মিছিলে থাকলেও মঞ্চে ছিলেন না নজরুল ইসলাম

খুলনায় বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশে মানুষের ঢল। সোনালী ব্যাংক চত্বর, খুলনা, ২২ অক্টোবরছবি: সাদ্দাম হোসেন

খুলনায় বিভাগীয় বিএনপির গণসমাবেশে মাঠে থাকবেন বলে আগেই ঘোষণা দিয়েছিলেন দলটির সাবেক কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও মহানগর বিএনপির সাবেক সভাপতি নজরুল ইসলাম (মঞ্জু)। বিএনপির সাধারণ নেতা-কর্মীদের বেশির ভাগের ধারণা ছিল, হয়তো তিনি সমাবেশের মঞ্চে থাকবেন। তবে বড় মিছিল নিয়ে গণসমাবেশে যোগ দিলেও এ নেতাকে মঞ্চে দেখা যায়নি।

আজ শনিবার দুপুর ১২টার দিকে নগরের সঙ্গীতা সিনেমা হল মোড় থেকে বড় একটি মিছিল নিয়ে সমাবেশস্থলে যান নজরুল ইসলাম, মহানগর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সিটি মেয়র মোহাম্মদ মনিরুজ্জামানসহ বিএনপির সাবেক নেতারা। তাঁদের মিছিলে মহানগর, পাঁচটি থানা বিএনপির সাবেক সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকসহ ওয়ার্ড কমিটির সাবেক নেতারা অংশ নেন।

আরও পড়ুন
খুলনায় নজরুল ইসলাম ব্যাপক জনপ্রিয় নেতা। আমরা আশা করেছিলাম, মঞ্চে কেন্দ্রীয় নেতাদের পাশে তিনি থাকবেন। তাঁকে মঞ্চে দেখতে না পেয়ে আশাহত হয়েছি।
নজরুল ইসলাম নামের এক কর্মী

গত বছরের ৯ ডিসেম্বর মহানগর বিএনপির তিন সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা হলে বাদ পড়েন নজরুল ইসলাম ও তাঁর অনুসারীরা। দলের ওই সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার দাবি জানিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন তিনি। এর পরিপ্রেক্ষিতে ২৫ ডিসেম্বর তাঁকে বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদকের পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।

অব্যাহতির সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে মহানগর বিএনপির সহসভাপতি, যুগ্ম সম্পাদক, পাঁচটি থানার সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক ও ওয়ার্ড কমিটির পাঁচ শতাধিক নেতা পদত্যাগ করেন। এরপর বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে সাবেক নেতারা অংশ নিলেও দলের কর্মকাণ্ডে নিষ্ক্রিয় ছিলেন।

আরও পড়ুন

গত বৃহস্পতিবার খুলনা প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলন করে বিএনপির হয়ে দলবল নিয়ে আবার মাঠে নামার ঘোষণা দেন নজরুল ইসলাম। তিনি বলেন, দলের পাশে থেকে তাঁরা গণসমাবেশ সফল করতে চান। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করতে চান। সে জন্য ব্যথা-বেদনা, পাওয়া না পাওয়া—সবকিছু উড়িয়ে দিয়ে তাঁরা চলমান আন্দোলনে অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

আরও পড়ুন

মঞ্চে নজরুল ইসলামকে না থাকতে দেখে আশাহত হয়েছেন তাঁর কর্মী-সমর্থকেরা। নজরুল ইসলাম নামের এক কর্মী প্রথম আলোকে বলেন, ‘খুলনায় নজরুল ইসলাম ব্যাপক জনপ্রিয় নেতা। আমরা আশা করেছিলাম, মঞ্চে কেন্দ্রীয় নেতাদের পাশে তিনি থাকবেন। তাঁকে মঞ্চে দেখতে না পেয়ে আশাহত হয়েছি। তাঁকে মূল্যায়ন করা হয়নি।’

আমাদের মঞ্চে নেওয়ার দায়িত্ব কেন্দ্রীয় বিএনপির। আমরা সবকিছুই কেন্দ্রের ওপর ন্যস্ত করেছি। খুলনার বিষয়ে বিচারের ভার কেন্দ্রকে দিয়েছি।
নজরুল ইসলাম (মঞ্জু), মহানগর বিএনপির সাবেক সভাপতি

নজরুল ইসলামের অনুসারী বলে পরিচিত নগর বিএনপির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক অধ্যক্ষ তরিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা মনে করি দেশ ও জনগণের মুক্তির জন্য এ আন্দোলন। এখানে অনেকে কয়েক শ মাইল দূর থেকে লড়াই-সংগ্রাম করে সমাবেশে এসেছেন। দলে একসময় গুরুত্বপূর্ণ পদে ছিলাম। ন্যায্যতার ভিত্তিতে দলের কাছে কিছু দাবিদাওয়া করেছিলাম। সেগুলোকে মুখ্য করে ভেবে যদি এত বড় লড়াইয়ের ময়দান থেকে দূরে থাকি, তাহলে নিজেদের বিবেকের কাছে প্রশ্নবিদ্ধ হতাম।’

সমাবেশের মঞ্চে না থাকার বিষয়ে নজরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের মঞ্চে নেওয়ার দায়িত্ব কেন্দ্রীয় বিএনপির। আমরা সবকিছুই কেন্দ্রের ওপর ন্যস্ত করেছি। খুলনার বিষয়ে বিচারের ভার কেন্দ্রকে দিয়েছি। আমরা তিনটি আবেদনপত্র মহাসচিবের মাধ্যমে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের কাছে পাঠিয়েছি। সেখানে আমরা দলীয় কর্মকাণ্ডে ফিরে যাওয়ার কথা বলেছি। আমাদের যেসব নেতা অসম্মানিত হয়েছেন, তাঁদের সম্মান দিয়ে রাজনীতিতে পুনর্বহালের দাবি জানিয়েছি।’

আরও পড়ুন
সংবাদ সম্মেলনে কথা বলেন খুলনা মহানগর বিএনপির সাবেক সভাপতি নজরুল ইসলাম। বৃহস্পতিবার খুলনা প্রেসক্লাবে
ছবি: প্রথম আলো

নজরুল ইসলাম আরও বলেন, সাড়ে ১০ মাস পর বিএনপির কর্মসূচিতে ফিরে এসেছেন তাঁরা। গণসমাবেশের ঘোষণার পর মহাসচিব তাঁদের দলীয় কর্মসূচিতে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন। তাঁরা তিনটি বৈঠক করে তাঁর আহ্বানে সাড়া দেন। জনদাবির পক্ষে থাকতে সমাবেশে থাকার সিদ্ধান্ত মহাসচিবকে জানিয়েছিলেন। তারপর সংবাদ সম্মেলন করে কর্মসূচিতে ফেরার ঘোষণা দেন।

কেন্দ্রের সিদ্ধান্তের দিকে চেয়ে আছেন জানিয়ে বিএনপির সাবেক এই নেতা বলেন, ‘এখন দল যদি মনে করে আমাদের প্রয়োজন, তাহলে সেভাবে গ্রহণ করবেন। আর যদি মনে করে আমাদের প্রয়োজন নাই, তাহলে সেটা জানিয়ে দিলে আমরা আমাদের ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক জীবন নিয়ে ভাবব।’

আরও পড়ুন