পরিবেশবান্ধব কারখানায় শ্রমিকের জীবনমানও উন্নত করার তাগিদ

পরিবেশবান্ধব কারখানা স্থাপন করতে গিয়ে কাঁচামাল আমদানিসহ বিনিয়োগ ও নীতিগত বিভিন্ন সমস্যায় পড়ছেন বলে জানান কারখানার মালিকেরা।

বস্ত্র ও তৈরি পোশাক খাতে সবুজ শিল্পায়ন শীর্ষক সংলাপে বক্তারা। গতকাল রাজধানীর ব্র্যাক ইন সেন্টারেছবি: প্রথম আলো

দেশে বস্ত্র ও তৈরি পোশাক খাতে বর্তমানে পরিবেশবান্ধব কারখানার সংখ্যা ১৫৭। এই তালিকায় প্রতি মাসেই যুক্ত হচ্ছে নতুন নতুন প্রতিষ্ঠান। তবে শুধু পরিবেশবান্ধব কারখানা বানালেই হবে না, তার সঙ্গে শ্রমিকদের সার্বিক জীবনমানেরও উন্নয়ন করতে হবে। শ্রমিকেরা সুরক্ষা না পেলে এ উদ্যোগ পরিবেশবান্ধব বলা যাবে না।

রাজধানীর ব্র্যাক ইন সেন্টারে গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) আয়োজিত গতকাল রোববার এক সংলাপে এসব কথা বলেন শ্রমিকনেতারা। ঢাকার সুইডিশ দূতাবাসের সহযোগিতায় আয়োজিত এই সংলাপে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিবেশ বন ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী। এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন।

কর্মক্ষেত্রে নারীর অধিকার ঠিকভাবে বাস্তবায়িত হচ্ছে না বলে সভায় অভিযোগ করেন আওয়াজ ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক নাজমা আক্তার। তিনি বলেন, শুধু কারখানার উৎপাদন প্রক্রিয়া আর অবকাঠামো পরিবেশবান্ধব হলেই চলবে না, ভেতরের কাজের পরিবেশও সুন্দর করতে হবে। প্রতিষ্ঠানের মূল প্রাণ যারা, সেই শ্রমিকদের অধিকার আগে নিশ্চিত করতে হবে।

কর্মক্ষেত্রে এখনো যৌন হয়রানি বন্ধ হয়নি দাবি করে নাজমা আক্তার বলেন, ‘আমরা কাজ করতে গিয়ে প্রতিনিয়ত জানতে পারছি, কারখানাগুলোতে যৌন হয়রানির ঘটনা ঘটছে। পাশাপাশি অনেক কারখানায় নারীরা শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্র (ডে-কেয়ার) সুবিধা পান না।’ তিনি বলেন, পরিবেশবান্ধব কারখানায় শ্রমিকদের সংগঠন করার সুযোগ থাকতে হবে। প্লাটিনাম গোল্ড কারখানা দিয়ে কী হবে, যদি সে রকম জীবনমান শ্রমিকেরা না পায়।

সভায় পরিবেশবান্ধব কারখানা স্থাপন নিয়ে ব্যবসায়ীদের উদ্যোগকে স্বাগত জানান সাবের হোসেন চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘এই উদ্যোগ আমরা কেবল বস্ত্র ও পোশাক খাতে সীমাবদ্ধ রাখতে চাই না। অন্যান্য খাতেও পরিবেশের গুরুত্ব নিশ্চিত করতে হবে।’ সরকারি সহায়তার আশ্বাস দিয়ে তিনি বলেন, ‘আপনারা সবাই মিলে আমাদের কাছে একটি রোডম্যাপ দিন। সেটি বাস্তবসম্মত হলে সরকারের শীর্ষ পর্যায়ে এটা আমাদের দাবি হিসেবে উপস্থাপন করব।’

তৈরি পোশাকশিল্পের মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, দেশে বস্ত্র ও পোশাক খাতের ১৫৭টি পরিবেশবান্ধব কারখানার মধ্যে ৪৭টি প্লাটিনাম ও ৯৫টি গোল্ড ক্যাটাগরির। নিকট ভবিষ্যতে এই খাতে আরও ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে। অথচ এটি এখনো অবমূল্যায়িত। পরিবেশ সুরক্ষায় এ উদ্যোগকে সরকারের সহায়তা প্রয়োজন।

পরিবেশবান্ধব কারখানা নিয়ে সরকারের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে সমন্বয়হীনতা আছে বলে দাবি করেন ঢাকা চেম্বারের সাবেক সভাপতি শামস মাহমুদ। তিনি বলেন, ‘আমাদের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে সরকারের নানা দপ্তরে দৌড়ঝাঁপ করতে হয়। এই প্রক্রিয়া সহজ করতে হবে।’

করোনা পরিস্থিতির মধ্যে সব ধরনের খরচ বেড়ে গেছে। এই বাড়তি দামের সঙ্গে অনেক উদ্যোক্তা তাল মেলাতে পারছেন না বলে মন্তব্য করেন বিকেএমইএর নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম। তিনি বলেন, পরিবেশবান্ধব কারখানাগুলোকে দীর্ঘমেয়াদে ঋণসুবিধাসহ সরকারের আলাদা নীতিসহায়তা দেওয়া প্রয়োজন।

বিকেএমইএর সাবেক সভাপতি মো. ফজলুল হক বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে পরিবেশবান্ধব শিল্পের জন্য বড় তহবিল থাকলেও তা কেবল নতুন উদ্যোক্তারা পান। এই খাতের প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ীদের জন্যও সেই অর্থ প্রাপ্তির সুযোগ দেওয়া উচিত।

সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন বলেন, দেশের মোট রপ্তানির ৮৪ শতাংশের বেশি বস্ত্র ও তৈরি পোশাক খাত থেকে আসে। বাংলাদেশ যেহেতু ২০২৬ সালে উন্নয়নশীল দেশ হবে, সেহেতু শিল্প খাতের নানা পর্যায়ে পরিবেশগত সামঞ্জস্য নিশ্চিত করতে হবে।