রাজশাহী কলেজে দুই সাংবাদিককে ছাত্রলীগের মারধরের ঘটনায় সুষ্ঠু তদন্ত চায় সিপিজে
রাজশাহীতে সাংবাদিক আবদুল আলীম ও আবু সাইদ ওরফে রনিকে ছাত্রলীগ নেতা–কর্মীদের মারধরের ঘটনায় সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করেছে সাংবাদিকদের অধিকার রক্ষায় সোচ্চার বৈশ্বিক সংগঠন কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টস (সিপিজে)। গতকাল সোমবার এক বিবৃতিতে সিপিজে বলেছে, এ ঘটনায় তদন্ত করে দোষী ব্যক্তিদের জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে।
ঘটনার সূত্রপাত ৯ নভেম্বর, রাজশাহী কলেজ ক্যাম্পাসে। ক্লাসে অনুপস্থিত থাকার কারণে ছাত্রলীগের এক কর্মী ইনকোর্স পরীক্ষা দিতে পারবেন না জানতে পেরে ওই দিন কলেজের গণিত বিভাগে ভাঙচুর করেন ছাত্রসংগঠনটির অন্তত ২০ নেতা–কর্মী। এ ঘটনার ছবি তুলতে গেলে সাংবাদিক আবদুল আলীম ও আবু সাইদকে মারধর করা হয়। পরে আহত অবস্থায় তাঁদের রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
আবু সাইদ রাজশাহী কলেজ রিপোর্টার্স ইউনিটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও বাংলাদেশ জার্নালের জেলা প্রতিনিধি। আবদুল আলীম রিপোর্টার্স ইউনিটির সদস্য ও অনলাইন পত্রিকা রাজশাহী পোস্ট–এর স্টাফ রিপোর্টার। মারধরের এ ঘটনা জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ পায়। পরে আবদুল আলীম সিপিজের সঙ্গে কথা বলেন।
এ বিষয়ে সিপিজের এশিয়া শাখার সমন্বয়ক বেহ লিহ উয়ি বলেন, ‘কর্মক্ষেত্রে সাংবাদিক আবদুল আলীম ও আবু সাইদের ওপর যারা হামলা করেছে, মারধর করেছে, অবিলম্বে তাদের জবাবদিহির আওতায় আনার জন্য বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও রাজশাহী কলেজ কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানাই।’
বেগ লিহ আরও বলেন, ক্যাম্পাসে সাংবাদিকদের মারধর করা ছাত্রলীগ কর্মীদের খুবই বিরক্তিকর প্রবণতা। এর বিরুদ্ধে সরকারের শক্ত অবস্থান নেওয়া উচিত।
ঘটনার দিন রাজশাহী কলেজের গণিত বিভাগের শিক্ষার্থী ছাত্রলীগ কর্মী মাসুদ রানাকে ইনকোর্স পরীক্ষা দিতে না দেওয়ার কারণে উপাধ্যক্ষ ও কয়েকজন শিক্ষকের সঙ্গে ছাত্রলীগ কর্মীদের বাগ্বিতণ্ডা হয়। পরে বিভাগে ভাঙচুর চালান তাঁরা। খবর পেয়ে অধ্যক্ষ নিজে গিয়ে তাঁদের শান্ত করার চেষ্টা করেন। এ সময় সাংবাদিকেরা ছবি তুলতে গেলে মারধরের শিকার হন আবদুল আলীম ও আবু সাইদ।
আবদুল আলীম সিপিজেকে জানান, আবু সাইদ রাজশাহী কলেজের গণিত বিভাগের শিক্ষার্থী, পাশাপাশি সাংবাদিকতা করেন। ঘটনার সময় মারধরকারীরা আবু সাইদকে চিনতে পেরেছিলেন। তবে তিনি (আবদুল আলীম) ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী। তাই তাঁকে চিনতে পারেননি।
এ ঘটনায় রাজশাহীর বোয়ালিয়া থানায় অভিযোগ করেছেন আবু সাইদ। তবে পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে কি না, তা জানা যায়নি। ছাত্রলীগ কর্মী মাসুদ রানা ও বোয়ালিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সঙ্গে সিপিজের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হলে তাৎক্ষণিকভাবে তাঁরা কোনো প্রতিক্রিয়া জানাননি।
এর আগে গত ২৪ সেপ্টেম্বর প্রথম আলোর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি মোশাররফ শাহকে মারধর করেন ওই বিশ্ববিদ্যালয় শাখার ছাত্রলীগ কর্মীরা। মোশাররফ ছাত্রলীগের চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখার অভ্যন্তরীণ কোন্দল ও সংঘর্ষের বিষয়ে ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশ করে আসছিলেন। মারধরের সময় তাঁকে ছাত্রলীগ নিয়ে সংবাদ না করার জন্য হুমকি দেন হামলাকারীরা। এ ঘটনার পর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্ত করা হয়।