সড়ক গতি না গতির ব্যবধান—কোনটা দুর্ঘটনার আসল কারণ

যানবাহনের ধরন অনুযায়ী সড়কে সর্বোচ্চ গতিসীমার নির্দেশিকা জারি করেছে সরকার। এই নির্দেশনা কতটা বাস্তবসম্মত? দুর্ঘটনা কমাতে নতুন নির্দেশনা কতটা কার্যকর হবে? এই লেখায় সেই প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজেছেন এস এম সোহেল মাহ্‌মুদ

সরকার সড়কের প্রকারভেদে এবং যানবাহনের ধরন অনুযায়ী সর্বোচ্চ গতিসীমার নির্দেশিকা জারি করেছে। এ খবর কয়েক দিনের পুরোনো। এর পক্ষে-বিপক্ষে, ইতিবাচক-নেতিবাচক অনেক আলোচনা হয়েছে ও হচ্ছে। অনেক দিন ধরে এ বিষয়ে কাজ ও পড়াশোনাও করছি। সর্বোপরি সরকারের পক্ষ থেকে যে প্রাথমিক কমিটি তৈরি করা হয়েছিল, সেটার একজন সদস্যও ছিলাম। তাই এ বিষয়ে কিছু কথা না বললেই নয়।

প্রথমেই বলব, এটা সময়ের একটা দাবি ছিল। সরকার অবশ্যই একটি অতিপ্রয়োজনীয় ও সাহসী উদ্যোগ নিয়েছে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বিস্তারিত গতিসীমা গাইডলাইন আছে। তবে আমাদের দেশে এ উদ্যোগ যে এই প্রথম তা নয়। আমাদের পূর্ববর্তী সড়ক পরিবহন অর্ডিন্যান্স-১৯৮৩, সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮-এ অল্পবিস্তর গতিসীমা–সম্পর্কিত নির্দেশনা ছিল।

১৯৮৩ অর্ডিন্যান্সের ৮ম শিডিউলে সড়কভেদে সর্বোচ্চ গতিসীমার একটি তালিকাও দেওয়া হয়েছিল। যেখানে মহাসড়কে সর্বোচ্চ গতিসীমা প্রতি ঘণ্টায় ১০০ কিলোমিটারের বেশি ছিল।

আরও পড়ুন

আমাদের দেশে প্রচলিত বিভিন্ন ম্যানুয়ালেও যেমন বাংলাদেশ রোড সাইন ম্যানুয়ালে এ–সংক্রান্ত বেশ কিছু গাইডলাইন দেওয়া আছে। সর্বশেষ ২০২২ সালে সড়ক পরিবহন বিধিমালায় বিধি ১২৫ ও উপবিধি ৪-এ একটি বিস্তারিত গতিসীমা গাইডলাইন প্রস্তুতের নির্দেশনা ছিল।

সম্প্রতি প্রস্তাবিত গাইডলাইন ওই নির্দেশনারই বাস্তবায়ন। এ ছাড়া বিভিন্ন সময় সড়ক–মহাসড়কের গতিসীমা নির্ধারণ ও সাইন প্রদর্শনের জন্য বিভিন্ন প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। তবে তা কোনোটাই টেকসই হয়নি। প্রকল্প শেষ হওয়ার পর রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে তা তার কার্যকারিতা হারিয়েছে।

এবারের গাইডলাইনে সর্বোচ্চ গতিসীমা বলা হয়েছে ঘণ্টায় ৮০ কিলোমিটার। এক্সপ্রেসওয়ে ও মহাসড়কে হালকা যাত্রীবাহী মোটরযান যেমন প্রাইভেট কার, জিপ ইত্যাদির জন্য এটা প্রযোজ্য হবে। এখানে কিছু বিষয় না বললেই নয়।

