সংবিধান সংশোধনের রাজনীতি—৮
রাজনৈতিক ঐকমত্য ছাড়াই তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা বাতিল
প্রজাতন্ত্রের সর্বোচ্চ আইন হলো সংবিধান। ১৯৭২ সালে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান প্রণয়ন করা হয়। গত ৫০ বছরে এ সংবিধান ১৭ বার সংশোধন করা হয়েছে। সংবিধান সংশোধন শুধু ‘তাত্ত্বিক’ বিষয় নয়, সব সময় এর একটি প্রেক্ষাপট ও উদ্দেশ্য থাকে। সংবিধান সংশোধনের প্রক্রিয়াটি পর্যালোচনা করলে স্পষ্ট হয়, এর সঙ্গে রাজনীতির সম্পর্ক খুব ঘনিষ্ঠ। বাংলাদেশের রাজনীতিতে গণতন্ত্রের সংকট, যেকোনোভাবে ক্ষমতায় টিকে থাকার চেষ্টা, সামরিক শাসন, সরকারগুলোর কর্তৃত্ববাদী প্রবণতা—এ সবকিছুই সংবিধান সংশোধন প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে প্রতিফলিত হয়েছে। সংবিধান সংশোধন নিয়ে আট পর্বের এই ধারাবাহিকের আজ প্রকাশিত হলো শেষ পর্ব।
‘সেনা-সমর্থিত’ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায় আসে ২০০৭ সালের জানুয়ারিতে। এরপর ২২ জানুয়ারির পূর্বনির্ধারিত নির্বাচন স্থগিত ঘোষণা করা হয়। নতুন ভোটার তালিকা ও ছবিযুক্ত জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরির পর ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচন হয়।
এতে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট বিপুল জয় পায়। আওয়ামী লীগ একাই ২৩০টি এবং মহাজোটের শরিক দলগুলো ৩২টি আসন পায়। অন্যদিকে বিএনপির নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট মাত্র ৩৩টি আসনে জয়ী হয়। এর মধ্যে বিএনপি ৩০টি এবং জোটসঙ্গীরা ৩টি আসন পেয়েছিল। ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি শেখ হাসিনা দ্বিতীয় মেয়াদে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেন। খালেদা জিয়া হন বিরোধীদলীয় নেতা।
পঞ্চদশ সংশোধনী
মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার বছরখানেক পর ২০১০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ জিয়াউর রহমানের আমলে করা পঞ্চম সংশোধনীকে অসাংবিধানিক ও অবৈধ ঘোষণা করে। এরপরই সংবিধান সংশোধনের তোড়জাড় শুরু হয়। আপাতদৃষ্টে মনে হয়েছিল, সামরিক শাসনামলে সংবিধানে যেসব পরিবর্তন আনা হয়েছিল, সেগুলো সংশোধনের জন্য ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এমন উদ্যোগ নিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্যেও তেমন ইঙ্গিত ছিল।
সংবিধান সংশোধনের জন্য ২০১০ সালের ২১ জুলাই ১৫ সদস্যের একটি বিশেষ সংসদীয় কমিটি করা হয়। প্রধান বিরোধী দল বিএনপির কাছে কমিটির জন্য নাম চাওয়া হলেও তারা এতে সাড়া দেয়নি। তাই ‘সর্বদলীয়’ বলা হলেও কমিটির সব সদস্যই ছিলেন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটের। তৎকালীন সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী ছিলেন কমিটির চেয়ারপারসন, কো–চেয়ারপারসন ছিলেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত। ২০১১ সালের ৫ জুন পর্যন্ত কমিটির সদস্যরা নিজেদের মধ্যে এবং রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিনিধি ও নানা শ্রেণিপেশার বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে মোট ২৭টি বৈঠক করে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গেও বৈঠক হয়।
এসব বৈঠকের গুরুত্বপূর্ণ একটি আলোচ্য বিষয় ছিল নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা। বৈঠকে অংশগ্রহণকারী বেশির ভাগ ব্যক্তিই কিছু সংস্কারসহ তত্ত্বাবধায়ক সরকার বহাল রাখার পক্ষে মত দিয়েছিলেন। ২০১১ সালের ২৭ এপ্রিল কমিটির ২০তম সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের প্রতিনিধিদল বিশেষ সংসদীয় কমিটির সভায় অংশ নেয়। সভায় প্রধানমন্ত্রী তিন মাসের সময়সীমা বেঁধে দিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বহাল রেখেই সংবিধান সংশোধনের প্রস্তাব দেন।
