ইউপি নির্বাচনে সহিংসতার ঘটনায় ৩ মামলা, আসামি সাড়ে ছয় শতাধিক

ঠাকুরগাঁও জেলার মানচিত্র

ঠাকুরগাঁওয়ের রানীশংকৈল উপজেলায় ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সহিংসতার ঘটনায় থানায় পৃথক তিনটি মামলা হয়েছে।

আজ শনিবার বিকেলে সংশ্লিষ্ট প্রিসাইডিং কর্মকর্তা ও পুলিশের দুই সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) বাদী হয়ে মামলা তিনটি করেন। মামলাগুলোয় অজ্ঞাতনামা ৬৫০ থেকে ৮০০ জনকে আসামি করা হয়েছে।

থানা–পুলিশ সূত্রে জানা যায়, গত বুধবার রানীশংকৈল উপজেলার তিনটি ইউনিয়নে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। বাচোর ইউনিয়ন পরিষদের ভাংবাড়ি ভিএফ নিম্নমাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট গণনা শেষে প্রথমে জয়ী ইউপি সদস্যদের নাম ঘোষণা করা হয়। এতে ৩ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য পদে বাবুল হোসেন ৪৯৩ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন।

কিন্তু ওই ফল প্রত্যাখ্যান করে পরাজিত ইউপি সদস্যপ্রার্থী খালেদুর রহমানের সমর্থকেরা লাঠিসোঁটা নিয়ে ভোটকেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা নির্বাচনী কর্মকর্তা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সেখান থেকে বের হতে বাধা দেন। এ সময় পুলিশের কাঁদানে গ্যাস ছুড়ে তাঁদের ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করে। এতে কাজ না হওয়ায় হামলাকারীদের লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে পুলিশ।

আরও পড়ুন

এ সময় মীরডাঙ্গী আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দা মো. বাদশাহর মেয়ে সুরাইয়া মায়ের কোলে থাকা অবস্থায় মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যায়। এ ঘটনায় ভাংবাড়ি ভিএফ নিম্নমাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা খতিবর রহমান একটি মামলা করেছেন। এতে অজ্ঞাতনামা ৩০০ থেকে ৩৫০ জনকে আসামি করা হয়েছে।

ওই দিন রাতে ভোট গ্রহণের দায়িত্ব শেষে ফেরার সময় মীরডাঙ্গী বাজারের ১০০ গজ দক্ষিণে পুলিশের ওপর হামলা হয়। এ ঘটনায় ঠাকুরগাঁও সদর থানার এএসআই বিলাশ চন্দ্র রায় একটি মামলা করেন। মামলায় ১৫০ থেকে ২০০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে।

শিশু সুরাইয়ার মৃত্যুর ঘটনায় তাৎক্ষণিকভাবে লাশ নিয়ে বিক্ষোভ করেন স্থানীয় লোকজন। ওই সময় তাঁরা রানীশংকৈল আঞ্চলিক মহাসড়ক অবরোধ করেন ও রানীশংকৈল থানা ঘোরাও করে রাখেন। পুলিশ কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করে তাঁদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।

আরও পড়ুন

পরে রাত সাড়ে নয়টার দিকে আঞ্চলিক মহাসড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়। এ ঘটনায় রানীশংকৈল থানার এএসআই আহাদুল জামান বাদী হয়ে একটি মামলা করেন। ওই মামলায় অজ্ঞাতনামা ২০০ থেকে ২৫০ জনকে আসামি করা হয়েছে।

প্রিসাইডিং কর্মকর্তা খতিবর রহমান বলেন, ইউপি সদস্য পদে পরাজিত প্রার্থীর সমর্থকেরা তাঁদের ওপর হামলা করেছিলেন। তবে তাঁদের পরিচয় জানা যায়নি বলে এজাহারে কারও নামোল্লেখ করা হয়নি।

মামলার কথা শুনে অনেকেই গ্রেপ্তার আতঙ্কে এলাকা ছেড়েছেন। হাতে গোনা কয়েকটি দোকান ছাড়া গ্রামের প্রায় সব দোকান বন্ধ রয়েছে। নির্বাচনে পরাজিত ইউপি সদস্য প্রার্থী খালেদুর রহমানের মুঠোফোন বন্ধ থাকায় তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। তবে তাঁর প্রতিবেশী এক নারী জানিয়েছেন, তাঁরা এলাকা ছেড়ে চলে গেছেন। তবে কোথায় গেছেন, তা তাঁরা জানাননি।

আরও পড়ুন

এদিকে গুলিতে নিহত সুরাইয়ার বাবা মো. বাদশা বলেন, ‘সুরাইয়ার মতো আর কারও সন্তান যেন এভাবে মারা না যায়। এসব মামলায় যেন সাধারণ মানুষকে হয়রানি করা না হয়, সেটা আপনারা দেখবেন।’

মামলা হলেও যাঁরা এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত নন, তাঁদের কোনো ভয় নেই বলে মন্তব্য করেছেন রানীশংকৈল উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শাহরিয়ার আজম। তিনি বলেন, ‘আমরা এলাকাবাসীর পাশে আছি।’

পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, পৃথক তিনটি মামলা হয়েছে। এসব হামলার ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনার কাজ চলছে।