নেত্রকোনার কলমাকান্দায় গুমাই নদে ট্রলারডুবির পর ধরমপাশার মধ্যনগর বাজার থেকে নেত্রকোনার ঠাকুরাকোনা বাজার পর্যন্ত নৌপথে দুই দিন ধরে ট্রলার চলাচল বন্ধ রয়েছে। গত বুধবারের ওই নৌ দুর্ঘটনায় আজ শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত ১২ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে ১১ জনের বাড়ি সুনামগঞ্জের ধরমপাশা উপজেলায় এবং একজনের বাড়ি নেত্রকোনা সদর উপজেলার মেদনী গ্রামে। এখন যাত্রীবাহী ট্রলার চলাচল বন্ধ থাকায় ধরমপাশার মধ্যনগর, চামরদানী ও পাশের কলমাকান্দা উপজেলার বড়খাপন ইউনিয়নের মানুষজনকে যাতায়াতে ভীষণ দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
মধ্যনগর থানা-পুলিশ, ট্রলারচালক ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, প্রায় ৪০ বছর ধরে ধরমপাশা উপজেলার মধ্যনগর বাজার থেকে নেত্রকোনা সদর উপজেলার ঠাকুরাকোনা বাজার পর্যন্ত নৌপথে যাত্রীবাহী ট্রলার চলাচল করে আসছে। আগে প্রতিদিন ১৫-২০টি ট্রলার চলাচল করত। তবে ক্রমে সড়ক যোগাযোগব্যবস্থা ভালো হওয়ায় এই নৌপথে যাত্রীবাহী ট্রলার চলাচলের সংখ্যা কমে গেছে। পাঁচ-ছয় বছর হলো মধ্যনগর বাজার থেকে প্রতিদিন মাত্র দুটি ট্রলার চলাচল করছে। এর একটি সকাল সাড়ে সাতটার দিকে এবং অপরটি বেলা সাড়ে ১১টার দিকে মধ্যনগর বাজার থেকে ঠাকুরাকোনা বাজারের উদ্দেশে যাত্রী নিয়ে নৌপথে ছেড়ে যাচ্ছে।
এই নৌপথে ঠাকুরাকোনা হয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে মানুষজন যাতায়াত করে থাকে। মধ্যনগর থেকে প্রতিদিন শতাধিক যাত্রী ট্রলারে চলাচল করে থাকে। কিন্তু বুধবার সকালে নেত্রকোনার কলমাকান্দা উপজেলার বড়খাপন ইউনিয়নের রাজনগর গ্রাম লাগোয়া গুমাই নদে বালুবাহী বাল্কহেড নৌকার সঙ্গে ৩০-৩৫ জন যাত্রীবোঝাই ট্রলারটির সংঘর্ষ হলে ট্রলারটি সেখানে ডুবে যায়। ঘটনার দিন স্থানীয় লোকজন ওই নদ থেকে ১০ জনের লাশ উদ্ধার করেন। আজ শুক্রবার দুপুরে ধরমপাশা উপজেলার পাইকুরাটি ইউনিয়নের হলদির হাওর থেকে ভাসমান অবস্থায় আরও দুজনের লাশ উদ্ধার করা হয়।
মধ্যনগর বাজারের বাসিন্দা ও ব্যবসায়ী আলাউদ্দিন বলেন, মধ্যনগর বাজার থেকে ঠাকুরাকোনা বাজার পর্যন্ত ট্রলারে জনপ্রতি ভাড়া লাগে ৮০ টাকা। আর সড়কপথে সেখানে পৌঁছাতে খরচ হয় ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা। ট্রলারে সময়ও কম লাগে। মালামালও পরিবহন করা যায়। মধ্যনগর বাজার থেকে যাত্রীবাহী ট্রলার চলাচল দুই দিন ধরে বন্ধ থাকায় মানুষজন ভীষণ দুর্ভোগে পড়েছে। পাশাপাশি সড়কপথে ঠাকুরাকোনা পর্যন্ত যেতে টাকাও বেশি লাগছে। কর্তৃপক্ষকে এ ব্যাপারে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান তিনি।
ধরমপাশার মধ্যনগর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ৫ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য ও মধ্যনগর বাজার ট্রলারচালক সমিতির সভাপতি আরশাদ মিয়া বলেন, ‘বুধবার সকালে ট্রলারডুবির ঘটনায় আমি নিজেও স্বজনহারা হয়েছি। কীভাবে যাত্রীদের নিরাপদে গন্তব্যস্থলে পৌঁছে দেওয়া যায়, সেই বিষয়টি নিয়ে ট্রলারচালকদের সঙ্গে কথা বলেছি। আশা করছি রোববার থেকে এই নৌপথে আবার ট্রলার চলাচল শুরু করা সম্ভব হবে।’
মধ্যনগর ইউপি চেয়ারম্যান প্রবীর বিজয় তালুকদার বলেন, ‘ট্রলারডুবিতে নিহত ১২ জনের মধ্যে আমার ইউনিয়নের বাসিন্দা রয়েছে ৯ জন। তাই কোনো কিছুতেই শান্তি পাচ্ছি না। নৌপথে ট্রলার চলাচলে যাত্রীসেবার মানোন্নয়নের বিষয়টি নিয়ে আমি ট্রলার চালকসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলেছি।’
মধ্যনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল্লাহ আল মামুন প্রথম আলোকে বলেন, ‘জোড়াতালি দেওয়া কোনো ট্রলার মধ্যনগর টু ঠাকুরাকোনা নৌপথে চলাচল যাতে না করতে পারে, সেদিকে আমাদের বিশেষ নজরদারি রয়েছে। এ ছাড়া প্রতিটি নৌযানে যাতে যাত্রীদের জন্য প্রয়োজনীয় নিরাপত্তাসামগ্রী রাখার ব্যবস্থা থাকে, সে জন্য মধ্যনগর বাজার ঘাটে থাকা ট্রলার ও স্পিডবোটচালকদের সঙ্গে কথা বলেছি। সরকারি নির্দেশনা যারা অমান্য করবে, তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’