ছাত্রছাত্রীদের মাথায় প্রায় সময়ই একটা প্রশ্ন ঘুরপাক খায়, সেটা হলো কীভাবে ভালো ছাত্র হওয়া যায় বা কী কী কৌশল অবলম্বন করলে ভালো ছাত্র হওয়া যায়। এ নিয়ে বিভিন্ন জন বিভিন্ন মত দিয়ে থাকেন। কেউ বলেন, ‘বেশি বেশি পড়াশোনা করো’। কেউ বলেন, ‘সারাক্ষণ বই নিয়ে বসে থাকো’। কেউ বলেন, ‘সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে পড়তে বসবা’। কেউবা বলেন, ‘শিক্ষকদের কথা মনোযোগ দিয়ে শুনবা’।

কেউবা বলেন, ‘প্রতিদিনের পড়া প্রতিদিন পড়ে শেষ করবা’, ইত্যাদি, ইত্যাদি। আসলে একজন  ভালো ছাত্রের কোন বৈশিষ্ট্যগুলো লক্ষণীয়, এটা জানা জরুরি। ভালো ছাত্র হওয়ার পেছনে একটি স্বপ্ন কিংবা তীব্র ইচ্ছা কাজ করে।

আমরা প্রথমে কেন একজন সাধারণ ছাত্র 'ভালো বা অসাধারণ ছাত্র' হওয়ার স্বপ্ন দেখে সেটা দেখব, এরপর আমরা দেখব একজন ভালো ছাত্রের কিছু 'অনুসরণীয় বৈশিষ্ট্য'। যা যথাযথ অনুসরণ করলে একজন সাধারণ ছাত্রও 'অসাধারণ ছাত্র' হয়ে উঠতে পারে।

কেন ভালো ছাত্র হতে হবে

কেন একজন সাধারণ ছাত্র ভালো ছাত্র হওয়ার স্বপ্ন দেখে? অথবা ভালো ছাত্র হওয়ার পেছনে কী কী যুক্তি থাকতে পারে? কারণ, কোনো কাজ করার  আগে আমরা কাজের উদ্দেশ্য কি  জেনে থাকি। যেমন - আমরা কেন খাবার খাই? নিশ্চয়ই আমরা জানি যে, খাবার খেলে আমরা বেঁচে থাকব, আমাদের শরীর ভালো থাকবে ও আমরা কাজ করার শক্তি পাব।

ভালো ছাত্র হওয়ার পেছনের যুক্তিগুলো এমন হতে পারে: ভালো ছাত্র হলে শিক্ষকদের প্রিয় হওয়া যায়, সেই প্রতিষ্ঠানের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়, অন্য ছাত্রদের কাছে রোলমডেল হওয়া যায়, পরিবারের সবাই পছন্দ করে, সমাজে জনপ্রিয়তা লাভ করা যায়, ক্যারিয়ারে সফলতা অর্জন করা যায়, নিজেকে দেশের সম্পদ বলে গণ্য করা যায়, নিজের সুন্দর ব্যক্তিত্ব প্রতিষ্ঠা করা যায়, সবশেষে নিজের আত্মতৃপ্তি লাভ করা যায় ইত্যাদি। আশা করি, ভালো ছাত্র হওয়ার পেছনের যুক্তিগুলো মোটামুটি পরিষ্কার।

আরও পড়ুন

সংক্ষেপে জেনে রাখি - জোগান, শ্রমের সচলতা, হোয়াইট গোল্ড, পারমাণবিক ব্যাসার্ধ

একজন ভালো ছাত্রের লক্ষণীয় কিছু বৈশিষ্ট্য

একজন ভালো ছাত্রের অনেক বৈশিষ্ট্যই থাকে। তার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ ও অনুসরণীয় কিছু বৈশিষ্ট্য আলোচনা করছি, যা সাধারণ ছাত্রকে অসাধারণ ছাত্র হিসেবে গড়ে তুলতে পারে—

অনুসন্ধিৎসু বা কৌতূহলী  মন

একজন ভালো ছাত্রের প্রথম ও প্রধান বৈশিষ্ট্যই হচ্ছে অনুসন্ধিৎসু বা কৌতূহলী মন থাকা। সে সব সময় সবার কাছ থেকে শেখার বা জানার চেষ্টা করে। একজন ভালো ছাত্র মানে সে একজন ভালো শিক্ষার্থী। সুনির্মল বসু যথার্থই বলেছেন, ‘বিশ্বজোড়া পাঠশালা মোর সবার আমি ছাত্র, নানান ভাবে নতুন জিনিস, শিখছি দিবারাত্র।’ 

অর্থাৎ একজন ভালো শিক্ষার্থী পুরো বিশ্বকে শেখার একটা চমৎকার ক্ষেত্র মনে করে এবং তা থেকে প্রতিদিন সে নতুন কিছু না কিছু শেখার বা জানার চেষ্টা করে।

জীবনের লক্ষ্য

আমরা সবাই জানি যে, ‘লক্ষ্যহীন যাত্রা পথিককে শুধু ক্লান্ত করে, পথের দূরত্ব কমায় না।’ তাই একজন ভালো ছাত্র ছোটবেলা থেকেই জীবনের লক্ষ্য ঠিক করে থাকে এবং লক্ষ্য বাস্তবায়নে সবসময় সচেষ্ট থাকে। সেই লক্ষ্যকে কেন্দ্র করেই তার একাডেমিক লক্ষ্য নির্ধারণ করে থাকে। যেমন- কেউ বিজ্ঞানী হতে চাইলে, সে আগে থেকেই বিজ্ঞান রিলেটেড বই পড়ে এবং বিজ্ঞান গ্রুপে পড়াশোনা করে।

