মোস্তাফিজকে চোখ বন্ধ করে রশিদের ছক্কা—আধুনিক ক্রিকেটে যে শটগুলো খেলা হয়

যে শটগুলো খেলেন রশিদ, পান্ডিয়ারা।বিসিসিআই/ ভিডিও থেকে নেওয়া।

রশিদ খানের ‘নো লুক’ শট দুটো নিশ্চয়ই কাল দেখেছেন? দেখলে ভুলে যাওয়ার অবশ্য সুযোগ নেই। কারণ, যেভাবে মোস্তাফিজুর রহমানের ১৭তম ও ১৯তম ওভারের প্রথম বলে রশিদ যথাক্রমে ছক্কা ও চার মেরেছেন, তাতে বাংলাদেশের জয়ের সম্ভাবনা একটু হলেও ক্ষীণ হচ্ছিল। শেষ পর্যন্ত যদিও সেটা আর হয়নি। বাংলাদেশ জিতেছে ৮ রানে।

আফগানিস্তান হারলেও রশিদ ১১ বলে ২০ রানের ইনিংসে খেলে দেখিয়েছেন আধুনিক টি-টোয়েন্টি কীভাবে খেলা হয়। প্রায় ২০০ স্ট্রাইক রেটে রান করেছেন সে কারণে নয়, যে ‘মুড’ নিয়ে রশিদ শট দুটো খেলেছেন, ঠিক সেই কারণে। রশিদ শুধু যে এই শট খেলেন তা নয়, তাঁর আরও একটি বিখ্যাত ‘ট্রেডমার্ক’ শট আছে।

রশিদের ট্রেডমার্ক শট নিয়ে কথা বলতে গেলে অন্য অনেক ক্রিকেটারকেও টেনে আনতে হবে। ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটের দুনিয়ায় যে সবাই ছোট–বড় উদ্ভাবক। আর উদ্ভাবনীপ্রক্রিয়া যে টি-টোয়েন্টিতেই শুধু চলে তা নয়, অন্য সংস্করণেও দেখা যায়। তবে সংক্ষিপ্ততম সংস্করণে রানের চাহিদা বেশি থাকায় এই সংস্করণে এসব বেশি দেখা যায়। কথায় আছে তো—প্রয়োজনই উদ্ভাবনের জননী। টি-টোয়েন্টিতে তো রানটাই সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন!

আবার অনেক শট এই সময়েই যে প্রথমবার দেখা গেছে, তেমনটা নয়। পুরোনো শট অনেক ক্ষেত্রে নতুন করে চালু করেছেন ব্যাটসম্যানরা। এই সময়ের টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট তথা ক্রিকেটে ব্যাকরণের বাইরের জনপ্রিয় শটগুলো তাহলে দেখে নেওয়া যাক।

নো লুক শট

এই শটে ব্যাটসম্যান বল মারার সময় বলের দিকে না তাকিয়ে অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে নেন, তবু শটটি ঠিক জায়গায় লাগে। মনে হয় যেন না দেখেই মারলেন! এই শটের মাথায় এলে সবার আগে আসে ওয়েস্ট ইন্ডিজের আন্দ্রে ফ্লেচারের নাম। ওয়েস্ট ইন্ডিজের এই ওপেনার নিয়মিত এই শট খেলতেন। এখন দক্ষিণ আফ্রিকার ডেভাল্ড ব্রেভিস, পাকিস্তানের সাইম আইয়ুবও এই শট নিয়মিত খেলেন। গত আগস্টে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে অ্যারন হার্ডির বলে ব্রেভিস টানা তিন বলে তিনটি নো লুক শটে ছক্কা মারেন। রশিদ তো কালই মারলেন!

রশিদের ‘স্নেক শট’

রশিদ খান নিজেই এই শটের নাম দিয়েছেন ‘স্নেক শট’। এটি হেলিকপ্টার শটের মতো হলেও পার্থক্য হলো, তিনি বলটি এক ঝটকায় ওপরে তোলেন এবং সঙ্গে সঙ্গে ব্যাট আবার আগের অবস্থানে ফিরে আসে, ঠিক যেভাবে সাপ হঠাৎ ছোবল মেরে নিজের জায়গায় ফিরে যায়।

রশিদ খান নিজেই এই শটের নাম দিয়েছেন ‘স্নেক শট’।
বিসিসিআই

সুইচ হিট

এই শটে বোলার বল ছাড়ার ঠিক আগে ব্যাটসম্যান হঠাৎ ডানহাতি থেকে বাঁহাতি হয়ে যান, অথবা বাঁহাতি থেকে ডানহাতি। এটা রিভার্স সুইপ শটের মতো, কিন্তু এখানে ব্যাট ধরার হাতও বদলানো হয়। অনেকটা বেসবলের সুইচ হিটিংয়ের মতো। ক্রিকেটে এর শুরুটা কেভিন পিটারসেনের হাত ধরে। এখন এটা গ্লেন ম্যাক্সওয়েলের ‘গো টু শট’। এই শটে এক শ মিটার দূরত্বের ছক্কা মারার উদাহরণও আছে তাঁর। ম্যাক্সওয়েলের সতীর্থ ডেভিড ওয়ার্নারও এই শট খেলে থাকেন।