আরও পড়ুন

এক. আমাদের দেশে অনেক আগে থেকে অনেক স্থানে সর্বোচ্চ গতিসীমা ঘণ্টায় ৮০ কিলোমিটার প্রদর্শিত হয়ে আসছে এবং সেটা দুই লেনবিশিষ্ট দ্বিমুখী মহাসড়কে, যেমন বঙ্গবন্ধু সেতুর অ্যাপ্রোচ রোডের ক্ষেত্রে এটা বলা হয়েছে। এখন এক্সপ্রেসওয়ের জন্যও (যেখানে ন্যূনতম চার লেন, ডিভাইডার এবং পাশাপাশি এসএমভিটি লেন আছে) সেই একই গতির কথা বলা হচ্ছে। প্রশ্ন থেকে যায়, তাহলে এত টাকা খরচ করে ছয় লেন, চার লেনের মহাসড়ক বা এক্সপ্রেসওয়ের প্রয়োজনীয়তা কী ছিল? এক্সপ্রেসওয়ে নামটির সার্থকতাও বা থাকল কোথায়?

দুই. নির্দেশনায় সর্বোচ্চ গতিসীমার কথাবলা হয়েছে, কিন্তু প্রদর্শনের কথা বলা হয়নি। এর মানে হচ্ছে এক্সপ্রেসওয়ের যেসব স্থান জ্যামিতিক ও পরিবেশগতভাবে সবচেয়ে উন্নত বা মানসম্পন্ন এবং দুর্ঘটনার ঝুঁকি সবচেয়ে কম, সেসব স্থানে এই গতিসীমা প্রদর্শিত হতে পারে। সেটাও কেবল ওই নির্দিষ্ট শ্রেণির গাড়ির জন্য। তাহলে যেসব স্থানে জ্যামিতিক ও পরিবেশগতভাবে কিছুটা নিরাপত্তা–দুর্বলতা আছে, যেমন বাঁক, ব্রিজ, কালভার্ট, যাত্রী ওঠানো–নামানোর স্থানে বা দুর্ঘটনার কিছুটা ঝুঁকি আছে কিংবা পথচারীর চলাচল বা পারাপারের সম্ভাবনা আছে, সেসব স্থানে এই প্রদর্শিত গতিসীমা ঝুঁকির মাত্রা বিবেচনায় নিয়ে কম হবে।

আরও পড়ুন

সে হিসেবে এক্সপ্রেসওয়ের কোন কোন স্থানে প্রদর্শিত গতিসীমা হালকা যাত্রীবাহী মোটরযানের জন্য ঘণ্টায় ৬০ কিলোমিটার বা এর নিচে নেমে আসতে পারে। অন্যান্য গাড়ির জন্য সে ক্ষেত্রে হয়তো ঘণ্টায় ৩০ কিলোমিটার হবে বা আরও কম হবে। এটা কতটা বাস্তবসম্মত, তা সময়ই বলে দেবে।

তিন. একই লেন ব্যবহারকারী বিভিন্ন যানবাহনের বিভিন্ন গতি নির্ধারণ করে দেওয়া কোনো অবস্থাতেই কাম্য নয়। এর ফলে সড়কে ওভারটেকিংয়ের প্রবণতা বেড়ে যাবে। সড়কে চলাচলের বিভিন্ন ‘ম্যানুইভারিং’ কৌশলের মধ্যে ওভারটেকিং সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ। এর ফলে প্রায় সব ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা বেড়ে যায়। যার পরিণামে সড়কে নিরাপত্তাঝুঁকি বেড়ে যেতে পারে।

 প্রস্তাবে দুই লেনের দ্বিমুখী সড়কের জন্যও তিন থেকে পাঁচ ধরনের যানবাহনভেদে গতিসীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছে, যেখানে গতির ব্যবধান ঘণ্টায় ৩০ থেকে ৩৫ কিলোমিটার। এটি প্রতিষ্ঠিত সত্য যে সড়ক দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে গতি যতটা না সমস্যা, গতির ব্যবধান তার চেয়ে বেশি সমস্যা। একই লেনে বিভিন্ন গতি—কীভাবে এটা প্রদর্শন ও কার্যকর করা হবে, সেটাও বোধগম্য হচ্ছে না।

