এসএসসি ২০২২ - ভূগোল ও পরিবেশ | অধ্যায় ৮ : সৃজনশীল প্রশ্ন

অধ্যায় ৮

সৃজনশীল প্রশ্ন

রফিক সাহেব একটি এনজিওর মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তা। তিনি তার প্রতিষ্ঠানের কাজে দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের এক প্রত্যন্ত এলাকায় আছেন। এ এলাকার বসতি দেখে তার উপলব্ধি হয় যে ভূপ্রকৃতি ও যোগাযোগব্যবস্থার সীমাবদ্ধতা বসতি স্থাপনের অন্তরায়।

ক. পুঞ্জীভূত বসতি কাকে বলে?

খ. প্রাচীনকালে মানুষ কেন একত্রে বাস করত?

গ. বসতি স্থাপনের যে নিয়ামক দুটি রফিক সাহেবের উপলব্ধিতে আসে, তা ব্যাখ্যা করো।

ঘ. তুমি কি মনে করো উক্ত নিয়ামকদ্বয় ছাড়াও বসতি স্থাপনের আরও নিয়ামক রয়েছে? বিশ্লেষণ করো।

উত্তর

ক. কোনো এক স্থানে কয়েকটি পরিবার একত্র হয়ে বসবাস করাকে পুঞ্জীভূত বসতি বলে।

খ. প্রাচীনকালে প্রতিরক্ষার সুবিধার জন্যই মানুষ পুঞ্জীভূত বসতি স্থাপন করে। বহিরাগত শত্রুর আক্রমণ বা বন্য জন্তুর হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য মানুষ একত্রে বসবাস করত।

কারণ, প্রাচীনকালে আত্মরক্ষার জন্য কোনো আধুনিক অস্ত্রের প্রচলন ছিল না। তাই নিজেদের সুরক্ষিত রাখার জন্য তারা একত্রে বসবাস করত।

গ. দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে এনজিওতে কর্মরত রফিক সাহেবের উপলব্ধি হয় যে ভূপ্রকৃতি ও যোগাযোগব্যবস্থার সীমাবদ্ধতা বসতি স্থাপনের অন্তরায়। অর্থাৎ বসতি স্থাপনের নিয়ামক হিসেবে তিনি ভূপ্রকৃতি ও যোগাযোগব্যবস্থা উপলব্ধি করেন। কোনো স্থানে বসতি গড়ে ওঠার ক্ষেত্রে ভূপ্রকৃতি এবং যোগাযোগব্যবস্থা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। জনবসতি গড়ে ওঠার পেছনে ভূপ্রকৃতি ব্যাপকভাবে প্রভাব বিস্তার করে।

সমতল ভূমিতে কৃষিকাজ সহজে করা যায়। কিন্তু পাহাড়ি এলাকার ভূমি অসমতল হওয়ায় কৃষিকাজ করা তেমন সম্ভব হয় না। যাতায়াত সুবিধার কারণে মূলত কৃষিজমির কাছে জনবসতি তৈরি হয়। এ কারণে বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বে পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে বসতির ঘনত্ব সমতল ভূমির তুলনায় কম। উদ্দীপকে রফিক সাহেব এমনই এক এলাকায় কর্মরত। প্রাচীনকাল থেকে যাতায়াতব্যবস্থার ওপর ভিত্তি করে বসতি গড়ে উঠেছে। যেমন নদীতীরবর্তী স্থানে নৌ চলাচলের এবং সমতল ভূমিতে যাতায়াতের সুবিধা থাকায় এরূপ স্থানে পুঞ্জীভূত বসতি গড়ে উঠেছে।

ঘ. আমি মনে করি উক্ত নিয়ামকদ্বয় তথা ভূপ্রকৃতি ও যোগাযোগ ছাড়াও বসতি স্থাপনের আরও নিয়ামক রয়েছে। যেমন:

১. পানীয় জলের সহজলভ্যতা: জীবনধারণের জন্য মানুষের প্রথম ও প্রধান চাহিদা হলো বিশুদ্ধ পানীয় জল। এ জন্যই নির্দিষ্ট জলপ্রাপ্যতার স্থানে মানুষ বসতি গড়ে তোলে। মরুময় ও উপমরুময় অঞ্চলে ঝরনা অথবা প্রাকৃতিক কূপের চারদিকে মানুষ সংঘবদ্ধ হয়ে বসতি স্থাপন করে। পানীয় জলের প্রাপ্যতার ওপর নির্ভর করে গড়ে ওঠা এসব বসতিকে আর্দ্র অঞ্চলের বসতি বলে।

২. মাটি: মাটির উর্বরতা শক্তির ওপর নির্ভর করে বসতি স্থাপন করা হয়। উর্বর মাটিতে পুঞ্জীভূত জনবসতি গড়ে ওঠে, কিন্তু মাটি অনুর্বর হলে বিক্ষিপ্ত জনবসতি গড়ে ওঠে। মাটির প্রভাবে জার্মানি, পোল্যান্ড, নরওয়ে, সুইডেন প্রভৃতি দেশে বিক্ষিপ্ত জনবসতির সৃষ্টি হয়েছে।

৩. প্রতিরক্ষা: প্রাচীনকালে প্রতিরক্ষার সুবিধার জন্যই মানুষ পুঞ্জীভূত বসতি স্থাপন করে। বহিরাগত শত্রুর আক্রমণ বা বন্য জন্তুর হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য মানুষ একত্রে বসবাস করত। কারণ, প্রাচীনকালে আত্মরক্ষার জন্য কোনো আধুনিক অস্ত্রের প্রচলন ছিল না।

৪. পশুচারণ: পশুচারণ এলাকায় সাধারণত ছড়ানো বসতি দেখা যায়। পশুচারণের জন্য বড় বড় এলাকার দরকার হয়। ফলে নিজেদের সুবিধার জন্য তারা বিক্ষিপ্তভাবে বসতি স্থাপন করে থাকে।

মো. শাকিরুল ইসলাম, প্রভাষক, ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ, ঢাকা

এই অধ্যায়ের পূর্বের সৃজনশীল প্রশ্ন

১০ম অধ্যায়ের সৃজনশীল প্রশ্ন