সপ্তাহ দুয়েক পর ১০ মে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের সংখ্যাগরিষ্ঠ বিচারপতি এক সংক্ষিপ্ত আদেশে ত্রয়োদশ সংশোধনীকে (তত্ত্বাবধায়ক সরকার) অসাংবিধানিক ঘোষণা করেন। তবে ক্রান্তিকালীন ব্যবস্থা হিসেবে রাষ্ট্র ও জনগণের নিরাপত্তার খাতিরে পরবর্তী দুটি জাতীয় সংসদ নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীন হতে পারে—এমন কথাও বলেন তাঁরা। আদালতের এই রায়ের পরেও তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বহাল রেখে বিশেষ কমিটি সর্বসম্মতভাবে একটি সুপারিশ তৈরি করে।
২০১১ সালের ৩০ মে বিশেষ সংসদীয় কমিটি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করে। পরে ৫ জুন কমিটি তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাদ দিয়ে সংবিধান সংশোধনের সুপারিশ চূড়ান্ত করে এবং ৮ জুন তা স্পিকারের কাছে পাঠায়। সংবিধানের এক-তৃতীয়াংশ অনুচ্ছেদের বেশি সংশোধনের প্রস্তাবসংবলিত কমিটির চূড়ান্ত সুপারিশ পঞ্চদশ সংশোধনী বিল হিসেবে ২৫ জুন তৎকালীন আইনমন্ত্রী শফিক আহমেদ সংসদে উত্থাপন করেন। সংসদে বাজেট অধিবেশন চলাকালে ৩০ জুন তা পাস হয়। সংশোধনীটি পাসের সময় বিএনপি-জামায়াতের সংসদ সদস্যরা অধিবেশনে অনুপস্থিত ছিলেন।
ত্রয়োদশ সংশোধনী নিয়ে আপিল বিভাগের দেওয়া একটি সংক্ষিপ্ত আদেশকে ‘বাধ্যবাধকতা’ হিসেবে দেখিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিলের উদ্যোগ নিয়েছিল। কিন্তু যে প্রেক্ষাপট ও প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে এ রায় দেওয়া হয়, তা বেশ কৌতূহলোদ্দীপক। যে মামলার সূত্র ধরে এ রায় দেওয়া হয়, সেটি ২০০৪ সাল থেকে আপিল বিভাগে শুনানির অপেক্ষায় ছিল।
২০১০ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর খায়রুল হক প্রধান বিচারপতি হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পরই এ মামলার শুনানির উদ্যোগ নেওয়া হয়। ২০১১ সালের ১ মার্চ শুরু হয়ে মাত্র ১০ কার্যদিবসে এমন গুরুত্বপূর্ণ একটি মামলার শুনানি শেষ হয় এবং বিচারপতি খায়রুল হকের অবসরে যাওয়ার মাত্র আট দিন আগে একটি সংক্ষিপ্ত আদেশ দেওয়া হয়। প্রায় ১৬ মাস পরে দেওয়া পূর্ণাঙ্গ রায়ের সঙ্গে সংক্ষিপ্ত আদেশের কিছু পার্থক্যও দেখা গেছে।
লক্ষণীয় বিষয়, আপিল বিভাগের সাত বিচারপতির মধ্যে তিনজন এবং ১০ অ্যামিকাস কিউরির মধ্যে আটজন তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিলের বিপক্ষে মত দিয়েছিলেন। ‘দ্য জুডিশিয়ালাইজেশন অব পলিটিকস ইন বাংলাদেশ: প্র্যাগমাটিজম, লেজিটিমেসি অ্যান্ড কনসিকুয়েন্সেস’ প্রবন্ধে সংবিধান বিশেষজ্ঞ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সাবেক শিক্ষক রিদওয়ানুল হক বলেছেন, রাজনৈতিক ঐকমত্যের ভিত্তিতে নির্বাচনকালীন ত্রয়োদশ সংশোধনী (তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা) করা হয়েছিল। এটি শুধু নীতিগত বিষয় নয়, এর সঙ্গে জাতীয় নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক সংকটও জড়িত। সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ (সংখ্যাগরিষ্ঠ বিচারক) যখন তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থাকে অবৈধ বলে ঘোষণা করেন, তখন তাঁরা এর রাজনৈতিক পরিণতির বিষয়টি বিবেচনা করেছিলেন কি না—প্রবন্ধে সে প্রশ্ন তুলেছেন তিনি।
তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল
পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল হয়ে যায়। এ সংশোধনীর মাধ্যমে সংসদের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগের ৯০ দিনের মধ্যে এবং সংসদ বহাল রেখে দলীয় সরকারের অধীন জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিধান করা হয়। প্রধান বিরোধী দল বিএনপি আওয়ামী লীগ সরকারের অধীন নির্বাচনে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। বিএনপির বর্জনের মধ্য দিয়ে ২০১৪ সালে ‘একতরফা’ নির্বাচন হয়। এতে ক্ষমতাসীন জোটের প্রার্থীরা ভোটের আগেই ৩০০ আসনের মধ্যে ১৫৩টিতে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছিলেন। আওয়ামী লীগ একাই ২৩৪টি আসন পায় এবং শেখ হাসিনার নেতৃত্বে তৃতীয় দফা সরকার গঠন করে। একইভাবে আওয়ামী লীগ সরকারের অধীন ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হয়, যাতে বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলো অংশ নেয়। প্রশ্নবিদ্ধ এ নির্বাচনে মহাজোট ২৮৮ আসনে জয়ী হয়। আওয়ামী লীগ আবার সরকার গঠন করে।
দলীয় সরকারের অধীন নির্বাচন নিয়ে অধ্যাপক আলী রীয়াজ ‘মোর দ্যান মিটস দ্য আই’ বইয়ে লিখেছেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থার বিলুপ্তি বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের সম্ভাবনাকে গুরুতরভাবে আঘাত করেছে। ২০১১ সাল পর্যন্ত ৯টি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মধ্যে ৪টি নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থার অধীন হয়েছে। এগুলোকে অবাধ ও সুষ্ঠু বলে বিবেচনা করা হয়। ...দলীয় সরকারের অধীন সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়—এই আশঙ্কা সত্য বলে প্রমাণিত হয়েছে ২০১৮ সালের নির্বাচনে। ওই নির্বাচনকে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো প্রহসনমূলক বলে বর্ণনা করেছে।
পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে বাহাত্তরের সংবিধানের অনেক কিছু ফিরিয়ে আনা হয়েছে—আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে এমন দাবি করা
হয়। কিন্তু এ সংশোধনীতে সামরিক শাসনামলের কিছু বিধান রেখে দেওয়া হয়েছে। ফলে অনেকে পঞ্চদশ সংশোধনীকে ‘অসংগতিপূর্ণ’ বলেছেন। যেমন—সংবিধানে একই সঙ্গে ধর্মনিরপেক্ষতা ও রাষ্ট্রধর্মের অবস্থান।
পঞ্চদশ সংশোধনী সম্পর্কে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক আসিফ নজরুল তাঁর ‘আওয়ামী লীগের শাসনকাল’ বইয়ে লিখেছেন, ‘...খালেদা জিয়া সংবিধান সংশোধন করে পছন্দমতো তত্ত্বাবধায়ক সরকার করতে চেয়েছিলেন। শেখ হাসিনা পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকারই বাদ দিয়ে দিয়েছেন। তবে তিনি আরও বহু কিছু করেছেন এই সংশোধনীর মাধ্যমে। তিনি জিয়া ও এরশাদের রাজনীতি কিছুটা দখল করেছেন এবং আরও যা ভয়াবহ, তিনি বাকশালকেও কিছুটা ধারণ করেছেন। অভূতপূর্ব পঞ্চদশ সংশোধনী তাই হয়ে উঠেছে বাংলাদেশের প্রতিটি আমলের বিস্বাদ জগাখিচুড়ি।’
ষোড়শ সংশোধনী
এ সংশোধনীর মাধ্যমে বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতে ফিরিয়ে আনা হয়েছিল। বাহাত্তরের সংবিধানেও এমনটা ছিল। ১৯৭৫ সালে চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা এককভাবে রাষ্ট্রপতির হাতে দেওয়া হয়েছিল। ১৯৭৭ সালে জিয়াউর রহমান সামরিক ফরমানবলে সংবিধানের ৯৬ অনুচ্ছেদে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের বিধান অন্তর্ভুক্ত করেন। পরে পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে তা বৈধতা পায়। এতে বিচারকদের অপসারণের ক্ষমতা দেওয়া হয় জে৵ষ্ঠ বিচারপতিদের সমন্বয়ে গঠিত এ কাউন্সিলের কাছে।