আরও পড়ুন

যেখানে আমরা সড়কের একটি নির্দিষ্ট স্থানে একটি নির্দেশিত গতিসীমা কার্যকর করতে পারছি না, সেখানে যানবাহনভেদে ভিন্ন ভিন্ন গতিসীমা কার্যকর করার ভাবনাটা (যদিও বর্তমান প্রেক্ষাপটে তা বিজ্ঞানসম্মতও নয়) কতটুকু বাস্তবসম্মত, তা সময়ই বলে দেবে। এ ছাড়া নির্দেশিত সর্বোচ্চ গতিসীমার মধ্য শহরাঞ্চলের সড়কগুলোর শ্রেণিবিন্যাসে এবং গতিসীমার মধ্যে যথেষ্ট বিশৃঙ্খলা আছে। ওই বিষয়গুলো সামনে রেখে সর্বোচ্চ গতিসীমার নির্দেশিকার সংশোধনী জরুরি মনে করছি।

এবার মূল আলোচনায় আসি। বাংলাদেশের পুলিশের অ্যাকসিডেন্ট রিপোর্ট ফর্মে (এআরএফ) ১৯৯৮ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত দুর্ঘটনাগুলোর যে রেকর্ড রাখা হয়েছে, তার তথ্য মোতাবেক বাংলাদেশে ৯৫ ভাগের বেশি দুর্ঘটনার কারণ বলা হয়েছে বেপরোয়া চালনা আর অতিরিক্ত গতি। সংবাদমাধ্যমে আমরা যে তথ্য পাই, তাতেও দেখা যায়, দেশের প্রায় ৯০ ভাগ সড়ক দুর্ঘটনার পেছনে প্রধান কারণ অতিরিক্ত গতি।

আমরা কিছু আলোচিত ও বড় দুর্ঘটনার সংবাদ পর্যালোচনা করলে দেখব প্রায় সব কটির ক্ষেত্রে ঢালাওভাবে অতিরিক্ত গতিকে দায়ী বা কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়। মনে হয়, দুর্ঘটনা মানেই অতিরিক্ত গতি। অন্য যে আরও সমস্যা আছে, তা প্রতিবেদনগুলো দেখলে বা পর্যালোচনা করলে খুবই গৌণ মনে হবে।

আরও পড়ুন

অবশ্যই এটাও প্রমাণিত যে অতিরিক্ত গতি দুর্ঘটনার অন্যতম প্রধান কারণ। যেমন নিউ সাউথ ওয়েলস বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গবেষণায় দেখানো হয়, গতি সড়কের প্রধান প্রাণ হরণকারী এবং প্রায় ৪৪ শতাংশ সড়কের মৃত্যুর জন্য দায়ী। তবে মনে রাখতে হবে, গতি নয়, তার চেয়ে বেশি দায়ী সড়কে গতির ব্যবধান। কিন্তু আমরা সাধারণত দুর্ঘটনার জন্য গতিকেই দায়ী করে থাকি।

এবার কয়েকটি নির্দিষ্ট উদাহরণ দেওয়া যাক। ১৯ মার্চ ২০২৩ তারিখ মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার কুতুবপুরে ঢাকা-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ের ওপর এক মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় প্রায় ২০ জন যাত্রী নিহত হন।

মর্মান্তিক এই দুর্ঘটনার প্রধান কারণ হিসেবে সরকারি প্রতিবেদন থেকে শুরু করে প্রায় সব সংবাদমাধ্যমে অতিরিক্ত গতিকে দায়ী করা হয়। পরবর্তী সময়ে অ্যাকসিডেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (এআরআই) অনুসন্ধানে বের হয়ে আসে, দুর্ঘটনার আগে গাড়িটির গতি প্রদর্শিত গতির চেয়ে কম ছিল। গাড়িটিতে জিপি টেকনোলজি যুক্ত থাকায় যাত্রার শুরু থেকে দুর্ঘটনার আগমুহূর্ত পর্যন্ত গতির তথ্য পাওয়া যায়। এমনকি দুর্ঘটনা ঘটার কয়েক সেকেন্ড আগে তার গতি ঘণ্টায় ৬০ কিলোমিটারের নিচে ছিল।

