সন্তানদের অপেক্ষায় বাবার শেষ বাড়ি ফেরা

বাবা আইয়ুব বাচ্চুর সঙ্গে ছেলে তাজোয়ার, ছবি প্রথম আলো
বাবা আইয়ুব বাচ্চুর সঙ্গে ছেলে তাজোয়ার, ছবি প্রথম আলো

জীবনে বহুবার হয়তো বাবার হাত ধরে দাদা–দাদির বাড়ি চট্টগ্রামে গিয়েছেন আইয়ুব বাচ্চুর মেয়ে সাফরা ও ছেলে তাজোয়ার। এবারও আইয়ুব বাচ্চুকে নিয়ে তাঁর সন্তান, পরিবারের সদস্যরা ঠিকই বাড়ি ফিরছেন, তবে এই ফেরাটা একেবারে অন্য রকম। কারণ, এটি যে তাঁর শেষবারের মতো বাড়ি ফেরা। আর কখনোই চট্টগ্রাম থেকে ফিরবেন না ব্যান্ড সংগীতের জনপ্রিয় শিল্পী। রাজধানী ঢাকা, দেশের আনাচ–কানাচ কিংবা দেশের বাইরের কোনো মঞ্চ আর আইয়ুব বাচ্চুর গিটারের মূর্ছনায় ভাসবে না। শ্রোতারা উন্মাতাল হবে না, বাংলাদেশি সংগীতের কিংবদন্তি এই শিল্পীর পরিবেশনায়।

দুই সন্তান দেশে ফেরার পর আইয়ুব বাচ্চুকে সমাহিত করা হবে মায়ের পাশের কবরে—পরিবারের পক্ষ থেকে এমনটাই জানিয়েছেন পার্থ বড়ুয়া।
আইয়ুব বাচ্চুর মরদেহ এখন রাখা আছে ঢাকার স্কয়ার হাসপাতালের হিমঘরে। পরিবারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কাল শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টায় ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য রাখা হবে। এরপরই আইয়ুব বাচ্চুর মরদেহ নিয়ে যাওয়া হবে ঢাকার জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে। জুমার নামাজ শেষে সেখানে প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। এরপর মগবাজারে কাজি অফিস গলিতে আইয়ুব বাচ্চুর গান তৈরির কারখানা ‘স্টুডিও এবি কিচেন’–এ শেষবারের মতো নিয়ে যাওয়া হবে। এখানকার আনুষ্ঠানিকতা শেষে চ্যানেল আই প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হবে দ্বিতীয় জানাজা। চ্যানেল আইয়ের আনুষ্ঠানিকতা শেষে আইয়ুব বাচ্চুর মরদেহ আবারও স্কয়ার হাসপাতালের হিমঘরে রাখা হবে বলে জানান পার্থ বড়ুয়া।
পার্থ বড়ুয়া বলেন, ‘বাচ্চু ভাইয়ের মেয়ে সাফরা ও ছেলে তাজোয়ার অস্ট্রেলিয়া ও কানাডায় থাকেন। দুজন কাল বিকেল কিংবা রাতের কোনো একটা সময়ে ঢাকায় চলে আসতে পারবেন বলে আমরা আশা করছি। সেভাবেই সব ধরনের প্রস্তুতিও নেওয়া হয়েছে। তাঁরা আসার পরই বাবার মরদেহ নিয়ে চট্টগ্রাম যাবেন। চট্টগ্রামের স্টেশন রোডের চৈতন্য গলিতে মায়ের কবরের পাশে চিরনিদ্রায় যাবেন শিল্পী আইয়ুব বাচ্চু। এর আগে চট্টগ্রামের জমিয়াতুল ফালাহ মসজিদ প্রাঙ্গণে তাঁর জানাজা অনুষ্ঠিত হবে।’
আজ বৃহস্পতিবার সকালে জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী আইয়ুব বাচ্চু ইন্তেকাল করেন। তাঁর বয়স হয়েছিল ৫৬ বছর। আইয়ুব বাচ্চুর মৃত্যুতে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ, বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ রাজনৈতিক অঙ্গনের অনেকেই শোক প্রকাশ করেছেন।

বাবা আইয়ুব বাচ্চুর সঙ্গে ছেলে তাজোয়ার, ছবি প্রথম আলো
বাবা আইয়ুব বাচ্চুর সঙ্গে ছেলে তাজোয়ার, ছবি প্রথম আলো

জানা গেছে, আজ সকালে শরীর খারাপ হলে আইয়ুব বাচ্চুর ব্যক্তিগত গাড়িচালক তাঁকে নিয়ে স্কয়ার হাসপাতালের উদ্দেশে রওনা দেন। গাড়িতে তোলার সময়ই তাঁর মুখ থেকে ফেনা বের হচ্ছিল। সকাল সোয়া নয়টার দিকে তাঁকে স্কয়ার হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসকেরা।
চিকিৎসকেরা জানান, হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হয়ে আইয়ুব বাচ্চুর মৃত্যু হয়েছে। সকাল সাড়ে ৮টার দিকে তিনি হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হন বলে ধারণা করা হচ্ছে। সকাল সোয়া ৯টার দিকে তিনি মারা যান।
স্কয়ার হাসপাতালের মেডিকেল ডিরেক্টর ডা. মির্জা নাজিম উদ্দিন সাংবাদিকদের জানান, জরুরি বিভাগে কার্ডিয়াক কনসালট্যান্ট মুনসুর মাহবুবের উপস্থিতিতে ১৫ থেকে ২০ মিনিট ধরে আইয়ুব বাচ্চুর হৃৎস্পন্দন ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু সেই চেষ্টা ব্যর্থ হয়। সকাল ৯টা ৫৫ মিনিটে আইয়ুব বাচ্চুকে মৃত ঘোষণা করা হয়।
আজ বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে মির্জা নাজিমুদ্দিন বলেন, ‘আমরা আইয়ুব বাচ্চুকে মৃত অবস্থাতেই পাই। তারপরও আমাদের স্পেশাল টিম তাঁকে ফিরিয়ে আনার সব রকমের চেষ্টা করে। তিনি বহুদিন ধরে হৃদ্‌রোগে ভুগছিলেন। তাঁর হার্টে কার্ডিয়োমাইপ্যাথি ছিল। ২০০৯ সালে তাঁর হার্টে একটি স্টেন্ট পরানো হয়।’
মির্জা নাজিমুদ্দিন জানান, তিন সপ্তাহ আগে আইয়ুব বাচ্চু স্কয়ার হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। তাঁর হৃদ্‌যন্ত্রের কার্যকারিতা ছিল ৩০ শতাংশ, যেখানে একজন সুস্থ মানুষের থাকে ৭০ শতাংশ। এ জন্যই বারবার তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি হতে হতো। হার্টের কার্যকারিতা বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে তাঁর মুখ থেকে পানির মতো ফেনা বের হচ্ছিল।
বাংলা ব্যান্ডসংগীতের ইতিহাসের এই কিংবদন্তি শিল্পী ১৯৬২ সালের ১৬ আগস্ট চট্টগ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন বামবার নেতারা।