দাঁত–মাড়ির রোগ হতে পারে হৃদ্রোগ ও ক্যানসারের কারণ, এড়াবেন কীভাবে
মাড়ির ভেতরে খাদ্যকণা জমে যে আবরণ তৈরি হয়, তার নাম ডেন্টাল প্লাক। এটি ধীরে ধীরে শক্ত হয়ে পাথরের মতো হতে পারে। এর ভেতরে থাকে অসংখ্য ব্যাকটেরিয়া। এসব ব্যাকটেরিয়া রক্তের সঙ্গে মিশলে রক্তনালির প্রদাহের সৃষ্টি হয়। ফলে হৃদ্রোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি বেড়ে যায়।
গবেষণায় দেখা গেছে, দাঁত সঠিকভাবে স্কেলিং করানোর পর পরবর্তী সাত বছর হৃদ্রোগ ও স্ট্রোকের মতো রোগ থেকে ঝুঁকিমুক্ত থাকেন। যাঁদের একই সঙ্গে মাড়ির রোগ ও দাঁতের ক্ষয়রোগ রয়েছে, তাতে প্রবীণদের ক্ষেত্রে ইসকেমিক স্ট্রোকের ঝুঁকি সাধারণ মানুষের তুলনায় ৮৬ শতাংশ বেশি।
কেন ঝুঁকি বাড়ে
এর একটি কারণ অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিস। রক্তে থাকা ব্যাকটেরিয়া ধমনির দেয়ালে বিদ্যমান কোলেস্টেরলের সঙ্গে যুক্ত হয়ে ধমনিকে সরু ও শক্ত করে ফেলে। এতে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়ে।
মুখের ব্যাকটেরিয়া শরীরে প্রদাহজনিত প্রোটিন (সি-রিয়াকটিভ প্রোটিন) বাড়ায়, যা রক্তনালিকে ক্ষতিগ্রস্ত করে ও রক্ত জমাট বাঁধার প্রবণতা বৃদ্ধি পায়। ফলে স্ট্রোক ও হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বেড়ে যায়।
এ ছাড়া ‘এন্ডোকার্ডাইটিস’ বা ব্যাকটেরিয়াজনিত হৃৎপিণ্ডের আস্তরণে সংক্রমণ ঘটিয়ে হৃদ্যন্ত্রের ভাল্ভ ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।
কীভাবে বুঝবেন
৯০ শতাংশ পঁয়ত্রিশোর্ধ্ব ব্যক্তিই মাড়ির রোগে আক্রান্ত। এর বৈশিষ্ট্য হলো মাড়ি থেকে রক্ত পড়া, মাড়ি ফুলে যাওয়া, দাঁত থেকে মাড়ি আগলা হয়ে যাওয়া বা দাঁত নড়ে যাওয়া।
মাড়ির এ ধরনের রোগ মুখের ভেতরের হাড়ের কাঠামোকে ধ্বংস করে। এর ফলে কখনো কখনো হাড় প্রতিস্থাপনও করতে হয়।
এই রোগে মুখে দুর্গন্ধ হয়, মাড়ি ফুলে যায়, মাড়ি থেকে পুঁজ ও রক্ত বের হয়।
প্রতিরোধে করণীয়
মাড়ির স্কেলিং করা।
দুই বেলা দাঁত ব্রাশ ও দুই দাঁতের ফাঁক থেকে খাবার কণা বের করার জন্য ডেন্টাল ফ্লস ব্যবহার।
অ্যান্টিসেপটিক মাউথ ওয়াশ ব্যবহার করা।
জিবছোলা (টাং ক্লিনার) মাধ্যমে প্রতিদিন জিব পরিষ্কার করা।
তাজা ফলমূল ও শাকসবজি খাওয়া।
দাঁতের মাড়ি ম্যাসাজ ও মুখের চোয়ালের ব্যায়াম করা।
চিনিজাতীয় খাবার কম খাওয়া, পান, সিগারেট ও জর্দা, সাদাপাতা, গুল, খইনি ইত্যাদি তামাকজাত দ্রব্য বর্জন করা।
অধ্যাপক ড. অরূপরতন চৌধুরী, ভিজিটিং প্রফেসর, ডেন্টাল সার্জারি বিভাগ, বারডেম জেনারেল হাসপাতাল, ঢাকা