কুমার নদ থেকে উদ্ধার হওয়া কঙ্কালটি নিখোঁজ শিক্ষার্থী মারিয়ার, দাবি মাগুরা পুলিশের

নিহত শিক্ষার্থী মারিয়া খাতুন
ছবি: সংগৃহীত

মাগুরার গাংনালিয়া সেতুর নিচে কুমার নদ থেকে গত ১৫ নভেম্বর একটি মরদেহের কঙ্কাল উদ্ধার হয়। পুলিশ বলছে, ওই কঙ্কালটি গত ১৭ অক্টোবর মাগুরা মহিলা কলেজে ভর্তি হতে বাড়ি থেকে বেরিয়ে নিখোঁজ হওয়া মারিয়া খাতুন (১৯) নামের এক শিক্ষার্থীর। কঙ্কালের সঙ্গে পাওয়া একটি ঘড়ি ও কাপড়ের টুকরা দেখে মারিয়ার স্বজনেরা মরদেহটি শনাক্ত করেন। এই হত্যা ও লাশ গুমের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে গতকাল বুধবার বিকেলে মেয়েটির এক ‘বন্ধু’ ও তাঁর বাবাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। আজ বৃহস্পতিবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে পুলিশ।

গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন জেলার শ্রীপুর উপজেলার দুর্গাপুর গ্রামের বাসিন্দা শশী আহম্মেদ ওরফে নিশান (১৯) ও তাঁর বাবা নবুয়াত আলী মোল্যা (৪৬)। পুলিশ জানায়, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ওই দুজন ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন। তাঁরা আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে রাজি হন। তবে আজ দুপুরে মাগুরা জেলা ও দায়রা জজ আদালতে পাঠানোর পর তাঁরা স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেননি।

আরও পড়ুন

নিহত মারিয়া মাগুরা সদর উপজেলার মো. আসাদুজ্জামানের মেয়ে। তিনি মাগুরা সরকারি মহিলা কলেজ থেকে এবার উচ্চমাধ্যমিক পাস করেছিলেন। স্বজনেরা জানান, গত ১৭ অক্টোবর মাগুরা সরকারি মহিলা কলেজে ডিগ্রিতে ভর্তি হতে বাড়ি থেকে বের হন মারিয়া। কলেজের কাজ শেষে বেরিয়ে নিখোঁজ হন তিনি। পরদিন তাঁর ভাই মো. জহিরুল ইসলাম মাগুরা সদর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। গত ২৭ নভেম্বর পুলিশ নিখোঁজ শিক্ষার্থীর পরিবারকে একটি ঘড়ি ও কাপড়ের টুকরা দেখায়। ওই ঘড়ি ও কাপড়ের টুকরা ১৫ নভেম্বর সদর উপজেলার গাংনালিয়া সেতুর নিচে কুমার নদ থেকে উদ্ধার হওয়া কঙ্কালের সঙ্গে পাওয়া যায়।

মরিয়ার এই হাতঘড়ি পড়ে ছিল কঙ্কালের পাশে
ছবি: সংগৃহীত

জহিরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘ওই কাপড়ের টুকরা ও ঘড়ি দেখে আমরা নিশ্চিত হই লাশটি আমার বোন মারিয়ার। কঙ্কালের সঙ্গে যে কাপড়ের টুকরা পাওয়া গেছে, ওই পোশাকটি আমার স্ত্রী বাসায় তৈরি করেছিল। এ কারণে কাপড়ের কিছু অংশ বাড়িতে ছিল। আর যে ঘড়ি পাওয়া গেছে, সেইটা আমার এক চাচাতো বোন মারিয়াকে কিনে দিয়েছিল। এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের বিচার চাই আমরা।’

