ঢাকায় আজ বছরের সর্বোচ্চ বায়ুদূষণ

বায়ুদূষণফাইল ছবি

ঢাকায় আজ শুক্রবার সকাল ১০টার দিকে চলতি বছরের সর্বোচ্চ বায়ুদূষণ ছিল। বায়ুদূষণে বিশ্বের ১০০ শহরের মধ্যে ঢাকার অবস্থান ছিল প্রথম। আর আইকিউএয়ারের বাতাসের মানসূচকে (এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স-একিউআই) ঢাকার স্কোর ছিল ৪৪০। এ স্কোরকে ‘দুর্যোগপূর্ণ’ বলে গণ্য করা হয়।

বায়ুদূষণের এ পরিস্থিতি নিয়মিত তুলে ধরে সুইজারল্যান্ডভিত্তিক প্রতিষ্ঠান আইকিউএয়ার। বাতাসের মান নিয়ে তৈরি করা এই লাইভ বা তাৎক্ষণিক একিউআই সূচক একটি নির্দিষ্ট শহরের বাতাস কতটা নির্মল বা দূষিত, সে সম্পর্কে মানুষকে তথ্য দেয় ও সতর্ক করে।

বায়ুদূষণের উপাত্ত বিশ্লেষণ করে স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস)। প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার প্রথম আলোকে বলেন, একিউআই সূচকে যা স্কোর, সেই হিসাবে আজ ঢাকায় দূষণের মাত্রা এ বছরের মধ্যে সর্বাধিক। সরকারকে এখন ঢাকার বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে বিশেষ দৃষ্টি দিতেই হবে। সিটি করপোরেশনকে অবশ্যই পানি ছিটানোর মতো কাজগুলো করতে হবে। আজ ছুটির দিনে এমন স্কোর সত্যিই উদ্বেগজনক।

আইকিউএয়ারের দেওয়া আজকের তালিকায় বলা হয়েছে, ঢাকার বাতাসে অতিক্ষুদ্র বস্তুকণাই (পিএম ২.৫) দূষণের প্রধান উৎস। আজ ঢাকার বাতাসে যতটা এ বস্তুকণা আছে, তা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) মানদণ্ডের চেয়ে ৫৫ গুণের বেশি। বাতাসে এ অবস্থা থাকায় সবার জন্য পরামর্শ, আজ বাইরে বের হলে মাস্ক ব্যবহার করতে হবে।

বায়ুদূষণ বেশি হলে সবচেয়ে ঝুঁকিতে থাকেন সংবেদনশীল গোষ্ঠীর ব্যক্তিরা। তাঁদের মধ্যে আছেন বয়স্ক, শিশু, অন্তঃসত্ত্বা ও জটিল রোগে ভোগা ব্যক্তিরা। তাঁদের বিষয়ে বিশেষ যত্নবান হওয়া দরকার বলে পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের। আইকিউএয়ারের মানদণ্ড অনুযায়ী, স্কোর ৫১ থেকে ১০০ হলে তাকে ‘মাঝারি’ বা ‘গ্রহণযোগ্য’ মানের বায়ু হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ১০১ থেকে ১৫০ স্কোরকে ‘সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য অস্বাস্থ্যকর’ ধরা হয়।

স্কোর ১৫১ থেকে ২০০ হলে তা ‘অস্বাস্থ্যকর’ বায়ু। স্কোর ২০১ থেকে ৩০০ হলে তাকে ‘খুবই অস্বাস্থ্যকর’ বায়ু ধরা হয়। ৩০১ থেকে তার ওপরের স্কোরকে ‘দুর্যোগপূর্ণ’ বা ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ ধরা হয়। ঢাকায় গত জানুয়ারিতে সবচেয়ে বেশিসংখ্যক দিন দুর্যোগপূর্ণ বাতাসের মধ্যে কাটিয়েছে নগরবাসী। জানুয়ারির মোট ৯ দিন রাজধানীর বাতাসের মান দুর্যোগপূর্ণ ছিল, যা গত ৭ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ।

আজ বাতাসের যে স্কোর, তা বছরের যেকোনো সময়ের চেয়ে সর্বোচ্চ। পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোহাম্মদ আবদুল মোতালিব বলেন, ‘বায়ুদূষণে স্থানীয় পর্যায়ের উৎসগুলোর কথা আমরা স্বীকার করি না। কিন্তু ঢাকাসহ বাংলাদেশের বায়ুদূষণে উপমহাদেশীয় বায়ুপ্রবাহের একটা ভূমিকা আছে। এখন এই শীতকালে এর অবদান প্রায় ৫০ শতাংশ। এর বাইরে যানবাহন ও কলকারখানার ধোঁয়া আছে। যানবাহন ও ইটের ভাটার দূষণ নিয়ন্ত্রণে সরকার কাজ করছে।’

আরও পড়ুন

তবে পরিবেশবাদী ইকবাল হাবিব বলেন, ‘ঢাকার বায়ুদূষণে উপমহাদেশীয় বায়ুপ্রবাহের প্রভাব অস্বীকার করা যায় না। কিন্তু এটি এখন পরিবেশ অধিদপ্তরের রক্ষাকবচ হয়ে গেছে। স্থানীয় উৎস ও পরিবর্তনগুলোর দিকে কোনো নজর না দিয়ে তারা আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে ধ্বংস করে দিচ্ছে শারীরিকভাবে।’

আরও পড়ুন