ধসে পড়া ভবনে ‘ঝুঁকি’ নিয়ে কাজ চলছে, উপাচার্য বলছেন ভুল–বোঝাবুঝি

নির্মাণাধীন ভবনের একাংশ ধসে পড়ার পর উদ্ধারকাজ চালায় ফায়ার সার্ভিস। গত মঙ্গলবার দুপুরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়েছবি: শহীদুল ইসলাম

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্মাণাধীন ১০ তলা শহীদ এ এইচ এম কামারুজ্জামান হলের একটি অংশ ধসে পড়ার ঘটনায় তদন্ত শুরুর আগেই ভবনে কাজ করা হচ্ছে। উপাচার্য গোলাম সাব্বিরের নির্দেশে কাজ চলছে বলে জানিয়েছেন প্রধান প্রকৌশলী। ভবনধসের কারণ উদ্‌ঘাটনের আগে ভবনটিতে কাজ করা ঝুঁকিপূর্ণ বলে মনে করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান প্রকৌশলী আবুল কালাম আজাদ প্রথম আলোকে বলেন, ধসে পড়া অংশে কাজ বন্ধ আছে। তবে অন্য জায়গায় উপাচার্যের নির্দেশে কাজ চলছে।

আরও পড়ুন

তবে উপাচার্য গোলাম সাব্বির সাত্তার বলেন, বিষয়টি নিয়ে ভুল-বোঝাবুঝি হচ্ছে। তিনি কাঠের অংশের কাজ করার নির্দেশ দিয়েছেন। সিভিল অংশের কাজ বন্ধ রাখতে বলেছেন। তিনি সংশ্লিষ্টদের বলে দিয়েছেন, যেন কনস্ট্রাকশনের কাজ বন্ধ রাখা হয়।

আজ সরেজমিনে দেখা গেছে, ভবনের ধসে পড়া অংশের কাজ বন্ধ আছে। তবে মূল ভবনের ১০ তলায় প্লাস্টারসহ বিভিন্ন কাজ করছেন শ্রমিকেরা।

আরও পড়ুন

ভবনের কয়েকজন নিরাপত্তাকর্মী জানান, ধসে পড়া অংশে কাজ করা নিষেধ। তবে অন্য পাশে শতাধিক শ্রমিক কাজ করছেন। গত বুধ ও বৃহস্পতিবার শ্রমিকেরা ধসে পড়া ভবনের বিভিন্ন জিনিসপত্র সরিয়ে নিচ্ছিলেন। আলামত নষ্ট হয়ে যেতে পারে বলে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রচারিত হওয়ায় সেই কাজ বন্ধ রেখেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মজিদ সন্স কনস্ট্রাকশন লিমিটেড।

এদিকে তদন্ত না করেই ভবনে কাজ শুরু করা ঝুঁকিপূর্ণ বলে মন্তব্য করেছেন রাকসু আন্দোলন মঞ্চের আহ্বায়ক আবদুল মজিদ অন্তর। তিনি বলেন, অনিয়মের ফলে ভবনের একটা অংশ ধসে পড়েছে। পুরো ভবনটিই এখন ঝুঁকিপূর্ণ মনে হচ্ছে। বিশেষজ্ঞ প্রকৌশলী দ্বারা পরীক্ষা-নিরীক্ষা না করে কাজ শুরু করলে যেকোনো সময় আবার বিপদ হতে পারে। যাচাই-বাছাই করে কাজ শুরু করার আহ্বান জানান তিনি।

আরও পড়ুন

বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন খান বলেন, নিম্নমানের পণ্য ব্যবহার ও নিরাপত্তা সুরক্ষা না মানায় ভবনধসের কারণ হতে পারে। বিষয়টি তদন্ত হওয়ার আগেই ওই ভবনে কাজ শুরু করার অনুমতি দেওয়া মোটেই সমীচীন হয়নি। কোথায় কী ধরনের পণ্য ব্যবহার করা হয়েছে, সেটি বিশেষজ্ঞদের দ্বারা গঠিত তদন্ত কমিটির সুপারিশ নিয়ে কাজ করার অনুমতি দেওয়া উচিত ছিল।

এর আগে গত মঙ্গলবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের মাদার বখশ হলের সামনে নির্মাণাধীন শহীদ এ এইচ এম কামারুজ্জামান হলের ভবনের একাংশ ধসে পড়ে। এ ঘটনায় ৯ জন আহত হন। ওই দিন রাতেই জরুরি সভা ডেকে ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের একটি কমিটি করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। কমিটিকে সাত কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়। তবে ঘটনার চার দিন পার হলেও আজ পর্যন্ত তদন্ত কমিটির কাছে চিঠি পৌঁছায়নি। কমিটির সদস্যরা বলছেন, আনুষ্ঠানিকভাবে এখন পর্যন্ত তাঁরা কোনো চিঠি পাননি। তাই এখনো তদন্তের কাজ শুরু করতে পারেননি।

আরও পড়ুন

বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিকল্পনা ও উন্নয়ন দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মজিদ সন্স কনস্ট্রাকশন লিমিটেড রূপপুরের ‘বালিশ-কাণ্ড’ ঘটনায় আলোচিত। বিভিন্ন সময় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ উঠেছে। এর আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্মাণাধীন দুই ভবনে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে দুজন শ্রমিকের মৃত্যু হয়। দুটি ভবনেরই কাজ করেছে মজিদ সন্স কনস্ট্রাকশন লিমিটেড।