রাজশাহীর সমাবেশে লোকসমাগম ঠেকাতে হামলা-মামলার অভিযোগ

নওগাঁয় সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দিচ্ছেন জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু বক্কর সিদ্দিক। মঙ্গলবার দুপুরে শহরের কেডির মোড়ে দলীয় কার্যালয়ে
ছবি: প্রথম আলো

রাজশাহীতে বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশে লোকসমাগম ঠেকাতে বিএনপির নেতা–কর্মীদের ওপর হামলা ও তাঁদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেওয়া হচ্ছে। নওগাঁ জেলা বিএনপির নেতারা আজ মঙ্গলবার দুপুরে শহরের কেডির মোড়ে দলীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ করেন।

এর আগে সকাল ১০টায় জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের কাছে স্মারকলিপি দেয় বিএনপি। স্মারকলিপিতে নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি, জনমনে ভীতি সৃষ্টি এবং ভবিষ্যতে দলীয় কার্যালয়, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও যানবাহনে ক্ষতি করে বিএনপির নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেওয়া হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য দেন জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু বক্কর সিদ্দিক। তিনি অভিযোগ করে বলেন, আগামী ৩ ডিসেম্বর রাজশাহীতে বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশে নেতা-কর্মীদের অংশগ্রহণ ঠেকাতে সরকার বিভিন্ন অপকৌশলের আশ্রয় নিয়েছে। গত পাঁচ দিনে নওগাঁর বিভিন্ন উপজেলায় দলীয় নেতা-কর্মীদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা বিএনপির নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা, ভাঙচুর ও ককটেল বিস্ফোরণ করে উল্টো বিএনপির শতাধিক নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়েছে। এ পর্যন্ত বিএনপির সাতজন নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এ ছাড়া প্রতিদিন বাড়িতে বাড়িতে অভিযান চালানো হচ্ছে।

আরও পড়ুন

বিএনপির নেতা আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, গত বৃহস্পতিবার রানীনগর থানা বিএনপির কার্যালয়ে রানীনগর ইউনিয়ন বিএনপির দ্বিবার্ষিক সম্মেলন চলছিল। আওয়ামী লীগের কর্মীরা সেখানে হামলা চালিয়ে নেতা-কর্মীদের আহত করেন এবং দলীয় কার্যালয়ে ভাঙচুর করেন। তাঁরাই পরে বিএনপির নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়েছেন। ওই মামলায় গতকাল রাতে পাভেল ও মানিক নামের যুবদলের দুই কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, গত শনিবার রাতে পত্নীতলা উপজেলার নজিপুর পৌরসভায় আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে নিজেরা ভাঙচুর ও ককটেল বিস্ফোরণ করে বিএনপির নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়েছে। একই কায়দায় গতকাল রাতে মহাদেবপুরে ককটেল বিস্ফোরণ করেন আওয়ামী লীগের কর্মীরা। পরে বিএনপির নেতা-কর্মীদের নামে মামলা দিয়েছে। ওই মামলায় গতকাল মহাদেবপুর উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক এরশাদ আলীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

আরও পড়ুন

লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়, রাজশাহীতে বিভাগীয় সমাবেশ ঘিরে গতকাল সাপাহারের নিশ্চিন্তপুর বাজারে গণসংযোগ করছিলেন বিএনপির নেতা-কর্মীরা। সেখানে আওয়ামী লীগ হামলা চালিয়ে বিএনপির ১০-১২ জন নেতা-কর্মীকে আহত করে। রাতে ওই ঘটনায় বিএনপির নেতা–কর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করা হয়। ওই মামলায় রাতেই আবু বক্কর সিদ্দিক ও আবদুল কাহার নামের বিএনপির দুজন নেতাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

সংবাদ সম্মেলনে উল্লেখ করা হয়, আজ সকালে আত্রাই উপজেলার কাশিয়াবাড়ী বাজারে বিএনপির গণসংযোগ চলাকালে বিএনপির নেতা-কর্মীদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। হামলায় উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবদুল জলিলসহ ১০-১২ জন আহত হন। ওই হামলায় নেতৃত্ব দেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আক্কাস আলী।

আরও পড়ুন

আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, বিএনপির সমাবেশে গণজোয়ার দেখে সরকার ভয় পেয়েছে। রাজশাহী বিভাগ বিএনপির ঘাঁটি। আগামী ৩ ডিসেম্বর রাজশাহীতে বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশ। সেখানে বিএনপির নেতা-কর্মীদের অংশগ্রহণ ঠেকাতে সরকারের অপকৌশলের অংশ হিসেবে নওগাঁয় বিএনপির নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা ও বিএনপির কর্মসূচিতে হামলা চালানো হচ্ছে।

সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও নওগাঁ পৌরসভার মেয়র নজমুল হক, জেলার সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম, জেলা বিএনপির সদস্যসচিব বায়েজিদ হোসেন, যুগ্ম আহ্বায়ক শেখ রেজাউল ইসলাম, মামুনুর রহমান, আমিনুল ইসলাম, শফিউল আজম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

বিএনপির অভিযোগের বিষয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল মালেক প্রথম আলোকে বলেন, বিএনপির নেতারা আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে মিথ্যাচার করছেন। গতকাল রাতে মহাদেবপুরে আওয়ামী লীগের কার্যালয়ের সামনে বিএনপির মুখোশধারী সন্ত্রাসীরা ককটেল বিস্ফোরণ করেছে। এ ছাড়া পত্নীতলায় আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে হামলা করেন বিএনপির নেতা-কর্মীরা। দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে বিএনপি এসব করে উল্টো আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে অভিযোগ করছে।