রাজশাহীতে বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশের আগে প্রতিটি থানার পুলিশ নেতা–কর্মীদের বাড়ি বাড়ি তল্লাশি করছে বলে অভিযোগ করেছেন দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মিজানুর রহমান মিনু। তিনি বলেছেন, ‘আওয়ামী লীগের লোকজন কোথাও অকারণে বোমা ফাটাচ্ছে, বোমা রেখে দিচ্ছে। অতঃপর বিএনপির নামে সাজানো মামলা দেওয়া হচ্ছে। লোকজন জানতেও পারছে না, কী কারণে মামলা হয়েছে।’
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজশাহী নগরের একটি রেস্তোরাঁয় আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে মিজানুর রহমান এসব কথা বলেন। আগামী ৩ ডিসেম্বর অনুষ্ঠেয় গণসমাবেশকে কেন্দ্র করে রাজশাহী বিভাগে ‘গায়েবি মামলা ও নেতা–কর্মীদের আটক, পুলিশি হয়রানি, হামলা ও গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে’ এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সংসদ সদস্য হারুনুর রশিদ বলেন, পুলিশ যেভাবে বিএনপি নেতা–কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে যাচ্ছে সেখানে পুলিশ সাক্ষী পুলিশই বাদী। দেশের আইন সবার জন্য সমান। এর জন্য পুলিশকে আইনের আওতায় আসতে হবে। আগামী ৩ ডিসেম্বর জনগণ কোনো বাধাই মানবে না। রাজশাহী মাদ্রাসা মাঠ জনতার জোয়ারে পরিণত হবে।
লিখিত বক্তব্যে রাজশাহী বিভাগীয় গণসমাবেশ সমন্বয় কমিটির সভাপতি মিজানুর রহমান বলেন, দেশের ছয়টি বিভাগীয় শহরের ইতিমধ্যে গণমসমাবেশ শেষ হয়েছে। সেসব সমাবেশে সরকারের পক্ষ থেকে নজিরবিহীন বাধা, স্থল ও জলের সব প্রকার যানবাহন বন্ধ করে দেওয়ার পরও বিএনপি, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের রুখতে পারেনি।
রাজশাহীর গণসমাবেশ নিয়েও গভীর ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে বলে অভিযোগ করেন সাবেক সংসদ সদস্য মিজানুর রহমান। তিনি বলেন, অন্য বিভাগীয় শহরে কোনো প্রকার মামলা হয়নি। সেখানে ব্যাপক পরিমাণে জনসমাবেশ হয়েছিল। সব বিভাগীয় শহরকে ছাড়িয়ে রাজশাহীর গণসমাবেশ জনসমুদ্রে পরিণত করা হবে। এ জন্য যদি বুক থেকে তাজা রক্ত পিচঢালা পথে ঢেলে দিতে হয়, তাতে নেতা–কর্মীরা রাজি আছেন। সব বাধা উপেক্ষা করে পুরো শহর মানুষে মানুষে ভরে যাবে।
রাজশাহী বিভাগে ইতিমধ্যে শতাধিক নেতা-কর্মীকে আটক করা হয়েছে উল্লেখ করে মিজানুর রহমান বলেন, রাজশাহীর গণসমাবেশ শান্তিপূর্ণভাবে করার জন্য যখন তাঁরা বিভাগের ৮ জেলা, ১ মহানগর, ৬৭টি উপজেলা ও থানায় প্রাথমিকভাবে প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছেন, তখনই সরকার নতুন মাত্রার অত্যাচার ও নির্যাতনের ফর্মুলা নিয়ে হাজির হয়েছে। তিনি বলেন, গতকাল বুধবার চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলায় বিভাগীয় সমবেশের প্রস্তুতিমূলক সমন্বয় সভায় পুলিশ অতর্কিত হামলা করে বিনা কারণে ১৫ নেতা–কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে। তিনি আরও বলেন, বিএনপির কোনো নিষিদ্ধ সংগঠন নয় যে গোপন বৈঠক করবে।
সরকারের বেআইনি আদেশ পালনে প্রশাসন ও পুলিশ বাধ্য নয় উল্লেখ করে পুলিশের উদ্দেশে মিজানুর রহমান বলেন, ‘অতি উৎসাহী ভূমিকার কারণে গণদুশমনে পরিণত হবেন না।’ দেশের চলমান গণতান্ত্রিক আন্দোলনে শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখতে আইনসংগত ও সংবিধানসম্মত দায়িত্ব পালন করার জন্য প্রশাসনের প্রতি অনুরোধ করেন তিনি।
মিজানুর রহমান আরও বলেন, রাজশাহী বিভাগীয় গণসমাবেশের আগে প্রশাসন ও পুলিশের অত্যচার–নির্যাতন, ত্রাস এমন এক ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে, উপজেলা পর্যয়ে বিএনপির কোনো নেতা–কর্মী এলাকায় থাকতে পারছেন না। মানুষের সঙ্গে কোনো প্রকার যোগাযোগ পর্যন্ত করতে পারছেন না।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির রাজশাহী বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু বলেন, রাজশাহী বিভাগের ৬৩টি থানার মধ্যে ৪৩টি থানায় ইতিমধ্যে মামলা দেওয়া হয়েছে। বাকিগুলো হয়তো আগামী কয়েক দিনের মধ্যে দেবে। সরকার যত বাধাই দিক রাজশাহীর সমাবেশ হবে সেরা সমাবেশ।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সাবেক সংসদ সদস্য শাহজাহান মিয়া, কেন্দ্রীয় বিএনপির বন ও পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক ও রাজশাহী সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র মোহাম্মদ মোসাদ্দেক হোসেন, রাজশাহী বিভাগীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ শাহীন শওকত, ত্রাণ ও পুনর্বাসনবিষয়ক সহসম্পাদক শফিকুল হক, রাজশাহী জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সাঈদ চাঁদ, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম, মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা এরশাদ আলী ঈশা, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক নজরুল হুদা, সদস্যসচিব মামুনুর রশিদ প্রমুখ।