ম্যাক্সওয়েলের সুইচ হিট বোলারদের জন্য আতঙ্ক। এই শটে তিনি বেশ সফল
এএফপি
আরও পড়ুন

হেলিকপ্টার ফ্লিক

মহেন্দ্র সিং ধোনির হেলিকপ্টার শটের পরের রূপ এটি। ধোনির বিখ্যাত হেলিকপ্টার শটকে নতুন মাত্রায় নিয়ে গেছেন টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের একজন ব্রান্ড অ্যাম্বাসেডর সূর্যকুমার যাদব। সূর্য এই শট খেলেন মিডউইকেট লক্ষ্য করে, তিনি শটটি কবজির নিখুঁত ব্যবহার করে খেলেন।

সূর্যর হেলিকপ্টার ফ্লিক।
ভিডিও থেকে নেওয়া।

র‌্যাম্প শট

র‌্যাম্প শটে ব্যাটসম্যান শরীরের কাছে আসা বলকে ব্যাট নিচু করে উইকেটকিপারের মাথার ওপর দিয়ে বা পাশ দিয়ে থার্ডম্যান অঞ্চলে পাঠান। এবি ডি ভিলিয়ার্স, সূর্যকুমার যাদবরা এই শট খেলেছেন। তবে এটিকে হার্দিক পান্ডিয়া নতুন উচ্চতায় নিয়ে গেছেন। গত বছর বাংলাদেশ সিরিজ তাসকিন আহমেদের বলে তিনি খেলেছিলেন নো লুক র‌্যাম্প শট।

পান্ডিয়ার নো লুক র‌্যাম্প শট।
বিসিসিআই

প্যাডল স্কুপ

প্যাডল স্কুপে ব্যাটসম্যান স্টাম্পের দিকে সরে গিয়ে ব্যাট চামচের মতো ধরে বলকে উইকেটকিপারের মাথার ওপর দিয়ে তুলে দেন। জিম্বাবুয়ের ডগলাস মারিলিয়ার এই শট খেলতেন, আর তিলকরত্নে দিলশান একে জনপ্রিয় করেন ‘দিলস্কুপ’ নামে। এখন টি-টোয়েন্টিতে দ্রুত রান তোলার জন্য অনেকেই এই শট খেলেন। ইংলিশ কিংবদন্তি জো রুট খেলেন রিভার্স স্কুপ। তিনি টেস্টেও শটটি নিয়মিত খেলেন।

টেস্টে নিয়মিত রিভার্স স্কুপ খেলছেন রুট।
রয়টার্স
আরও পড়ুন

ওলি পোপের ‘রং ফুট সুইপ’

সুইপ শট এখন কমবেশি সবাই খেলেন। তবে ওলি পোপের মতো কেউ খেলেন না। তিনি ব্যাক ফুট দিয়ে এমনভাবে সামনে এগিয়ে আসেন যে মনে হয় সামনে হাঁটছেন, তারপর ওই অবস্থায়ই সুইপ করেন। এটি সাধারণ সুইপ হলেও ভঙ্গিটা একেবারে নতুন। রশিদ খান ও শাদাব খানের বিপক্ষে ভাইটালিটি ব্লাস্টে তিনি এই শট খেলেছেন।

দ্য ‘নাটমেগ’ শট

ফুল লেংথের বল। তবে ব্যাটসম্যানের সামনে খেলার সুযোগ নেই। যথেষ্ট জায়গা না থাকায় সামনে খেলতে গেলে হতে পারে বিপদ। তাই সোজা ব্যাট চালানোর সুযোগ না পেয়ে, পা দুটি ফাঁক করে পায়ের মাঝ দিয়ে বল পাঠান বাউন্ডারিতে, এই অদ্ভুত শটটির নামই নাটমেগ। এই শটকেই বিখ্যাত করেছেন ইংল্যান্ডের নারী ক্রিকেটার ন্যাটালি শিভার-ব্রান্ট ।

যেভাবে দ্য ‘নাটমেগ’ শট খেলা হয়।
এক্স

তবে এই শট শিভার প্রথম খেলেন, তা নয়। আগেও ছেলেদের ক্রিকেটে এমন শট দেখা গেছে। একে একসময় ‘ড্র শট’ বলা হতো। অস্ট্রেলিয়ার স্টিভেন স্মিথও এই শট আগে খেলেছেন। তবে এটি শিভারের শট নামেই বেশি পরিচিত।

আরও পড়ুন