এবার আরও কিছু বইয়ে যুক্ত হচ্ছে জুলাই গণ-অভ্যুত্থান
বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয়, ইতিহাস ও বিশ্বসভ্যতা, বাংলা ও ইংরেজি বইয়ে যুক্ত হচ্ছে গণ–অভ্যুত্থান নিয়ে লেখা।
মাধ্যমিক স্তরের বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় এবং বাংলাদেশের ইতিহাস ও বিশ্বসভ্যতা বিষয়ের নতুন বইয়েও যুক্ত হচ্ছে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ওপর লেখা বিষয়বস্তু। আগামী জানুয়ারিতে শুরু হওয়া নতুন শিক্ষাবর্ষে বিনা মূল্যের এসব পাঠ্যবই হাতে পাবে শিক্ষার্থীরা। এর আগে এ বছরের মাধ্যমিকের বাংলা ও ইংরেজি পাঠ্যবইয়ে বিভিন্ন প্রবন্ধ ও কবিতা সংযোজিত হয়েছিল।
এ ছাড়া উচ্চমাধ্যমিক স্তরের বাংলা ও ইংরেজি পাঠ্যবইয়েও জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ওপর লেখা সংযোজন করা হচ্ছে। আগামী ১৫ সেপ্টেম্বর একাদশ শ্রেণির নতুন ক্লাস শুরু হওয়ার আগে পাঠ্যবই প্রকাশের প্রস্তুতি চলছে।
জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) সূত্রে জানা গেছে, গত সোমবার জাতীয় শিক্ষাক্রম সমন্বয় কমিটির (এনসিসিসি) বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত অনুমোদন পেয়েছে।
আশা করছি বছরের শুরুতেই সব শিক্ষার্থীর হাতে সব বই দিতে পারব। এবার এনসিটিবি থেকে বসেই মুদ্রণকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে সিসিটিভি ক্যামেরার মাধ্যমে তদারক করা হবে।
এনসিটিবি জানিয়েছে, আগামী বছর বিনা মূল্যে বিতরণের জন্য মোট বইয়ের সংখ্যা প্রায় ৩০ কোটি। এ মাসেই প্রাক্-প্রাথমিক স্তরের পাঠ্যবই ছাপার কাজটি শুরুর আশা করছে এনসিটিবি।
গত বছর ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যবই পরিবর্তনে হাত দেয়। নতুন শিক্ষাক্রম কার্যত বাদ দিয়ে ২০১২ সালে প্রণয়ন করা পুরোনো শিক্ষাক্রমের আলোকে পাঠ্যবই পরিমার্জন করা হয়। প্রথমে পাঠ্যবইয়ে জুলাই অভ্যুত্থানের গ্রাফিতি বা দেয়ালে আঁকা ছবি যুক্ত করার সিদ্ধান্ত হলেও পরে পঞ্চম শ্রেণি থেকে নবম-দশম শ্রেণির বাংলা ও ইংরেজি বিষয়ের বইয়ে জুলাই অভ্যুত্থানের বিষয়বস্তু নিয়ে কবিতা ও প্রবন্ধ বা গদ্য যুক্ত করার সিদ্ধান্ত হয়। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের বিষয়বস্তু সাহিত্যের ধাঁচে যুক্ত করে এ বছর শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন পাঠ্যবই দেওয়া হয়।
উচ্চমাধ্যমিক স্তরের বাংলা ও ইংরেজি পাঠ্যবইয়েও জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ওপর লেখা সংযোজন করা হচ্ছে। আগামী ১৫ সেপ্টেম্বর একাদশ শ্রেণির নতুন ক্লাস শুরু হওয়ার আগে পাঠ্যবই প্রকাশের প্রস্তুতি চলছে।
এনসিটিবির একটি সূত্র জানিয়েছে, এবার ইতিহাসের অংশ হিসেবে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের বিষয়বস্তু ষষ্ঠ, সপ্তম, অষ্টম এবং নবম-দশম শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় পাঠ্যবইয়ের একটি অধ্যায়ের মধ্যে যুক্ত করা হচ্ছে। এখানে মূলত স্বাধীনতা–উত্তর গণ-অভ্যুত্থানের বিষয়বস্তু স্থান পাচ্ছে। এতে ২০২৪ সালের গণ-অভ্যুত্থানের পাশাপাশি নব্বইয়ের গণ-অভ্যুত্থানের বিষয়বস্তুও থাকবে। বয়স-শ্রেণি বিবেচনা করে বিষয়বস্তুর পরিমাণ কমবেশি হবে।
এ ছাড়া চলতি বছরের বইয়ে থাকা জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের অন্যান্য বিষয়বস্তুও থাকবে, কেবল তথ্য ও ভাষাগত সমস্যা সংশোধন করা হচ্ছে।
বই ছাপার পরিস্থিতি
এনসিটিবির সূত্র জানিয়েছে, আগামী বছর বিনা মূল্যে বিতরণের জন্য মোট বইয়ের মধ্যে প্রাথমিক স্তরের পাঠ্যবই ৮ কোটি ৪৯ লাখ ২৫ হাজারের মতো। আর মাধ্যমিক স্তরের পাঠ্যবই ২১ কোটি ৪০ লাখের মতো। এবার মোট বইয়ের সংখ্যা কমেছে। এখন আগামী বছরের পাঠ্যবই ছাপার প্রক্রিয়া চলছে। দরপত্রের প্রক্রিয়া প্রায় শেষ করেছে এনসিটিবি।
এনসিটিবি জানিয়েছে, প্রাক্-প্রাথমিক, প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণির বই ছাপার শুরুর প্রস্তুতি শেষ হয়েছে। এ মাসেই প্রাক্-প্রাথমিক স্তরের বই ছাপা শুরু হবে। এর পরপরই প্রথম থেকে তৃতীয় শ্রেণির বই ছাপা শুরু হবে। কিছু শ্রেণির পাঠ্যবই ছাপার দরপত্র ইতিমধ্যেই শেষ হয়েছে, তবে ক্রয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ সভায় অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে।
এনসিটিবি জানিয়েছে, ৩০ নভেম্বরের মধ্যে সব বই ছাপার কাজ শেষ করার লক্ষ্য রয়েছে।
চলতি বছরে সব শিক্ষার্থীর হাতে সব বই পৌঁছাতে শিক্ষাবর্ষ শুরুর প্রায় তিন মাস দেরি হয়েছিল। এতে পড়াশোনায় বিঘ্ন ঘটে এবং সমালোচনা হয়। তবে এনসিটিবি বলছে, এবার বছরের শুরুতেই শিক্ষার্থীদের হাতে সব বই পৌঁছানো হবে।
এনসিটিবির চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত দায়িত্বে) অধ্যাপক রবিউল কবীর চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘আশা করছি বছরের শুরুতেই সব শিক্ষার্থীর হাতে সব বই দিতে পারব। এবার এনসিটিবি থেকে বসেই মুদ্রণকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে সিসিটিভি ক্যামেরার মাধ্যমে তদারক করা হবে।’