আরও পড়ুন

মাগুরার পুলিশ সুপারের কার্যালয় থেকে দেওয়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ১৫ নভেম্বর সকালে জাতীয় জরুরি সেবা নম্বরে (৯৯৯) একটি বস্তা ও মানুষের কঙ্কাল পড়ে থাকার সংবাদ আসে। খবর পেয়ে মাগুরা সদর থানা-পুলিশ গাংনালিয়া ও বরিশাট গ্রামসংলগ্ন কুমার নদের সেতুর নিচ থেকে বস্তাবন্দী তোশকের পাশে মানুষের মাথার খুলি, শরীরের বিভিন্ন অংশের হাড়সহ লাশের ২৫টি টুকরা উদ্ধার করে। তাৎক্ষণিকভাবে নিহতের পরিচয় শনাক্ত না হওয়ায় মাগুরা ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে ময়নাতদন্ত ও ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ শেষে পৌর গোরস্তানে অজ্ঞাত লাশ হিসেবে দাফন করা হয়। এ ঘটনায় ১৬ নভেম্বর সদর থানায় পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) নয়ন কুমার চৌধুরী অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে হত্যা ও লাশের পরিচয় নষ্ট করার অভিযোগে মামলা করেন। এরপর নিহতের পরিচয় শনাক্তে ও হত্যার রহস্য উদ্‌ঘাটনে তদন্তে নামে পুলিশ। ১৭ অক্টোবর নিখোঁজ মারিয়া খাতুনের পরিবারের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য পর্যালোচনা ও তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে হত্যারহস্য উদ্‌ঘাটন করে পুলিশ।

মারিয়া হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার শশী আহম্মেদ নিশান
ছবি: সংগৃহীত

পুলিশ জানায়, তারা তদন্তে জানতে পেরেছে, ঘটনার প্রায় এক সপ্তাহ আগে মারিয়ার সঙ্গে অভিযুক্ত শশী আহম্মেদের ফেসবুকে প্রেমের সম্পর্ক তৈরি হয়। শশী শহরের আদর্শ পাড়ায় একটি ভাড়া বাসায় থাকতেন। ঘটনার দিন ওই তরুণীকে ভুল বুঝিয়ে বাসায় ডেকে নিয়ে যান তিনি। পুলিশের ধারণা, সেখানেই হত্যা করা হয় মারিয়াকে। পরে তরুণীর মুঠোফোন একটি এলাকায় নিয়ে বন্ধ করা হয়। আর মরদেহটি তোশক দিয়ে পেঁচিয়ে এবং বস্তাবন্দী করে শশী তাঁর বাবার সহযোগিতায় রাতে গাংনালিয়া সেতুর ওপর থেকে কুমার নদে ফেলে দেন।

আরও পড়ুন

মামলাটির তদন্ত করছেন সদর থানা-পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) আলমগীর হোসেন। তিনি জানান, মারিয়ার একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্টের পাসওয়ার্ড উদ্ধার করে প্রবেশ করতে পেরেছে পুলিশ। সেখান থেকে নিশ্চিত হওয়া গেছে, ঘটনার দিন ও আগে কয়েক দিন একাধিকবার শশী আহম্মেদ নিশানের সঙ্গে ফেসবুক মেসেঞ্জারে অডিও ও ভিডিও কলে কথা হয়েছে মারিয়ার। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে ওই যুবক জানিয়েছেন, ঘটনার দিন মারিয়া তাঁর বাসায় এসে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং মারা যান। এমন পরিস্থিতিতে ভয়ে তিনি কাউকে না বলে লাশ গুম করার পরিকল্পনা করেন। মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আজ দুপুরে শশী আহম্মেদ ও তাঁর বাবা নবুয়াত আলী মোল্যাকে আদালতে সোপর্দ করে পুলিশ। অবশ্য আদালতে অভিযোগ স্বীকার করেননি তাঁরা।

জানতে চাইলে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. কলিমুল্লাহ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে বলেন, আদালত গ্রেপ্তার দুজনকে কারাগারে পাঠিয়েছেন। আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ড আবেদন করবে পুলিশ।

আরও পড়ুন