এর কিছুদিন পরে (২২ জুলাই ২০২৩) ঝালকাঠি সদর উপজেলার ছত্রকান্দা এলাকায় বরিশাল-পিরোজপুর সড়কের ওপর থেকে একটি বাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তার পাশে পুকুরে পড়ে যায়। এতে ১৭ জন প্রাণ হারান ও আরও অনেকে আহত হন। মর্মান্তিক এ দুর্ঘটনায় যথারীতি গাড়ির অতিরিক্ত গতিকে দায়ী করা হয় এবং ফলে সব দায় চালকের ওপর এসে পড়ে।

দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে খুব কম প্রতিবেদনে রাস্তার পাশে এই অরক্ষিত স্থান এবং রাস্তার প্রয়োজনীয় ট্রিটমেন্টের (যেমন বাধ্যতামূলক গার্ডরেইল) অভাবের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। আমি বলছি না চালকের দোষ থাকতে পারে না, তবে তা প্রমাণসাপেক্ষ। চালকের ভুল হয়তো আছে, কিন্তু সেই ভুল সংশোধন করার জন্য আমরা কী ব্যবস্থা রেখেছি?

বছরের পর বছর একজন চালক বিভিন্ন রকমের চাপের মধ্যে থেকে গাড়ি চালান। তাঁর একটা–দুটো ভুল হতেই পারে। কিন্তু আমাদের দেশে সেই ভুল সংশোধন করার কোনো পরীক্ষিত পদ্ধতি নেই। বিভিন্ন ক্ষেত্রে এটা থাকা বাধ্যতামূলক। উল্লিখিত দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে গার্ডরেইল থাকাটা যেমন বাধ্যতামূলক ছিল।

কয়েক দিন আগে (২ মে ২০২৪) হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলায় ঢাকা-সিলেট হাইওয়েতে আনুমানিক রাত দেড়টার দিকে একটি ট্রাকচাপায় প্রাইভেট কার আরোহী পাঁচ ব্যক্তি নিহত হন। যথারীতি ট্রাকের অতিরিক্ত গতিকে দায়ী করা হয়। সিসি ক্যামেরা ভিডিওতে দেখা যায়, দুর্ঘটনাটি ঘটে রাস্তার ওপর দাঁড়িয়ে থাকা একটি বাসকে ওভারটেক করার সময়। এ ক্ষেত্রে দুর্ঘটনার কারণ দুটি হতে পারে। এক. বাসটি সঠিকভাবে পার্ক না করার বা সড়কের ওপর পার্ক করার কারণে। দুই. ট্রাক বাসকে ভুলভাবে ওভারটেক করার কারণে।

গতির কারণেও যদি দুর্ঘটনা হয়ে থাকে, তবে শুধু ট্রাকের গতি কেন, প্রাইভেট কারের অতিরিক্ত গতির কারণেও সেটা হতে পারে। তাহলে কোনো স্পিডোমিটার রিডিং ছাড়াই ধারণার ওপর শুধু ট্রাকের গতিকে দায়ী করা হলো কেন?

কয়েক বছর আগে (১ অক্টোবর ২০১৯) কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলার ঘিলকান্দি মধ্যপাড়ায় একটি বাসের সঙ্গে একটি মোটরসাইকেলের ধাক্কায় ঘটনাস্থলেই এক আইনজীবী নিহত হন। বিভিন্ন রিপোর্টে বাসের অতিরিক্ত গতিকেই দুর্ঘটনার প্রধান কারণ হিসেবে দায়ী করা হয়। পরবর্তী সময়ে উচ্চ আদালতের নির্দেশে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। সেখানে এই লেখকেরও থাকার সুযোগ হয়েছিল। তদন্তে দেখা গেল, মোটরসাইকেলচালকের ভুল মোড় বা ডান দিকে হঠাৎ টার্ন নেওয়াই এই দুর্ঘটনার অন্যতম প্রধান কারণ।

