আত্মবিশ্বাস নিয়ে ইংরেজি বলা শেখায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই ক্লাব

ক্লাবের সদস্যদের একাংশ
ছবি: ক্লাবের সৌজন্যে

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের একটা বড় অংশই আসেন মফস্‌সল থেকে। স্কুল–কলেজে ইংরেজির ভিতটা শক্ত হয় না বলে এই শিক্ষার্থীদের অনেকে ইংরেজি লিখতে ও বলতে একধরনের সংকোচ বোধ করেন।

ফলে উচ্চশিক্ষা বা চাকরির ক্ষেত্রে তাঁরা ঠিক নিজের ওপর আস্থা রাখতে পারেন না। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, দুর্বল ভোকাবুলারি (শব্দভান্ডার), ব্যাকরণভীতি, স্কুল–কলেজের নেতিবাচক অভিজ্ঞতা, এমন অনেক কিছুই তাঁদের জন‍্য বড় মানসিক বাধা।

ভয় বা সংকোচ নয়; বরং আনন্দ ও আত্মবিশ্বাস নিয়ে যেন শিক্ষার্থীরা ইংরেজিতে কথা বলতে শেখেন, এমন প্রত্যয় নিয়েই ২০২০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ইংলিশ ল্যাঙ্গুয়েজ ক্লাব।

আরও পড়ুন

সাবলীল ইংরেজি কথন চর্চা করতে ক্লাবের পক্ষ থেকে নিয়মিত আয়োজন করা হয় ডিবেট সেশন (বিতর্ক), ইন্টারঅ্যাকটিভ স্পিকিং ক্লাস, বইপ্রেমীদের জন্য রিডিং সার্কেল, ইংরেজি সিনেমা দেখা ও তা নিয়ে আলোচনা করা, পাবলিক স্পিকিং ওয়ার্কশপ, ভোকাবুলারি গেমস ও রাইটিং প্র্যাকটিসসহ নানা কিছু।

শিক্ষার্থীরা যেন আনন্দ নিয়ে শিখতে পারেন, সেই বিষয়টিকেই সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হয়। ফলে ইংরেজি শেখার একেকটি সেশন উৎসবমুখর হয়ে ওঠে।

একত্র হয়ে ইংরেজিতে কথা বলার চর্চা করেন তাঁরা
ছবি: ক্লাবের সৌজন্যে

সেশনে অংশ নেওয়ার সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো, এসব করে ছাত্রছাত্রীরা আত্মবিশ্বাসী হয়ে ওঠেন। শুরুতে ভয় ও সংকোচের কারণে অনেকে অংশ নিতে চান না। তাঁরা ভাবেন, ‘ভুল করলে অন্যরা হাসবেন।’

কিন্তু যখন দেখেন, তাঁদের ভুল নিয়ে কেউ হাসাহাসি করছেন না; বরং উৎসাহ দিচ্ছেন, তখন তাঁরা ধীরে ধীরে সাহস পান।

চোখের সামনেই আমরা অনেক শিক্ষার্থীর দারুণ পরিবর্তন দেখি। আগে হয়তো কেউ শ্রোতার আসনে চুপচাপ বসে থাকত, তাকেই দেখি আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে মঞ্চে দাঁড়াচ্ছে। কেউ হয়তো চাকরির ইন্টারভিউ নিয়ে ভয়ে ছিল, এখন সে–ই সাফল্যের সঙ্গে ক্যারিয়ার গড়েছে। আমাদের ক্লাবের অনেক সদস্য এখন বিসিএস ক্যাডার, অনেকে বিদেশে পড়ালেখা করছে। আমি এমন একটি প্ল্যাটফর্ম গড়তে চেয়েছি, যেখানে শিক্ষার্থীরা পরীক্ষার জন্য নয়; বরং জীবনের জন্য ইংরেজি শিখবে। এই ক্লাব সেই স্বপ্নেরই বাস্তবায়ন।
মোহাম্মদ হীরা সরকার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ইংলিশ ল্যাঙ্গুয়েজ ক্লাব প্রতিষ্ঠাতা ও প্রশিক্ষক
আরও পড়ুন

ইংরেজি শেখার ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো ধারাবাহিকতা ধরে রাখা। একাডেমিক পড়াশোনার চাপ, পারিবারিক ব্যস্ততা কিংবা সংকোচের কারণে অনেক সময় ধারাবাহিকতা ধরে রাখা সম্ভব হয় না। ক্লাবের পক্ষ থেকে তাই সব সময় চেষ্টা করা হয়, পরিবেশটা যেন প্রাণবন্ত থাকে। ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা মনে করেন, ‘ভুল মানে শেখা।’ তাই ভুল করতে ভয় পাওয়া যাবে না।

বিভিন্ন সেমিনার, কর্মশালা, আলোচনা অনুষ্ঠান হয় নিয়মিত
ছবি: ক্লাবের সৌজন্যে

ইংরেজি শেখার প্রতি শিক্ষার্থীদের আগ্রহ আরও বাড়াতে ভবিষ্যতে ‘ইন্টার ইউনিভার্সিটি ইংলিশ ফেস্টিভ্যাল’ আয়োজন করতে চান ক্লাবের সদস্যরা, যেখানে সারা দেশের ছাত্রছাত্রীরা অংশ নেবেন। পাশাপাশি একটি ডিজিটাল লার্নিং প্ল্যাটফর্ম তৈরির পরিকল্পনা আছে। আন্তর্জাতিক পর্যায়ের সেমিনার আয়োজন নিয়েও ভাবছেন তাঁরা।

আরও পড়ুন