রাজনৈতিক নীতি সমর্থনে প্রণোদনা, ৯ বিশ্ববিদ্যালয়কে ট্রাম্পের প্রস্তাবকে ‘ঘড়ি মেরামতে হাতুড়ি’ বললেন হার্ভার্ড প্রেসিডেন্ট
এবার সরকারি প্রণোদনার বিনিময়ে মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কাছে সমর্থন চাইলেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ট্রাম্প প্রশাসন ৯টি প্রধান বিশ্ববিদ্যালয়কে অনুরোধ করেছে, যেন তারা ট্রাম্পের রাজনৈতিক এজেন্ডার সঙ্গে একমত হয়। বিনিময়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো পাবে ফেডারেল অর্থায়নে বিশেষ সুবিধা। তবে এ প্রস্তাবের সমলোচনা হচ্ছে বিস্তর।
প্রস্তাবিত চুক্তির নাম রাখা হয়েছে ‘কমপ্যাক্ট ফর একাডেমিক এক্সেলেন্স ইন হায়ার এডুকেশন’। এতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে সরকারের নির্ধারিত সংজ্ঞা মেনে চলতে বলা হয়েছে, যা বাথরুম, লকার রুম এবং নারী ক্রীড়া দলগুলোর ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হবে। এ ছাড়া ভর্তি, নারী ক্রীড়া, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, ছাত্র শৃঙ্খলা ও উচ্চশিক্ষার খরচ নিয়ন্ত্রণসহ বিভিন্ন বিষয়ে প্রশাসনের দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
এই উদ্যোগ ‘একটি ঘড়ি মেরামত করতে হাতুড়ি ব্যবহারের মতো—অযৌক্তিক ও ক্ষতিকর’ল্যারি সামার্স, সাবেক মার্কিন অর্থমন্ত্রী ও হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসিডেন্ট
চুক্তির শর্তে আরও বলা হয়েছে, ভর্তি প্রক্রিয়ায় বর্ণ, লিঙ্গ বা অন্যান্য সামাজিক উপাত্ত বিবেচনা করা যাবে না এবং স্নাতক আবেদনকারীর জন্য স্যাট (SAT) বা এসিটি (ACT) পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করতে হবে।
১০ পৃষ্ঠার এই প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে ৯টি শীর্ষ পাবলিক ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে। যার মধ্যে রয়েছে ইউনিভার্সিটি অব পেনসিলভানিয়া, ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি, ইউনিভার্সিটি অব টেক্সাস এবং ইউনিভার্সিটি অব ভার্জিনিয়ার মতো উচ্চশিক্ষার প্রতিষ্ঠান। কেন এই প্রতিষ্ঠানগুলোকে বাছাই করা হয়েছে, তা স্পষ্ট নয়। সিদ্ধান্ত জানানোর শেষ তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে ২১ নভেম্বর।
নতুন কৌশল: প্রণোদনার মাধ্যমে রাজি করানো
এই পদক্ষেপ প্রশাসনের কৌশলের পরিবর্তন নির্দেশ করে। অর্থাৎ আগের মতো শুধু শাস্তি নয়, বরং পুরস্কারের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ট্রাম্পের রাজনৈতিক লক্ষ্য অর্জনের চেষ্টা করা হচ্ছে।
আগে তাঁর প্রশাসন হার্ভার্ড, কলম্বিয়া প্রভৃতি বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘উদারপন্থী পক্ষপাত’ অভিযোগ তুলে কয়েক শ কোটি ডলারের ফেডারেল অনুদান কেটে দিয়েছিল। তবে গত সেপ্টেম্বরে এক ফেডারেল বিচারক হার্ভার্ডের অনুদান কাটার সিদ্ধান্ত বাতিল করেন, কারণ তা সরকারের ক্ষমতার সীমা ছাড়িয়ে গেছে বলে রায় দেন।
বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় জানিয়েছে, তারা চুক্তির খসড়া পর্যালোচনা করছে এবং এখনই কোনো মন্তব্য করবে না। টেক্সাস বিশ্ববিদ্যালয় ব্যবস্থার চেয়ারম্যান কেভিন এল্টিফ বলেছেন, ‘আমরা সম্মানিত যে আমাদের অস্টিন ক্যাম্পাস এই কমপ্যাক্টের অন্তর্ভুক্ত হয়েছে এবং এর সম্ভাব্য অর্থায়ন সুবিধা নিয়ে আশাবাদী। আমরা ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী।’
রয়েছে নানা বিধিনিষেধ
চুক্তি অনুযায়ী, কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকে বিদেশিদের শিক্ষার্থীদের সংখ্যা ১৫ শতাংশের বেশি হতে পারবে না। এ ছাড়া কোনো একটি দেশ থেকে সর্বোচ্চ ৫ শতাংশ শিক্ষার্থী ভর্তি করা যাবে। বড় শর্তগুলোর একটি হলো ‘রক্ষণশীল মতাদর্শের বিকাশ’ ঘটাতে পদক্ষেপ নিতে হবে।
ফেডারেল তথ্য অনুযায়ী, ডার্টমাউথ ও ইউএসসির মতো কিছু বিশ্ববিদ্যালয় ১৪ শতাংশ সীমার কাছাকাছি থাকলেও বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠান এখনো এই সীমার মধ্যে রয়েছে। প্রায় ১২০টি বিশ্ববিদ্যালয় ১৫ শতাংশ ছাড়িয়েছে; যেমন কলম্বিয়া, এমোরি ও বোস্টন ইউনিভার্সিটি।
চুক্তিতে আরও বলা হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে এমন নীতি গ্রহণ করতে হবে, যা ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধের সময় দেখা প্রতিবাদগুলোর মতো বিক্ষোভ প্রতিরোধ করবে। শিক্ষার্থীরা যাতে ক্লাস, লাইব্রেরি বা অন্যান্য কর্মকাণ্ডে বাধা সৃষ্টি না করে, তা নিশ্চিত করতে হবে।
মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ওপর আঘাত, বলছেন সমালোচকেরা
আমেরিকান কাউন্সিল অন এডুকেশনের প্রেসিডেন্ট টেড মিচেল বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে এই চুক্তি প্রত্যাখ্যানের আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, এটি উচ্চশিক্ষার স্বাধীনতা নষ্ট করবে এবং মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে দুর্বল করবে। তিনি বলেন, ‘যে আপসগুলো করতে হবে, তার মূল্য কোনোভাবেই এই সুবিধার চেয়ে কম নয়। এটি একধরনের ফাউস্টিয়ান চুক্তি।’
স্বাধীন মতপ্রকাশ সংস্থা, শিক্ষক সংগঠন এবং সাবেক মার্কিন অর্থমন্ত্রী ও হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসিডেন্ট ল্যারি সামার্সও সমালোচনা করেছেন। সামার্স বলেছেন, যদিও তিনি মনে করেন শীর্ষ বিশ্ববিদ্যালয়গুলো দিক হারিয়েছে, তবু এই উদ্যোগ ‘একটি ঘড়ি মেরামত করতে হাতুড়ি ব্যবহারের মতো—অযৌক্তিক ও ক্ষতিকর’।