২০১০ সালে উচ্চ আদালত পঞ্চম সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করলেও সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের বিধানটি বাতিল করেননি। এমনকি ২০১১ সালে পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে বাহাত্তরের সংবিধানের অনেক কিছু ফিরিয়ে আনা হলেও এ বিষয়টি অপরিবর্তিত ছিল। বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা আবার সংসদের হাতে ফিরিয়ে আনা–সংক্রান্ত সংশোধনীটি ২০১৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর সংসদে পাস হয়।
বাহাত্তরের সংবিধানে বিচারপতিদের অভিশংসনের ক্ষমতা সংসদের হাতে ছিল—এটা সত্য। কিন্তু সেই প্রেক্ষাপট এবং ২০১৪ সালের প্রেক্ষাপট ছিল সম্পূর্ণ আলাদা। বাহাত্তর সালে যখন সংবিধান প্রণয়ন করা হয়, তখন সবারই প্রত্যাশা ছিল—বাংলাদেশ একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হবে এবং অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের মাধ্যমে সংসদ সদস্যরা নির্বাচিত হবেন। কিন্তু ষোড়শ সংশোধনী এমন এক সময়ে পাস হয়, যার কয়েক মাস আগে দেশে একটি ‘একতরফা’ নির্বাচন হয়েছিল। সেই নির্বাচনে ১৫৩ প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছিলেন। এ কারণে ষোড়শ সংশোধনীকে অনেকেই বিচার বিভাগের ওপর সরকারের নিয়ন্ত্রণ জোরদারের কৌশল হিসেবেই দেখেছেন।
ষোড়শ সংশোধনী নিয়ে আদালতের রায়
ষোড়শ সংশোধনীর বিরুদ্ধে ২০১৪ সালের নভেম্বরে হাইকোর্টে একটি রিট হয়। ২০১৬ সালের ৫ মে আদালত ষোড়শ সংশোধনীকে অসাংবিধানিক বা অবৈধ বলে রায় দেন। হাইকোর্টের এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হয়। ২০১৭ সালের ৩ জুলাই এক আদেশে হাইকোর্টের সিদ্ধান্ত ‘সর্বসম্মতভাবে’ বহাল রাখেন আপিল বিভাগ। ফলে ষোড়শ সংশোধনী ‘বাতিল’ হয়ে যায়। তবে সরকার এ রায় নিয়ে রিভিউ আবেদন করেছে।
সপ্তদশ সংশোধনী
এ সংশোধনীর মাধ্যমে ৫০টি সংরক্ষিত নারী আসনের মেয়াদ আবার বাড়ানো হয়। ২০০৪ সালে অষ্টম সংসদে পাস হওয়া চতুর্দশ সংশোধনীর মাধ্যমে সংরক্ষিত নারী আসনের মেয়াদ নবম সংসদ থেকে কার্যকর করে ১০ বছর বাড়ানো হয়। নবম সংসদের কার্যক্রম শুরু হয় ২০০৯ সালের ২৫ জানুয়ারি থেকে। সেই হিসাবে ২০১৯ সালের ২৫ জানুয়ারি সংরক্ষিত নারী আসনের মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ছিল। এ অবস্থায় ২০১৮ সালের ৮ জুলাই সপ্তদশ সংশোধনীর মাধ্যমে সংরক্ষিত নারী আসনের মেয়াদ আরও ২৫ বছর বাড়ানো হয়।
শেষ কথা
বাংলাদেশে সংবিধান সংশোধনের প্রক্রিয়া ও এর প্রেক্ষাপট থেকে স্পষ্ট, ১৭টি সংশোধনীর মধ্যে কয়েকটি সংশোধনী ছিল ‘নির্দোষ’ এবং বাস্তব সমস্যার সমাধানে এসব সংশোধনী করা হয়েছে। বাকি সংশোধনী আনা হয়েছে ক্ষমতাসীনদের স্বার্থে। কখনো কখনো শুধু দলীয় স্বার্থে রাজনৈতিক ঐকমত্য ছাড়া সংবিধান সংশোধন করা হয়েছে। ফলে সংকট তৈরি হয়েছে, একতরফা বা প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচন হয়েছে এবং নির্বাচনব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে।
সংবিধান কোনো অনড় বা স্থির বিষয় নয়। তাই সংবিধানেই এর সংশোধনের সুযোগ রাখা হয়েছে। সংবিধানের যেকোনো পরিবর্তন দেশ ও জনগণের বৃহত্তর স্বার্থে হওয়া উচিত। গণতন্ত্র, নির্বাচন বা ভোটাধিকারকে হুমকির মুখে ফেলে সংবিধানের পরিবর্তন কাম্য নয়।
তথ্যসূত্র
১. রিদওয়ানুল হক, প্রবন্ধ: দ্য জুডিশিয়ালাইজেশন অব পলিটিকস ইন বাংলাদেশ: প্র্যাগমাটিজম, লেজিটিমেসি অ্যান্ড কনসিকুয়েন্সেস (আনস্টাবল কনস্টিটিউশনালিজম: ল অ্যান্ড পলিটিকস ইন সাউথ এশিয়া বইয়ে প্রকাশিত), কেমব্রিজ ইউনিভার্সিটি প্রেস
২. আলী রীয়াজ, মোর দ্যান মিটস দ্য আই, ইউপিএল
৩. আসিফ নজরুল, আওয়ামী লীগের শাসনকাল, অনন্যা
৪. সংবিধান সংশোধনে বিশেষ কমিটির কার্যবিবরণী ও সুপারিশ