এভাবে অনেক উদাহরণ দেওয়া যাবে, যেখানে দুর্ঘটনার জন্য এককভাবে অতিরিক্ত গতিকে দায়ী করা হয়। গতিশীলতা থাকলে ঝুঁকি থাকবেই। তাই বলে আমরা গতিকে থামিয়ে দিতে পারব না। তাহলে মানবসভ্যতা টিকবে না, উন্নয়ন স্থবির হয়ে পড়বে। তাই দরকার সমন্বয়। সড়কের পরিকল্পনা, নকশা এবং কার্যকারিতা সেভাবেই নির্ধারণ করা হয়।

দুঃখজনক হলেও সত্যি, আমাদের দেশে এখনো সড়কের কার্যকারিতা অনুসারে সেটাকে সংজ্ঞায়িত করা, সেই অনুযায়ী নকশা, নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণ করা অনেক ক্ষেত্রেই অনুপস্থিত। গতি অবশ্যই একটি কারণ। তবে তা প্রমাণসাপেক্ষ বিষয়।

ঢাকা-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়েতে দুর্ঘটনায় পড়া ইমাদ পরিবহনের সঙ্গে সংযুক্ত জিপিএস ট্র্যাকার বা অনুরূপ ডিভাইসের সাহায্যে স্বয়ংক্রিয়ভাবে গতি রেকর্ডিং ছাড়া কারও পক্ষে কি প্রমাণ করা সম্ভব দুর্ঘটনাকবলিত গাড়ির গতি কত ছিল? যদি প্রমাণ করা সম্ভব না হয়, তবে কিসের ভিত্তিতে রিপোর্ট করলাম, গতিকে দায়ী করলাম, চালককে ঘাতক সাব্যস্ত করলাম? এমনকি চালকের বিরুদ্ধে এই কারণ দেখিয়ে মামলা পর্যন্ত করা হয়।

যে প্রশ্নগুলো গুরুত্বপূর্ণ, তা হলো একচেটিয়াভাবে গতিকে দায়ী করে প্রকৃত কারণটিকে আড়াল করা হচ্ছে কি না? একটি বিশেষ শ্রেণিকে সমাজের চোখে ‘ভিলেন’ বা ‘ঘাতক’ বানানো হচ্ছে আর প্রকৃত অপরাধী বা কারণটা লোকচক্ষুর আড়ালেই থেকে যাচ্ছে কি না?

এ অবস্থা চলতে থাকলে আমরা সমস্যা থেকে উত্তরণ পাব কীভাবে? সমস্যাই যখন সঠিকভাবে উদ্‌ঘাটন করা হলো না, তবে সমাধানটা কীভাবে হবে? এ অবস্থা চলতে থাকলে সমস্যার বৃত্তেই জাতিকে ঘুরপাক খেতে থাকতে হবে, যা কোনোভাবেই কাম্য নয়। তাই গৎবাঁধা প্রতিবেদন থেকে বের হয়ে এসে দুর্ঘটনার প্রকৃত কারণ অনুসন্ধান করতে হবে।

পরিশেষে বলতে হবে, গতিসীমা গাইডলাইন প্রণয়ন বা নির্দেশনার চেয়ে বেশি জরুরি বাস্তবায়ন। এর প্রথম শর্ত, বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে সড়কের নিরাপদ স্থানীয় গতিসীমা নির্ধারণ এবং যথেষ্ট পরিমাণে যথাযথভাবে গতিসীমার সাইন ও মার্কিং স্থাপন বা প্রদান করা। বাস্তবায়নকারী সংস্থাসহ আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সক্ষমতা বৃদ্ধি করা। সেটা হতে হবে জনবল, দক্ষতা, কারিগরি ইত্যাদি সব ক্ষেত্রে। লক্ষ রাখতে হবে, এসব কাজ করতে গিয়ে কোনো গোষ্ঠী যেন এটাকে নিজেদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বা আয়ের উৎসে পরিণত না করে বা এটা যেন একটা গোষ্ঠীর বাণিজ্যিক হাতিয়ারে পরিণত না হয়।

  • ড. এস এম সোহেল মাহ্‌মুদ সহযোগী অধ্যাপক, অ্যাকসিডেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউট (এআরআই), বুয়েট