ভূমিকম্পে জাহাঙ্গীরনগরের নতুন হলে ফাটল, ঝুঁকির কিছু নেই বলছেন প্রকল্প পরিচালক
গতকাল শুক্রবারের ভূমিকম্পে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নবনির্মিত শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ হলসহ কয়েকটি হলে ফাটল দেখা দিয়েছে। তবে হলের দেয়াল বা মেঝেতে ফাটলে ঝুঁকিপূর্ণ কিছু নেই বলে জানিয়েছেন অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পের পরিচালক (পিডি) পরিচালক নাসির উদ্দীন।
গতকাল সকাল ১০টা ৩৮ মিনিটে ভূকম্পন অনুভূত হয়। আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, রিখটার স্কেলে এই ভূমিকম্পের তীব্রতা ছিল ৫ দশমিক ৭। এর উৎপত্তিস্থল নরসিংদীর মাধবদী।
ভূমিকম্পের পর বিভিন্ন আবাসিক হলের শিক্ষার্থীরা তাঁদের স্ব স্ব হলের বিভিন্ন ফাটলের ছবি ও ভিডিও ফেসবুকে ছেড়ে ক্ষোভ প্রকাশ করতে থাকেন। এসব পোস্টে তাঁরা নতুন হলগুলো নির্মাণে দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ তোলেন। এরপর গতকাল বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকল্প কার্যালয়, সহ-উপাচার্য (প্রশাসন) ও জাকসুর নেতৃবৃন্দ সরেজমিনে হলগুলো পরিদর্শন করেন। তবে হলগুলোতে যে ফাটল দেখা গিয়েছে তাতে কোনো ঝুঁকি নেই বলে জানিয়েছেন প্রকল্প পরিচালক নাসির উদ্দীন।
আজ শনিবার সকালে নাসির উদ্দীন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা হলগুলো পরিদর্শন করেছি। এর মধ্যে শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ ও জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম হলে ফাটল দেখেছি। তবে সেগুলো মেঝেতে ফাটল। একটি ভবনের ফ্লোরে ও দেয়ালে ফাটল ধরতেই পারে। যদি কোনো ভবনে স্ট্রাকচারাল এলিমেন্ট ঠিক থাকে (কলাম, বিম, ভিত) তাহলে সেগুলোতে কোনো ঝুঁকি নেই। ভূমিকম্পে যেসব ফাটল ধরেছে সেগুলো স্ট্রাকচারাল এলিমেন্টজনিত সমস্যা নয়। তারপরও আমরা প্রশাসনকে বলেছি, যদি কোনো অভিযোগ থাকে তাহলে বুয়েটের এক্সপার্ট টিম দিয়ে খতিয়ে দেখা যেতে পারে। সব কাজই স্বচ্ছভাবে হয়েছে।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ভূমিকম্পে বিশ্ববিদ্যালয়ে নবনির্মিত শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ হলের নবম তলার ফ্লোরে ফাটল দেখা গেছে। এ ছাড়া জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম হলে ৬ তলার বি-ব্লকের ওয়াশরুমে এবং ৭ তলার ফ্লোরে ফাটল দেখা গেছে। নবনির্মিত ফজিলতুন্নেসা হলেও ফাটল দেখা দিয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ১০ তলা বিশিষ্ট ৬টি আবাসিক হলের নির্মাণকাজ শেষ হয় ২০২৩ সালের নভেম্বর মাসে। এসব নবনির্মিত হলের মধ্যে ভূমিকম্পে শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ হল, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম হল ও ফজিলতুন্নেসা হলের বিভিন্ন জায়গায় ফাটল ধরেছে। এ ছাড়া ২০১৮ সালে নির্মাণকাজ শেষ হওয়া বেগম সুফিয়া কামাল হলেও অনেক স্থানে ফাটল দেখা গেছে। নবনির্মিত এসব বহুতল ভবন নির্মাণে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ তুলেছেন শিক্ষার্থীরা।
ভূমিকম্পের পর হল পরিদর্শনের সময় উপস্থিত ছিলেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদের (জাকসু) সমাজসেবা সম্পাদক আহসান লাবিব। তিনি বলেন, সামান্য কয়েক সেকেন্ডের ভূমিকম্পে নতুন হলগুলোতে এই পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বড় ধরনের ভূমিকম্প হলে কী পরিমাণ ক্ষতি হতে পারে, চিন্তাই করা যাচ্ছে না। এসব হল নির্মাণে ব্যাপক লুটপাট এবং দুর্নীতি হয়েছে, না হলে নতুন হলগুলোতে ফাটল ধরার কথা নয়।
সার্বিক বিষয়ে জানতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য (প্রশাসন) ও ইঞ্জিনিয়ারিং কার্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক অধ্যাপক সোহেল আহমেদের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।