেন। পরে অধ্যক্ষসহ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বক্তব্য শোনেন। অধ্যক্ষ আমায়াত–উল–হাসিন তদন্ত কমিটির কাছে নিজের অবস্থান ব্যাখ্যা করতে এলে শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে পড়েন। এ সময় অধ্যক্ষের অপসারণের দাবিতে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন। একপর্যায়ে অধ্যক্ষ আমায়াত-উল-হাসিন তাঁর কার্যালয়ে চলে যান। সন্ধ্যায় তাঁর বদলির আদেশ আসে। সন্ধ্যার পর অভিযুক্ত সজল ছাত্রাবাসের যে কক্ষ দখল করে ছিলেন, সেই কক্ষ পরিদর্শন করেন তদন্ত কমিটির সদস্যরা।

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, আইএইচটির ছাত্র না হয়েও এক যুগ ধরে অবৈধভাবে ছাত্রাবাসের ২১৮ নম্বর কক্ষ দখল করে রেখেছেন সজল। সেখানে বহিরাগত সন্ত্রাসীদের নিয়ে ক্যাম্পাসে ভীতিকর পরিবেশ তৈরি করেছেন তিনি। শিক্ষার্থীদের মারধর, হলে আসন–বাণিজ্য, মাদক সেবন ও পরীক্ষায় পাস করিয়ে দেওয়ার কথা বলে জোর করে মোটা অঙ্কের টাকা আদায় করতেন তিনি।

আরও পড়ুন

গত ২৯ আগস্ট বিকেল থেকে তাঁর বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তুলে বিক্ষোভে নামেন শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে ওই দিনই আত্মগোপনে চলে যান সজল। ২ সেপ্টেম্বর তাঁর বিরুদ্ধে সদর থানায় একটি মামলা করেন আইএইচটির শিক্ষার্থী শাহরিয়ার হাসান। ৩ সেপ্টেম্বর স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে তিন সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিকে পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়। সেই অনুযায়ী গতকাল প্রতিবেদন দাখিল করার কথা ছিল।

তদন্ত কমিটির প্রধান ও স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের উপপরিচালক গাউসুল আজিম চৌধুরী গতকাল বলেন, তদন্ত কার্যক্রম শেষ করে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরে প্রতিবেদন দাখিল করা হবে।