এলডিসি থেকে উত্তরণ
দশ চ্যালেঞ্জে পড়বে বাংলাদেশ
রপ্তানিসংক্রান্ত জাতীয় কমিটির বৈঠকে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার ইইউভুক্ত দেশগুলো থেকে জিএসপি প্লাস সুবিধা পেতে তৎপরতা শুরু হবে।
বাংলাদেশ ২০২৬ সালে স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে বের হওয়ার পর বাণিজ্যবিষয়ক ১০টি চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে। এর মধ্যে প্রথম চ্যালেঞ্জ হচ্ছে, বড় বাজার ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত (ইইউ) দেশগুলোতে তৈরি পোশাকের শুল্কমুক্ত বাজারসুবিধা হারাতে হতে পারে। দ্বিতীয় বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে, রপ্তানি বৃদ্ধির জন্য বর্তমানে যে নগদ সহায়তা দেওয়া হয়, তা এলডিসি থেকে উত্তরণের পর বাংলাদেশ আর দিতে পারবে না।
ইইউতে রপ্তানি হয় দেশের মোট রপ্তানির ৪৫ শতাংশ পণ্য। শুল্কমুক্ত বাজারসুবিধার বিকল্প হিসেবে ইইউর সঙ্গে জিএসপি প্লাস নিয়ে আলোচনা হচ্ছে, কিন্তু তা এখনো অনিষ্পন্ন। অথচ ইইউতে বাজারসুবিধা পাওয়া যাবে কি না, তা অনেকটাই নির্ভর করবে এই জিএসপি প্লাসের ওপর।
‘রপ্তানি আয় ২০২৪ সালে ৮ হাজার কোটি, ২০৩১ সালে ১৫ হাজার কোটি এবং ২০৪১ সালে ৩০ হাজার কোটি মার্কিন ডলারে উন্নীত করতে হবে। আমরা আশাবাদী। বিদ্যমান রপ্তানি আদেশে সংশোধনী আনা হবে। ২০২৬ সালের পর নগদ সহায়তা না থাকলেও রপ্তানি বৃদ্ধির স্বার্থে ব্যবসায়ীদের অন্যভাবে সহায়তা দেওয়া হবে।’তপন কান্তি ঘোষ, বাণিজ্যসচিব
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে গতকাল সোমবার ঢাকায় গণভবনে অনুষ্ঠিত রপ্তানিসংক্রান্ত জাতীয় কমিটির বৈঠকে এসব চ্যালেঞ্জের কথা তুলে ধরেন বাণিজ্যসচিব তপন কান্তি ঘোষ। চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার সম্ভাব্য করণীয়ও তুলে ধরেন তিনি।
বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের সারা বিশ্বে নতুন বাজার খুঁজতে হবে। আমাদের পণ্যে বৈচিত্র্য আনতে হবে, আমাদের রপ্তানি ঝুড়িতে নতুন পণ্য অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।’
চ্যালেঞ্জগুলো সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রীকে জানানো হয়, শুধু ইইউভুক্ত দেশ নয়, ভারত, চীন, জাপান, কানাডা প্রভৃতি দেশ থেকেও শুল্কমুক্ত বাজার প্রবেশাধিকার হারাবে বাংলাদেশ। এ ছাড়া উৎস বিধির অগ্রাধিকার থাকবে না, এলডিসি হিসেবে সেবা খাতের রপ্তানি সুবিধা ও বাণিজ্যবিষয়ক মেধাস্বত্বের বিধান পরিপালনের ধারা বাতিল হবে, বাংলাদেশকে সুবিধা দেওয়ার ক্ষেত্রে আইনকানুনের শিথিলতাও উঠে যাবে।
এ ছাড়া পরিবেশগত, সামাজিক ও সুশাসন সম্পর্কিত আইনের ধারাগুলো বাংলাদেশকে কঠোরভাবে মানতে হবে। এলডিসি হিসেবে বর্তমানে যেসব কারিগরি সহায়তা পাচ্ছে বাংলাদেশ, সেগুলোও বহাল থাকবে না।
চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার উপায় নিয়েও বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। রপ্তানি পণ্য বহুমুখীকরণের বিকল্প নেই উল্লেখ করে বৈঠকে বলা হয়, চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও পোশাক খাতের রপ্তানি বৃদ্ধির সুযোগ রয়েছে। যেমন ভূরাজনৈতিক কারণে চীন বাজার হারাচ্ছে। বাংলাদেশ এ সুযোগ নিতে পারে। এ ছাড়া বাংলাদেশের রপ্তানি সাধারণত প্রাকৃতিক তন্তুভিত্তিক। অথচ কৃত্রিম সুতায় তৈরি পণ্যেরও ভালো সম্ভাবনা আছে।
পোশাকের বাইরে চামড়াজাত পণ্য ও ফুটওয়্যার, পাট পণ্য, হালকা প্রকৌশল, কৃষি প্রক্রিয়াকরণ, তথ্যপ্রযুক্তি, প্লাস্টিক এবং ওষুধকে সম্ভাবনাময় খাত বলে চিহ্নিত করা হয়।
পণ্য বহুমুখীকরণকে উৎসাহিত করতে শুল্কনীতিকে যৌক্তিক করা, সম্পূরক শুল্ক ও নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক কমিয়ে আনা, প্রতিযোগিতা সক্ষমতা তৈরি করতে বিভিন্ন খাতের জন্য বন্ডেড ওয়্যারহাউস তৈরি করা এবং শুল্ক থেকে রাজস্ব আয় কমানোও চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার উপায় হতে পারে।
ইইউভুক্ত দেশগুলো থেকে ২০২৪-৩৩ মেয়াদে জিএসপি প্লাস সুবিধা পেতে শিগগির রাজনৈতিক তৎপরতা চালানো দরকার বলে প্রধানমন্ত্রীকে জানানো হয়। ভারত যাতে শুল্কমুক্ত বাজার সুবিধার সময় বাড়ায়, এ জন্য দেশটিকে অনুরোধপত্র লেখার সুপারিশও উঠে আসে।
শুল্কমুক্ত বাজার সুবিধা পেতে জাপান, কানাডা, দক্ষিণ কোরিয়া, চীন প্রভৃতি দেশ এবং আঞ্চলিক সমন্বিত অর্থনৈতিক সহযোগিতা চুক্তি (আরসিএপি), মার্কাসোরভুক্ত দেশগুলোর সঙ্গেও যোগাযোগ বাড়াতে হবে।
বৈঠকের পর বাণিজ্যসচিব তপন কান্তি ঘোষ প্রথম আলোকে বলেন, ‘রপ্তানি আয় ২০২৪ সালে ৮ হাজার কোটি, ২০৩১ সালে ১৫ হাজার কোটি এবং ২০৪১ সালে ৩০ হাজার কোটি মার্কিন ডলারে উন্নীত করতে হবে। আমরা আশাবাদী। বিদ্যমান রপ্তানি আদেশে সংশোধনী আনা হবে। ২০২৬ সালের পর নগদ সহায়তা না থাকলেও রপ্তানি বৃদ্ধির স্বার্থে ব্যবসায়ীদের অন্যভাবে সহায়তা দেওয়া হবে।’