বাংলাদেশের পক্ষে ‘বাজি’ ধরে জিতলেন এক পাকিস্তানি, হারলেন তিনজন

ম্যাচ শুরুর আগে বাজির পাল্লা শ্রীলঙ্কার দিকেই ভারি ছিল। শুধু একজন বলেছিলেন, এই ম্যাচ বাংলাদেশ জিতবে।

দুবাই আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে গত রাতে বাংলাদেশ জেতার পর সমর্থকদের উল্লাসছবি: এএফপি

বিজয়ীরা সব প্রশংসা পাবে, এটাই নিয়ম। এশিয়া কাপের সুপার ফোরে নিজেদের প্রথম ম্যাচে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৪ উইকেটের দারুণ জয়ের পর তাই বাংলাদেশের প্রশংসায় পঞ্চমুখ ক্রিকেটবোদ্ধারা। যদিও ম্যাচ শুরুর আগে অনেকেই বাংলাদেশের পক্ষে বাজি ধরতে রাজি ছিলেন না।

পাকিস্তানের স্ট্রিমিং প্লার্টফর্ম ট্যাপম্যাডের ক্রিকেট শো গেম অন হ্যায়-তে যেমন ম্যাচ শুরুর আগে বাজির পাল্লা শ্রীলঙ্কার দিকেই ভারি ছিল। সঞ্চালিকা ছাড়া এই শো-তে বিশেষজ্ঞ প্যানেলে আছেন চার সাবেক পাকিস্তানি ক্রিকেটার—মিসবাহ-উল-হক, শোয়েব মালিক, উমর গুল ও বাজিদ খান।

গেম অন হ্যায় শোতে এশিয়া কাপ নিয়ে বিশ্লেষণ করছেন তাঁরা
ছবি: প্রথম আলো গ্রাফিক্‌স

তবে তাঁদের মধ্যে একমাত্র বাজিদ খানই বলেছিলেন, এই ম্যাচটা বাংলাদেশ জিতবে। বাকি তিনজনের ফেবারিট ছিল শ্রীলঙ্কা।

ম্যাচ শেষ হওয়ার পর অবশ্য সবাই মিলেই উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেছেন লিটন দাস ও তাঁর দলের। শুধু আগ্রাসী মনোভাবই নয়, বরং সঠিক পরিকল্পনা, গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে পারফর্ম করা এবং বোলারদের বুদ্ধিদীপ্ত বোলিংয়েই বাংলাদেশ ম্যাচটা নিজেদের করে নিয়েছে বলে উঠে এসেছে তাঁদের বিশ্লেষণে।

আরও পড়ুন

ব্যাটিংয়ের শুরু থেকেই বাংলাদেশের শরীরী ভাষায় জয়ের ক্ষুধা স্পষ্ট ছিল বলে মনে হয়েছে সাবেক পাকিস্তান অধিনায়ক মিসবাহর। পাওয়ারপ্লে-তে তাদের আক্রমণাত্মক ব্যাটিং প্রতিপক্ষকে শুরুতেই ব্যাকফুটে ঠেলে দেয়। মিসবাহর কথা, ‘আমরা খুব কমই দেখেছি বাংলাদেশ প্রথম ৬ ওভারে ৫৯ রান করেছে এবং এরপরও সেই ধারাবাহিকতা ধরে রেখেছে।’

সুপার ফোরে প্রথম ম্যাচ জয়ের পর প্রশংসায় ভাসছে বাংলাদেশ দল
ছবি: এসিসি

জয়ের অন্যতম নায়ক ছিলেন ওপেনার সাইফ হাসান, যার  ৪৫ বলে ৬১ রানের ইনিংসটিকে ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেওয়া পারফরম্যান্স মনে হয়েছে সাবেক পাকিস্তানি ক্রিকেটার বাজিদ খানের কাছে। সাইফের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করে বাজিদ বলেছেন, ‘লিটন দাস আউট হওয়ার পর মনে হয়েছিল ম্যাচ হয়তো বাংলাদেশের হাত থেকে বেরিয়ে যাবে, কিন্তু সাইফ যেভাবে ইনিংস টেনে নিয়েছেন, তাতেই বড় পার্থক্য তৈরি হয়েছে।’

আরও পড়ুন

আরও একবার নিজের সামর্থ্যের প্রমাণ দিয়েছেন তাওহিদ হৃদয়ও। চাপের মুখে থেকেও তিনি যেভাবে মাথা ঠান্ডা রেখে খেলেছেন এবং মাঠের পরিস্থিতি বুঝে শট খেলেছেন, সেটা নজর কেড়েছে মিসবাহর।

তাঁর কথা, ‘ব্যাটিংয়ের সময় চাপের মধ্যেও হৃদয়ের মধ্যে একটা শান্ত ভাব ছিল। সে জানত পরিস্থিতি তার নিয়ন্ত্রণে আছে এবং বল বুঝে শট খেলেছে।’ আরেক সাবেক পাকিস্তান অধিনায়ক শোয়েব মালিকও হৃদয়ের স্মার্ট ব্যাটিংয়ের প্রশংসা করে বলেন, ‘মাঠের এক পাশ কিছুটা ছোট ছিল, শ্রীলঙ্কা সেদিকে রান আটকাতে চেয়েছে। কিন্তু হৃদয় ছোট বাউন্ডারির দিকে না খেলে মাঠের বড় অংশগুলোকে টার্গেট করেছে, যা তার বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দেয়।’

বাংলাদেশের জয়সূচক রান করার পর নাসুম আহমেদের উচ্ছ্বাস
ছবি: এএফপি

তবে ব্যাটসম্যানদের দারুণ এই পারফরম্যান্সের আগে  জয়ের ভিত্তিটা গড়ে দিয়েছিলেন বোলাররা, যার নেতৃত্বে ছিলেন অভিজ্ঞ মোস্তাফিজুর রহমান। বাংলাদেশের কাটার মাস্টারের প্রশংসা করতে গিয়ে মিসবাহ বলেছেন, ‘মোস্তাফিজ আজ অন্য রকম ছিল, কারণ সে হার্ড লেন্থে বল করেছে এবং অ্যাঙ্গেল ব্যবহার করেছে, যার ফলে তাকে খেলা খুব কঠিন ছিল।’

আরও পড়ুন

৪ ওভারে মাত্র ২০ রান দিয়ে ৩ উইকেট নিয়ে শ্রীলঙ্কার রানের গতিতে লাগাম পরিয়েছেন মোস্তাফিজ। সাবেক পাকিস্তানি পেসার উমর গুলও মোস্তাফিজের অভিজ্ঞতার প্রশংসা করে বলেন, ‘সে খুব ভালোভাবে কন্ডিশন বুঝতে পেরেছে এবং নিজের লাইন ও লেন্থ দুর্দান্তভাবে ধরে রেখেছে।’ গুলের সঙ্গে সুর মিলিয়ে শোয়েব মালিকও বলেন, ‘তার (মোস্তাফিজের) শক্তি হলো কাটার এবং স্লোয়ার, সে সব সময় এগুলোর ওপরেই আস্থা রাখে। আর এখানকার (দুবাইয়ের) কন্ডিশনও তার বোলিংয়ের জন্য খুবই উপযুক্ত।’

এভাবে খেলতে পারলে পরের ম্যাচে বাংলাদেশ ভারতকেও কঠিন পরীক্ষায় ফেলবে বলে মনে করেন বোদ্ধারা।