আরও পড়ুন

সংক্ষেপে জেনে রাখি - অশ্ব অক্ষাংশ, ব্ল্যাক টাইগার ,মৌসুমি জলবায়ু, বিশ্বের প্রথম সমবায় ব্যবসা

নির্দিষ্ট  বিষয়ে  ফোকাসিং

ভালো ছাত্রের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে নির্দিষ্ট বিষয়ে ফোকাস করা বা পূর্ণ মনোযোগ রাখা। যখন যে কাজ করে, সেই কাজের প্রতি ফোকাস রাখে। সে যখন পড়ে, তখন পড়ায় ফোকাস রাখে। যখন ক্লাসে থাকে, তখন শিক্ষকের পাঠদানে ফোকাস রাখে। অর্থাৎ সে একই সময়ে একাধিক কাজে ফোকাস রাখে না। এতে তার নির্দিষ্ট কাজে পূর্ণ মনোযোগ থাকে এবং জ্ঞানের গভীরে প্রবেশ করতে পারে।

ভাবনার জগৎ

ভালো ছাত্রের আলাদা একটা ভাবনা–চিন্তার জগৎ থাকে। যেখানে সে নিজেকে নিয়ে ভাবে এবং আউট অব দ্য বক্সে চিন্তা করে। নিজেকে নিজে সময় দেয়। এর ফলে অনেক সৃজনশীল চিন্তাভাবনার জন্ম হয়। অনেক নতুন নতুন জ্ঞানগর্ভ তত্ত্ব বা ধারণার উদ্ভব ঘটে। ফলে তার সৃজনশীলতা বিকশিত হয়।

আরও পড়ুন

সংক্ষেপে জেনে রাখি - গণতন্ত্র, প্রকরণ, বরেন্দ্রভূমি, কানেকটিং লিংক

বিনয়ী

ভালো ছাত্র অবশ্যই বিনয়ী হয়। বিনয়ী ছাত্র উদার ও শান্ত স্বভাবের হয়। যেকোনো পরিবেশ ও পরিস্থিতির সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নিতে পারে। ফলে সে সবার কাছে স্নেহের পাত্র হিসেবে গণ্য হয়। 

গোছালো স্বভাব

ভালো ছাত্রের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ গুণ হলো গোছালো স্বভাবের হওয়া। সে তার ব্যক্তিগত কাজ ও একাডেমিক কাজগুলো গুরুত্ব অনুসারে পরিকল্পনামাফিক সাজিয়ে–গুছিয়ে সম্পন্ন করে থাকে। এতে সময়ের কাজ সময়ে করতে পারে। তাই কাজ নিয়ে তাকে কোনো দুশ্চিন্তায় পড়তে হয় না।

আরও পড়ুন

সংক্ষেপে জেনে রাখি - প্রুনিং, নিডোসাইট, নির্গমশীল উদ্ভিদ, ম্যালপিজিয়ান নালিকা

আপ-টু-ডেট

একজন ভালো ছাত্র সমাজ, দেশ ও বিশ্বের সমসাময়িক বিভিন্ন ঘটনাবহুল তথ্যের সঙ্গে নিজেকে আপডেট রাখে এবং একাডেমিক পড়াশোনার বাইরেও অনেক জ্ঞানমূলক বই, পত্রপত্রিকা, ম্যাগাজিন, আত্মোন্নয়নমূলক ও অনুপ্রেরণামূলক বই পড়ে নিজের জ্ঞানকে সমৃদ্ধ করে।

অংশগ্রহণমূলক কাজ

বিভিন্ন ধরনের অংশগ্রহণমূলক কাজ যেমন প্রতিষ্ঠানের বার্ষিক ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, সহশিক্ষা কার্যক্রম, সমাজকল্যাণমূলক কাজ এবং দেশের উন্নয়নমূলক কাজে অংশগ্রহণের মাধ্যমে নিজেকে সম্পৃক্ত রাখতে চেষ্টা করে। এতে তার মধ্যে লিডারশিপ বা নেতৃত্ব তৈরি হয় এবং যোগাযোগের দক্ষতা বৃদ্ধি পায়।

আরও পড়ুন

সংক্ষেপে জেনে রাখি - ড্রপবক্স, খরাসহিষ্ণু ফসল, সামাজিক নেটওয়ার্ক, সফটওয়্যার পাইরেসি

মেন্টর বা গুরু

মেন্টর বা গুরু হচ্ছে একজন শিষ্যের পথপ্রদর্শক। ইতিহাস ঘাঁটলে আমরা দেখি যে সফল মানুষদের পেছনে কোনো না কোনো ব্যক্তির বিরাট অবদান থাকে। যেমন- বিখ্যাত দার্শনিক অ্যারিস্টটলের মেন্টর বা শিক্ষাগুরু ছিলেন প্লেটো আবার প্লেটোর মেন্টর বা শিক্ষাগুরু ছিলেন সক্রেটিস। তেমনি বেশির ভাগ ভালো ছাত্রেরই একজন ভালো শিক্ষাগুরু থাকেন। যাঁর দিকনির্দেশনা সে সব সময় ফলো বা অনুসরণ করে।

ভিন্নভাবে উপস্থাপন

একজন ভালো ছাত্র নিজেকে ভিন্নভাবে উপস্থাপন করতে চেষ্টা করে। তার চিন্তাভাবনা, চালচলন, কথাবার্তা ও কাজ সচরাচর  অন্যদের মতো হয় না। তার মধ্যে ইউনিকনেস বা বিশেষত্ব লক্ষ করা যায়।

আরও পড়ুন

সংক্ষেপে জেনে রাখি - আয়, ভোক্তা, উপযোগ, মিথস্ক্রিয়া